ঢাকা ০২:০৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কুলিয়ায় এ্যাথলেটিক্স প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর সমাপনী ও সনদ বিতরণ শ্যামনগরে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত কালিগঞ্জে রতনপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচন সম্পন্ন দুমকীতে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মবিরতি দুমকীতে মুক্তিযোদ্ধা আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির পাহাড়,অস্বচ্ছলকে দেখানো হচ্ছে স্বচ্ছল বানিয়ে রাউজানে হাকিম হত্যার প্রতিবাদে লাগাতার বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা রাণীশংকৈলে আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত আগৈলঝাড়া উপজেলায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস পালিত সোনাগাজী পৌরসভার IUGIP প্রকল্পের উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত আগৈলঝাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে তারেক রহমানের বিবিসি সাক্ষাৎকারের উন্মুক্ত গণ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত

দুমকীতে মুক্তিযোদ্ধা আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির পাহাড়,অস্বচ্ছলকে দেখানো হচ্ছে স্বচ্ছল বানিয়ে

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৭:১৫:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫ ৪৭ বার পড়া হয়েছে



‎মোঃ সজিব সরদার,স্টাফ রিপোর্টারঃ পটুয়াখালীর দুমকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। প্রকৃত অস্বচ্ছল কে স্বচ্ছল এবং স্বচ্ছলকে অস্বচ্ছল বানিয়ে আবাসন বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় এ বিষয়ে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট এডিপি/ আরডিপিতে প্রাপ্ত বরাদ্দ সাপেক্ষে  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল বাকের মো. তৌহিদ স্বাক্ষরির এক চিঠিতে পটুয়াখালী জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ১৪৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অনুকূলে আবাসন বরাদ্দের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয়।যার মধ্যে দুমকী উপজেলায় ১৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রয়েছে।উক্ত প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যার মধ্যে তালিকায় ১-৬ ক্রমিকের নামগুলো বাদ দেয়া হয়।পরবর্তীতে ২০২৪ সালে  উক্ত প্রকল্পের( ৩য় পর্যায়)২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রথম তালিকায় ১-৬ ক্রমিকের  বাদ পরা ৬ জন মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে বরাদ্দ আসলে ২০২৪ সালের ২৮ এপ্রিল দুমকী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দরপত্র আহবান করেন। উক্ত কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত হন উপজেলার মুরাদিয়া এলাকার মেসার্স তারিক ব্রাদার্স। ২০২৪ সালের ১০ জুন মেসার্স তারিক ব্রাদার্সকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১কোটি ১০ লক্ষ ৬ শত চুয়াত্তর টাকা।পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলন শুরু হয় এবং আগস্টে আওয়ামী সরকার ক্ষমতা হারালে নাটকীয়তা শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর এক চিঠিতে উক্ত প্রকল্পের বরাদ্দকৃত আবাসন প্রকৃত অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা পেয়েছেন কি না বিষয়টি যাচাইপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য সকল জেলা উপজেলায় পত্র প্রেরন করেন। উক্ত চিঠিকে  পুঞ্জীভূত করে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে হতে একটি সিন্ডিকেট নতুনভাবে ঘর বরাদ্দের জন্য পূর্বের তালিকায় থাকা কিছু কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আপত্তি দেন এবং ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে মনগড়া একটি তালিকা প্রস্তুত করে প্রতিবেদন দাখিল করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে। ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর উপজেলা হতে পাঠানো তালিকায় স্বচ্ছলকে অস্বচ্ছল এবং অস্বচ্ছলকে স্বচ্ছল বানানো হয়েছে। পাঠানো ওই তালিকায় দুই জন সরকারি কর্মকর্তা ও ২ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষর রয়েছে। যার মধ্যে ৪ জনকে স্বচ্ছল দেখানো হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার আবাসন নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আবাসন নির্মাণ না করতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন এমনটাই জানিয়েছেন ঠিকাদার মোঃ তারিকুল ইসলাম ।   মন্ত্রণালয়ে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে স্বচ্ছল দেখিয়ে প্রতিবেন দাখিল করা হলে এবছরের ২৮ জানুয়ারি  উপসচিব পলি কর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উক্ত প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বচ্ছলতার বিষয়ে বর্তমান আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রকৃত অর্থে স্বচ্ছল কিনা তা পুনঃ যাচাই পূর্বক সুনির্দিষ্ট মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দিলে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. ইজাজুল হক ২ সদস্যের কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে উপজেলা কৃষি ও মৎস্য কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ৯ সেপ্টেম্বর উক্ত দুই কর্মকর্তার  সরেজমিন প্রতিবেদনসহ ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বচ্ছলতার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

‎এ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকৃত স্বচ্ছল – অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার বাস্তবিক অবস্থা  তুলে ধরেন।

‎তালিকায় যাদেরকে অস্বচ্ছল দেখানো হয়েছে
‎তালিকায় ১ নম্বরে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমান আকনকে অস্বচ্ছল দেখানো হয়েছে। তার দুইটি বাস গাড়ি রয়েছে এবং তাঁর নামে ১ একর খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা ৩ কোটি টাকামূল্যে সেনানিবাস অধিগ্রহণ করে। তালিকায় ৩ নম্বর ক্রমিকে সুলতান হাওলাদার। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক।  তাঁর চার ছেলে দুই মেয়ে সকলেই চাকরি করেন। ৫ নম্বর ক্রমিকে খন্দকার আবদুর রহিম। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ২ ছেলে সরকারি চাকরি করেন। ৬ নম্বর ক্রমিকে রাজা অলিউল হক। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবি। ৭ নম্বর ক্রমিকে হোচেন আলী খান। তাঁর নামে ১ একর খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৮ নম্বর ক্রমিকে এস এম নূরুল ইসলাম। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবি।১০ নম্বর ক্রমিকে প্রয়াত  মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি সাবেক লেবুখালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।তাঁর এক ছেলে এক মেয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন। বড় ছেলে ও তাঁর স্ত্রী বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজের শিক্ষক।ছোট ছেলে সরকারি জনতা কলেজে চাকরি করেন। ১৫ নম্বর ক্রমিকে প্রয়াত মো. আব্দুর রাজ্জাক মৃধা। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। এক মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এবং তালিকায়  যাদেরকে স্বচ্ছল দেখানো হয়েছে। ১৩ নম্বর ক্রমিকে মো. আব্দুল লতিফ মিয়া। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। দুই ছেলে সরকারি চাকরি করেন। ব্রেইন স্ট্রোকে ভুগছেন । এক ছেলে বেকার। জরাজীর্ণ ঘর।১৬ নম্বর ক্রমিকে মো. সফিজ উদ্দিন খান। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবি। চলাচল করতে অক্ষম। এক ছেলে বেকার।জরাজীর্ণ ঘর। ১৭ নম্বর ক্রমিকে টি এম আহমেদ।দুই স্ত্রী, এক স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বসবাস করেন। এক ছেলে সরকারি কর্মচারী ।
‎১৮ নম্বর ক্রমিকে প্রয়াত ডা. রাজেশ্বর হালদার। স্ত্রী  বৃদ্ধাবস্থায় চলাচল করতে অক্ষম। এক ছেলে শৈল্য চিকিৎসক। হেলেপরা জরাজীর্ণ ঘর। রশি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। ভাঙাচোরা টিনের চালা। তালিকায় স্বচ্ছল- অস্বচ্ছল প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে গুটিকয়েক সাবেক ইউএনও শাহিন মাহমুদের সাথে সাথে বাকবিতন্ডা করেন এবং স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।

‎এ বিষয়ে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজেশ্বর হালদারের ছেলে রমেন হালদার বলেন, ভাঙাচোরা ঘরে মা ও স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টে আছি। যে কোন সময় চাপা পরে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমে  ঘরের নাম পেতে ঘরের সামনে থেকে তিন শতাংশ জমি বিক্রিকরে সত্তর হাজার টাকা দিয়েছি এক মুক্তিযোদ্ধাকে।নাম ছিলো তালিকায়। এখন শুনি আমরা স্বচ্ছল। পরে  আবারো এক মুক্তিযোদ্ধা নব্বই হাজার টাকা চেয়েছে। তাঁকে বলেছি  আমার আর টাকা দেয়ার ক্ষমতা নাই।ঘর তুলে বসবাস করার সক্ষমতাও  আমার নাই।

‎বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিজ উদ্দিন খান বলেন, প্রথমে তালিকায় নাম ছিলো। মনে করেছি পাবো। এখন শুনি আমি স্বচ্ছল হয়েগেছি। আগে ছিলাম অস্বচ্ছল এখন স্বচ্ছল? এক মুক্তিযোদ্ধা আমার কাছে দুই লাখ টাকা চেয়েছিল। আমি বলেছি বৃদ্ধাবস্থায় ঘুষ দিয়া ঘর দরকার নাই। ভাঙা ঘরে থাকবো তবুও কাউকে ঘুষ দেব না।

‎স্বচ্ছল – অস্বচ্ছল তালিকা নির্ধারণ কমিটির একজন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিমের ভাষ্য, প্রশাসন তাঁকে  কমিটিতে রাখছেন তা তিনি  জানতেননা। তাঁকে উপজেলায় ডেকে স্বাক্ষর দিতে বলছেন তিনি স্বাক্ষর দিয়েছেন। স্বচ্ছল – অস্বচ্ছল নির্ধারণের বিষয় তিনি জানেন না। তৎকালীন ইউএনও দু’ একজন মুক্তিযোদ্ধার চাপের মুখে ওই কাগজে স্বাক্ষর করছেন।

‎প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করা অপর মুক্তিযোদ্ধা আ. মানান হাওলাদার মুমূর্ষু  অবস্থায় থাকায় তাঁর সাক্ষাৎকার নেয়া যায়নি।

‎প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ওই সময়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ইউএনওর কার্যালয়ে এসে আমাদেরকে স্বাক্ষর করতে বলেন।সরেজমিন যাচাই তাঁরা করছেন।

‎উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. অলিউল ইসলাম বলেন, সরেজমিন যাচাই আমরা করিনি। মুক্তিযোদ্ধারা যাচাইয়ের কাজ করেছেন। আমরা স্বাক্ষর করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।

‎উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. ইজাজুল  হক বলেন,গত বছরের ২৫নভেম্বর তারিখের তদন্তে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখবো এবং অনিয়ম হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

দুমকীতে মুক্তিযোদ্ধা আবাসন প্রকল্পে দুর্নীতির পাহাড়,অস্বচ্ছলকে দেখানো হচ্ছে স্বচ্ছল বানিয়ে

আপডেট সময় : ০৭:১৫:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫



‎মোঃ সজিব সরদার,স্টাফ রিপোর্টারঃ পটুয়াখালীর দুমকীতে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ। প্রকৃত অস্বচ্ছল কে স্বচ্ছল এবং স্বচ্ছলকে অস্বচ্ছল বানিয়ে আবাসন বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় এ বিষয়ে ২০২২ সালের ৩১ আগস্ট এডিপি/ আরডিপিতে প্রাপ্ত বরাদ্দ সাপেক্ষে  মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবুল বাকের মো. তৌহিদ স্বাক্ষরির এক চিঠিতে পটুয়াখালী জেলার পাঁচটি উপজেলায় মোট ১৪৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অনুকূলে আবাসন বরাদ্দের প্রশাসনিক অনুমোদন প্রদান করা হয়।যার মধ্যে দুমকী উপজেলায় ১৮ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম রয়েছে।উক্ত প্রকল্পের প্রথম ধাপে ১২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়েছে যার মধ্যে তালিকায় ১-৬ ক্রমিকের নামগুলো বাদ দেয়া হয়।পরবর্তীতে ২০২৪ সালে  উক্ত প্রকল্পের( ৩য় পর্যায়)২০২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রথম তালিকায় ১-৬ ক্রমিকের  বাদ পরা ৬ জন মুক্তিযোদ্ধার অনুকূলে বরাদ্দ আসলে ২০২৪ সালের ২৮ এপ্রিল দুমকী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দরপত্র আহবান করেন। উক্ত কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিযুক্ত হন উপজেলার মুরাদিয়া এলাকার মেসার্স তারিক ব্রাদার্স। ২০২৪ সালের ১০ জুন মেসার্স তারিক ব্রাদার্সকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। যার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় ১কোটি ১০ লক্ষ ৬ শত চুয়াত্তর টাকা।পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলন শুরু হয় এবং আগস্টে আওয়ামী সরকার ক্ষমতা হারালে নাটকীয়তা শুরু হয়। ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর এক চিঠিতে উক্ত প্রকল্পের বরাদ্দকৃত আবাসন প্রকৃত অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধারা পেয়েছেন কি না বিষয়টি যাচাইপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য সকল জেলা উপজেলায় পত্র প্রেরন করেন। উক্ত চিঠিকে  পুঞ্জীভূত করে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে হতে একটি সিন্ডিকেট নতুনভাবে ঘর বরাদ্দের জন্য পূর্বের তালিকায় থাকা কিছু কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে আপত্তি দেন এবং ক্ষমতার প্রভাব খাঁটিয়ে প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে মনগড়া একটি তালিকা প্রস্তুত করে প্রতিবেদন দাখিল করলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসে। ২০২৪ সালের ২৫ নভেম্বর উপজেলা হতে পাঠানো তালিকায় স্বচ্ছলকে অস্বচ্ছল এবং অস্বচ্ছলকে স্বচ্ছল বানানো হয়েছে। পাঠানো ওই তালিকায় দুই জন সরকারি কর্মকর্তা ও ২ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বাক্ষর রয়েছে। যার মধ্যে ৪ জনকে স্বচ্ছল দেখানো হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার আবাসন নির্মাণে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধা আবাসন নির্মাণ না করতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন এমনটাই জানিয়েছেন ঠিকাদার মোঃ তারিকুল ইসলাম ।   মন্ত্রণালয়ে ৪ জন মুক্তিযোদ্ধাকে স্বচ্ছল দেখিয়ে প্রতিবেন দাখিল করা হলে এবছরের ২৮ জানুয়ারি  উপসচিব পলি কর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে উক্ত প্রকল্পের বরাদ্দকৃত ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বচ্ছলতার বিষয়ে বর্তমান আর্থ- সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় প্রকৃত অর্থে স্বচ্ছল কিনা তা পুনঃ যাচাই পূর্বক সুনির্দিষ্ট মতামত জানতে চেয়ে চিঠি দিলে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. ইজাজুল হক ২ সদস্যের কমিটিকে সরেজমিন তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে উপজেলা কৃষি ও মৎস্য কর্মকর্তাকে মনোনয়ন দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গত ৯ সেপ্টেম্বর উক্ত দুই কর্মকর্তার  সরেজমিন প্রতিবেদনসহ ৪ জন মুক্তিযোদ্ধার স্বচ্ছলতার বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করেন।

‎এ বিষয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকৃত স্বচ্ছল – অস্বচ্ছল মুক্তিযোদ্ধার বাস্তবিক অবস্থা  তুলে ধরেন।

‎তালিকায় যাদেরকে অস্বচ্ছল দেখানো হয়েছে
‎তালিকায় ১ নম্বরে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা রহমান আকনকে অস্বচ্ছল দেখানো হয়েছে। তার দুইটি বাস গাড়ি রয়েছে এবং তাঁর নামে ১ একর খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা ৩ কোটি টাকামূল্যে সেনানিবাস অধিগ্রহণ করে। তালিকায় ৩ নম্বর ক্রমিকে সুলতান হাওলাদার। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক।  তাঁর চার ছেলে দুই মেয়ে সকলেই চাকরি করেন। ৫ নম্বর ক্রমিকে খন্দকার আবদুর রহিম। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ২ ছেলে সরকারি চাকরি করেন। ৬ নম্বর ক্রমিকে রাজা অলিউল হক। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবি। ৭ নম্বর ক্রমিকে হোচেন আলী খান। তাঁর নামে ১ একর খাস জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ৮ নম্বর ক্রমিকে এস এম নূরুল ইসলাম। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকুরিজীবি।১০ নম্বর ক্রমিকে প্রয়াত  মো. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি সাবেক লেবুখালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।তাঁর এক ছেলে এক মেয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করেন। বড় ছেলে ও তাঁর স্ত্রী বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজের শিক্ষক।ছোট ছেলে সরকারি জনতা কলেজে চাকরি করেন। ১৫ নম্বর ক্রমিকে প্রয়াত মো. আব্দুর রাজ্জাক মৃধা। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। এক মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এবং তালিকায়  যাদেরকে স্বচ্ছল দেখানো হয়েছে। ১৩ নম্বর ক্রমিকে মো. আব্দুল লতিফ মিয়া। তিনি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারী। দুই ছেলে সরকারি চাকরি করেন। ব্রেইন স্ট্রোকে ভুগছেন । এক ছেলে বেকার। জরাজীর্ণ ঘর।১৬ নম্বর ক্রমিকে মো. সফিজ উদ্দিন খান। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবি। চলাচল করতে অক্ষম। এক ছেলে বেকার।জরাজীর্ণ ঘর। ১৭ নম্বর ক্রমিকে টি এম আহমেদ।দুই স্ত্রী, এক স্ত্রীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ বসবাস করেন। এক ছেলে সরকারি কর্মচারী ।
‎১৮ নম্বর ক্রমিকে প্রয়াত ডা. রাজেশ্বর হালদার। স্ত্রী  বৃদ্ধাবস্থায় চলাচল করতে অক্ষম। এক ছেলে শৈল্য চিকিৎসক। হেলেপরা জরাজীর্ণ ঘর। রশি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। ভাঙাচোরা টিনের চালা। তালিকায় স্বচ্ছল- অস্বচ্ছল প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মিয়া বলেন মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে গুটিকয়েক সাবেক ইউএনও শাহিন মাহমুদের সাথে সাথে বাকবিতন্ডা করেন এবং স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেন।

‎এ বিষয়ে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজেশ্বর হালদারের ছেলে রমেন হালদার বলেন, ভাঙাচোরা ঘরে মা ও স্ত্রীকে নিয়ে কষ্টে আছি। যে কোন সময় চাপা পরে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমে  ঘরের নাম পেতে ঘরের সামনে থেকে তিন শতাংশ জমি বিক্রিকরে সত্তর হাজার টাকা দিয়েছি এক মুক্তিযোদ্ধাকে।নাম ছিলো তালিকায়। এখন শুনি আমরা স্বচ্ছল। পরে  আবারো এক মুক্তিযোদ্ধা নব্বই হাজার টাকা চেয়েছে। তাঁকে বলেছি  আমার আর টাকা দেয়ার ক্ষমতা নাই।ঘর তুলে বসবাস করার সক্ষমতাও  আমার নাই।

‎বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিজ উদ্দিন খান বলেন, প্রথমে তালিকায় নাম ছিলো। মনে করেছি পাবো। এখন শুনি আমি স্বচ্ছল হয়েগেছি। আগে ছিলাম অস্বচ্ছল এখন স্বচ্ছল? এক মুক্তিযোদ্ধা আমার কাছে দুই লাখ টাকা চেয়েছিল। আমি বলেছি বৃদ্ধাবস্থায় ঘুষ দিয়া ঘর দরকার নাই। ভাঙা ঘরে থাকবো তবুও কাউকে ঘুষ দেব না।

‎স্বচ্ছল – অস্বচ্ছল তালিকা নির্ধারণ কমিটির একজন সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিমের ভাষ্য, প্রশাসন তাঁকে  কমিটিতে রাখছেন তা তিনি  জানতেননা। তাঁকে উপজেলায় ডেকে স্বাক্ষর দিতে বলছেন তিনি স্বাক্ষর দিয়েছেন। স্বচ্ছল – অস্বচ্ছল নির্ধারণের বিষয় তিনি জানেন না। তৎকালীন ইউএনও দু’ একজন মুক্তিযোদ্ধার চাপের মুখে ওই কাগজে স্বাক্ষর করছেন।

‎প্রতিবেদনে স্বাক্ষর করা অপর মুক্তিযোদ্ধা আ. মানান হাওলাদার মুমূর্ষু  অবস্থায় থাকায় তাঁর সাক্ষাৎকার নেয়া যায়নি।

‎প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ওই সময়ে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ইউএনওর কার্যালয়ে এসে আমাদেরকে স্বাক্ষর করতে বলেন।সরেজমিন যাচাই তাঁরা করছেন।

‎উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. অলিউল ইসলাম বলেন, সরেজমিন যাচাই আমরা করিনি। মুক্তিযোদ্ধারা যাচাইয়ের কাজ করেছেন। আমরা স্বাক্ষর করে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।

‎উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. ইজাজুল  হক বলেন,গত বছরের ২৫নভেম্বর তারিখের তদন্তে কোন অনিয়ম হয়েছে কিনা আমরা খতিয়ে দেখবো এবং অনিয়ম হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।