ঢাকা ০৪:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
আ ন ম শহীদউদ্দিন ছোটন, বিশাল নাগরিক সংবর্ধনায় সিক্ত হলেন লোহার খাঁচায় বন্দি পায়রা সেতু, নিরাপত্তার নামে সৌন্দর্যের মৃত্যু সাতক্ষীরায় রইচপুরে ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে জশনে জুলুস বর্ণাঢ্য র‍্যালি রাউজানে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেনীর তিনটি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) জামালপুরে প্রেমিকের বিয়ের খবরে তৃতীয় লিঙ্গের মুন্নির আত্মহত্যা রাউজানে আশরাফিয়া আবুশাহ মিয়া জব্বারিয়া মঈনীয়া এতিমখানা ও হেফজখানা উদ্বোধন চট্টগ্রামে বাগীশিকের মাস্টার ট্রেইনার কর্মশালা সম্পন্ন সিবিসি পরীক্ষা”করতে না চাওয়ায় রোগীর মুখে থাপ্পড় চিকিৎসকের জামালপুরে গ্রেপ্তারকৃত যুব মহিলালীগ সভাপতি কারাগারে

লোহার খাঁচায় বন্দি পায়রা সেতু, নিরাপত্তার নামে সৌন্দর্যের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১১:৩৭:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে




‎মোঃ সজিব সরদার,স্টাফ রিপোর্টার : দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন, গৌরব আর অহংকারের প্রতীক—পায়রা সেতু। নদী, আকাশ আর আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই সেতুটি ছিল এক মহৎ শিল্পকর্ম। কিন্তু আজ সেটি পরিণত হচ্ছে “লোহার খাঁচায় বন্দি এক সৌন্দর্যে।”

‎পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর চালু হওয়া চার লেনের এ সেতু দ্রুতই হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের প্রিয় গন্তব্য। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলের আড্ডা, নদীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া বাতাস, আর আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার আনন্দ—সবই মিলতো এই সেতুর ওপরে। কিন্তু হঠাৎ করেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ‘নিরাপত্তার অজুহাত’ দেখিয়ে সেতুর দুই পাশে উঁচু কংক্রিট প্রাচীরের ওপরে লোহার গ্রিল বসানো শুরু করেছে।

‎বরিশাল অংশের ৪৬৩ মিটার জুড়ে ইতোমধ্যেই বসানো হয়েছে এই গ্রিল। অথচ চালু হওয়ার পর থেকে সেতুতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি—এমন তথ্যই দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তাই সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তকে বলছেন তড়িঘড়ি ও পরিকল্পনাহীন।

‎পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিকল্প কোনো নকশা করা যেত, যা সেতুর সৌন্দর্য নষ্ট করতো না। এই গ্রিল পুরো নান্দনিকতা ধ্বংস করে দিয়েছে।

‎ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরাও জানালেন, গ্রিল বসানোর কারণে দর্শনার্থী কমে গেছে, ফলে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লেবুখালী পয়েন্টের চা-নাস্তার দোকান ও ফুচকা বিক্রেতারা বিক্রি কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার দুঃখ করে বলেন, “আগে মনে হতো আকাশের নিচে নদীর বুকে দাঁড়িয়ে আছি। এখন মনে হয় যেন কারাগারের ভেতর থেকে ছবি তুলছি।”

‎পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ স্বীকার করেছেন, কিছু তরুণ ছবি তুলতে গিয়ে মাঝপথে চলে আসে, এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তবে তিনি নিরাপত্তার পাশাপাশি সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন। অন্যদিকে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল হোসেন জানান, নিরাপত্তার কারণেই গ্রিল বসানো হচ্ছে, তবে অবশিষ্ট অংশে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।

‎স্থানীয় বাসিন্দা মো: নাঈম হোসেনের ক্ষোভ ছিল তীব্র: “এটা শুধু একটা সেতু নয়, আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন। নিরাপত্তা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সৌন্দর্যেরও মর্যাদা দিতে হবে। লোহার খাঁচা দিয়ে আমরা স্বপ্নকে বন্দি দেখতে চাই না।”

‎আজ তাই প্রশ্ন একটাই—
‎নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে কি দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ, পায়রা সেতুকে বন্দি করে দেওয়া হবে? নাকি মানুষের স্বপ্ন, আনন্দ আর সৌন্দর্যের মর্যাদাই অটুট থাকবে?


নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

লোহার খাঁচায় বন্দি পায়রা সেতু, নিরাপত্তার নামে সৌন্দর্যের মৃত্যু

আপডেট সময় : ১১:৩৭:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫




‎মোঃ সজিব সরদার,স্টাফ রিপোর্টার : দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন, গৌরব আর অহংকারের প্রতীক—পায়রা সেতু। নদী, আকাশ আর আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই সেতুটি ছিল এক মহৎ শিল্পকর্ম। কিন্তু আজ সেটি পরিণত হচ্ছে “লোহার খাঁচায় বন্দি এক সৌন্দর্যে।”

‎পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর চালু হওয়া চার লেনের এ সেতু দ্রুতই হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের প্রিয় গন্তব্য। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলের আড্ডা, নদীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া বাতাস, আর আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার আনন্দ—সবই মিলতো এই সেতুর ওপরে। কিন্তু হঠাৎ করেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ‘নিরাপত্তার অজুহাত’ দেখিয়ে সেতুর দুই পাশে উঁচু কংক্রিট প্রাচীরের ওপরে লোহার গ্রিল বসানো শুরু করেছে।

‎বরিশাল অংশের ৪৬৩ মিটার জুড়ে ইতোমধ্যেই বসানো হয়েছে এই গ্রিল। অথচ চালু হওয়ার পর থেকে সেতুতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি—এমন তথ্যই দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তাই সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তকে বলছেন তড়িঘড়ি ও পরিকল্পনাহীন।

‎পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিকল্প কোনো নকশা করা যেত, যা সেতুর সৌন্দর্য নষ্ট করতো না। এই গ্রিল পুরো নান্দনিকতা ধ্বংস করে দিয়েছে।

‎ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরাও জানালেন, গ্রিল বসানোর কারণে দর্শনার্থী কমে গেছে, ফলে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লেবুখালী পয়েন্টের চা-নাস্তার দোকান ও ফুচকা বিক্রেতারা বিক্রি কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার দুঃখ করে বলেন, “আগে মনে হতো আকাশের নিচে নদীর বুকে দাঁড়িয়ে আছি। এখন মনে হয় যেন কারাগারের ভেতর থেকে ছবি তুলছি।”

‎পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ স্বীকার করেছেন, কিছু তরুণ ছবি তুলতে গিয়ে মাঝপথে চলে আসে, এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তবে তিনি নিরাপত্তার পাশাপাশি সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন। অন্যদিকে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল হোসেন জানান, নিরাপত্তার কারণেই গ্রিল বসানো হচ্ছে, তবে অবশিষ্ট অংশে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।

‎স্থানীয় বাসিন্দা মো: নাঈম হোসেনের ক্ষোভ ছিল তীব্র: “এটা শুধু একটা সেতু নয়, আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন। নিরাপত্তা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সৌন্দর্যেরও মর্যাদা দিতে হবে। লোহার খাঁচা দিয়ে আমরা স্বপ্নকে বন্দি দেখতে চাই না।”

‎আজ তাই প্রশ্ন একটাই—
‎নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে কি দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ, পায়রা সেতুকে বন্দি করে দেওয়া হবে? নাকি মানুষের স্বপ্ন, আনন্দ আর সৌন্দর্যের মর্যাদাই অটুট থাকবে?