ঢাকা ০২:০২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
শ্যামনগর থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে ডাকাতির প্রস্তুতি মামলার অজ্ঞাতনামা ১(এক) পলাতক আসামী গ্রেফতার কালিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে কর্মচারী শূন্য, সেবায় অচলাবস্থা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন আগৈলঝাড়া সরকারি কলেজ শাখার উদ্যোগে ভর্তি সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হয়েছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা নেই…মহাসচিব মির্জা ফখরুল.. ইসলাম আলমগীর পবিপ্রবির আইন অনুষদের নবীন বরণ ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত কওমী-সুন্নীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে হঠাৎ নাটকীয় সমাপ্তি চন্দনাইশ থানার বিশেষ অভিযানে ২টি বন্দুক দেশীয় অস্ত্র সহ আসামি আটক পবিপ্রবিতে শৈবাল গবেষণা, খাবার ও প্রসাধনী শিল্পে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত শৃঙ্খলা ও দক্ষতার অঙ্গীকারে বরগুনায় আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণ সমাপনী সাতক্ষীরায় কথিত সাংবাদিক আলামিন সরদারের চাঁদাবাজিতে বিপাকে কর্মকর্তা—কর্মচারী ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদরা

রাইসকে নিয়ে যা জানা গেলো

নিজেস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৩:০৯:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪ ১৭১ বার পড়া হয়েছে

নিজেস্ব প্রতিবেদক:-
অনলাইন ডেস্ক, রয়টার্স
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ইরানের প্রেসিডেন্ট দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা বলে পরিচিত।

৬৩ বছর বয়সী রাইসি ২০২১ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশটির মোরালিটি বা নৈতিকতাবিষয়ক আইন কঠোর করার নির্দেশ দেন।

কট্টরপন্থী হওয়ার কারণে তিনি সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখেও পড়েন। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় তিনি কঠোর চাপও সৃষ্টি করেন। অনেকের মতে, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছেন।

২০১৯ সালে সর্বোচ্চ নেতা রাইসিকে বিচার বিভাগের প্রধানের শক্তিশালী পদে নিযুক্ত করেন। রাইসি বিশেষজ্ঞদের অ্যাসেম্বলির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হন। ইরানে ৮৮ সদস্যের এই বোর্ড দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে থাকে। বহু ইরানি ও মানবাধিকার কর্মী আশির দশকে রাজনৈতিক বন্দিদের গণহত্যায় রাইসির ভূমিকা নিয়ে ওঠা অভিযোগের কথা তুলেছেন।

ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ইরানের দ্বিতীয় বড় শহর মাশাদে ১৯৬০ সালে। ইরানের পবিত্রতম শিয়া দরগাটি রয়েছে এই শহরে। রাইসির বাবা ছিলেন একজন ধর্মীয় নেতা। বয়স যখন পাঁচ তখন বাবাকে হারান রাইসি।

শিয়া ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি ইসলামের নবীর বংশধরদের মত কালো পাগড়ি পরেন। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি ১৫ বছর বয়সে পবিত্র কুম শহরে এক শিয়া মাদরাসায় যোগ দেন। সেখানে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়, তিনি পশ্চিমা সমর্থিত শাহ-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেন।

অবশেষে ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেইনির নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে শাহের শাসনের পতন ঘটে। বিপ্লবের পর তিনি যোগ দেন বিচার বিভাগে এবং আয়াতুল্লা খামেনির কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে বেশ কয়েকটি শহরে কৌঁসুলির দায়িত্ব পালন করেন। আয়াতুল্লা খামেনি ১৯৮১ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট হন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে রাইসি তেহরানের ডেপুটি কৌঁসুলি নিযুক্ত হন।

যে চারজন বিচারককে নিয়ে ১৯৮৮ সালে ‘ঘাতক কমিটি’নামে পরিচিত হয়ে ওঠা গোপন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল, তিনি ছিলেন সেই চারজনের একজন। যে হাজার হাজার বন্দী তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ইতোমধ্যেই জেল খাটছিলেন, ওই ট্রাইব্যুনাল তাদের ‘পুনর্বিচার’করে।

এদের বেশিরভাগই ছিলেন বামপন্থী বিরোধী দল মুজাহিদিন-ই-খাল্কের (এমইকে) সদস্য। গোষ্ঠীটি পিপলস মুজাহিদিন অরগানাইজেশন অব ইরান বা পিএমওআই হিসাবেও পরিচিত ছিল। ঠিক কতজনকে ওই ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল সেই সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, প্রায় পাঁচ হাজার পুরুষ ও নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল এবং অজ্ঞাত গণকবরে তাদের মাটি দেওয়া হয়।

দেশটির নেতারা ওই গণহত্যার কথা অস্বীকার করেন না। তবে সেসব ঘটনার বিস্তারিত বা বৈধতার বিষয় তারা কখনও আলোচনা করেন না। ওই মৃত্যুদণ্ডে নিজের ভূমিকার কথা রাইসি বারবার অস্বীকার করেছন। তবে তিনি এই কথাও বলেছেন যে ইরানের সাবেক সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেইনির জারি করা ফতোয়ার কারণে ওই মৃত্যুদণ্ডাদেশ যুক্তিসঙ্গত ছিল।

রাইসি, বিচার বিভাগের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং তৎকালীন ডেপুটি সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লা হোসেইন আলি মন্তাযেরির মধ্যে ১৯৮৮ সালের এক বৈঠকের কথোপকথনের টেপ ফাঁস হয়। ওই টেপে মন্তাযেরিকে বলতে শোনা যায়, দণ্ডিতদের হত্যা ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধ’।

আয়াতুল্লা খোমেইনির মৃত্যুর পর তার পূর্ব-নির্ধারিত উত্তরসূরি আয়াতোল্লা খামেনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পর মন্তাযেরিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তেহরানের কৌঁসুলির দায়িত্বে বসানো হয় রাইসিকে, এরপর তিনি রাষ্ট্রীয় পরিদর্শক সংস্থার প্রধান হন, দেশটির বিচার বিভাগের প্রথম উপ-প্রধান পদে নিযুক্ত হন এবং ২০১৪ সালে ইরানের মহাকৌঁসুলি (প্রসিকিউটর জেনারেল) পদের দায়িত্ব পান।

দুই বছর পর আয়াতোল্লা খামেনি ইরানের অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পদশালী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আসতান-ই কুদস্-ই রাজাভি দেখাশোনার সব দায়িত্ব তুলে দেন রাইসির হাতে। এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মাশাদে অষ্টম শিয়া ইমাম রেজার দরগাটির রক্ষণাবেক্ষণ করে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের বহু দাতব্য এবং অন্যান্য সংস্থা পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির হাতে।
রাইসির ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেছিল। ওই নির্বাচনে আরেকজন ধর্মীয় নেতা হাসান রুহানি প্রথম দফার ভোটাভুটিতে ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান।

তবে ওই পরাজয় তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারেনি এবং ২০১৯ সালে আয়াতোল্লা খামেনি তাকে দেশটির বিচার বিভাগের ক্ষমতাশালী পদে অধিষ্ঠিত করেন। পরে তিনি অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস বা বিশেষজ্ঞমণ্ডলীর ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে থাকে ৮৮ ধর্মীয় নেতার সমন্বয়ে গঠিত এই মণ্ডলী।

বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে রাইসি কিছু সংস্কার সাধন করেন, যার ফলে দেশটি মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমেছে এবং অবৈধ মাদক সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে কম।

রাইসির ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। শুধু এটুকুই জানা যায়, তার স্ত্রী জামিলে তেহরানের শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা এবং তাদের দুটি সন্তান আছে। তার শ্বশুর আয়াতুল্লা আহমাদ আলামোলহোদা। তিনিও একজন কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা। মাশাদে জুমার নামাজ তিনি পরিচালনা করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

রাইসকে নিয়ে যা জানা গেলো

আপডেট সময় : ০৩:০৯:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪

নিজেস্ব প্রতিবেদক:-
অনলাইন ডেস্ক, রয়টার্স
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানো ইরানের প্রেসিডেন্ট দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা বলে পরিচিত।

৬৩ বছর বয়সী রাইসি ২০২১ সালে দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশটির মোরালিটি বা নৈতিকতাবিষয়ক আইন কঠোর করার নির্দেশ দেন।

কট্টরপন্থী হওয়ার কারণে তিনি সরকারবিরোধী ব্যাপক বিক্ষোভের মুখেও পড়েন। বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় তিনি কঠোর চাপও সৃষ্টি করেন। অনেকের মতে, তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উত্তরসূরি হওয়ার জন্য নিজেকে তৈরি করছেন।

২০১৯ সালে সর্বোচ্চ নেতা রাইসিকে বিচার বিভাগের প্রধানের শক্তিশালী পদে নিযুক্ত করেন। রাইসি বিশেষজ্ঞদের অ্যাসেম্বলির ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হন। ইরানে ৮৮ সদস্যের এই বোর্ড দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে থাকে। বহু ইরানি ও মানবাধিকার কর্মী আশির দশকে রাজনৈতিক বন্দিদের গণহত্যায় রাইসির ভূমিকা নিয়ে ওঠা অভিযোগের কথা তুলেছেন।

ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ইরানের দ্বিতীয় বড় শহর মাশাদে ১৯৬০ সালে। ইরানের পবিত্রতম শিয়া দরগাটি রয়েছে এই শহরে। রাইসির বাবা ছিলেন একজন ধর্মীয় নেতা। বয়স যখন পাঁচ তখন বাবাকে হারান রাইসি।

শিয়া ধর্মীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি ইসলামের নবীর বংশধরদের মত কালো পাগড়ি পরেন। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি ১৫ বছর বয়সে পবিত্র কুম শহরে এক শিয়া মাদরাসায় যোগ দেন। সেখানে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়, তিনি পশ্চিমা সমর্থিত শাহ-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে অংশ নেন।

অবশেষে ১৯৭৯ সালে আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেইনির নেতৃত্বে ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে শাহের শাসনের পতন ঘটে। বিপ্লবের পর তিনি যোগ দেন বিচার বিভাগে এবং আয়াতুল্লা খামেনির কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে বেশ কয়েকটি শহরে কৌঁসুলির দায়িত্ব পালন করেন। আয়াতুল্লা খামেনি ১৯৮১ সালে ইরানের প্রেসিডেন্ট হন। মাত্র ২৫ বছর বয়সে রাইসি তেহরানের ডেপুটি কৌঁসুলি নিযুক্ত হন।

যে চারজন বিচারককে নিয়ে ১৯৮৮ সালে ‘ঘাতক কমিটি’নামে পরিচিত হয়ে ওঠা গোপন ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছিল, তিনি ছিলেন সেই চারজনের একজন। যে হাজার হাজার বন্দী তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ইতোমধ্যেই জেল খাটছিলেন, ওই ট্রাইব্যুনাল তাদের ‘পুনর্বিচার’করে।

এদের বেশিরভাগই ছিলেন বামপন্থী বিরোধী দল মুজাহিদিন-ই-খাল্কের (এমইকে) সদস্য। গোষ্ঠীটি পিপলস মুজাহিদিন অরগানাইজেশন অব ইরান বা পিএমওআই হিসাবেও পরিচিত ছিল। ঠিক কতজনকে ওই ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল সেই সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, প্রায় পাঁচ হাজার পুরুষ ও নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল এবং অজ্ঞাত গণকবরে তাদের মাটি দেওয়া হয়।

দেশটির নেতারা ওই গণহত্যার কথা অস্বীকার করেন না। তবে সেসব ঘটনার বিস্তারিত বা বৈধতার বিষয় তারা কখনও আলোচনা করেন না। ওই মৃত্যুদণ্ডে নিজের ভূমিকার কথা রাইসি বারবার অস্বীকার করেছন। তবে তিনি এই কথাও বলেছেন যে ইরানের সাবেক সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা রুহুল্লা খোমেইনির জারি করা ফতোয়ার কারণে ওই মৃত্যুদণ্ডাদেশ যুক্তিসঙ্গত ছিল।

রাইসি, বিচার বিভাগের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং তৎকালীন ডেপুটি সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লা হোসেইন আলি মন্তাযেরির মধ্যে ১৯৮৮ সালের এক বৈঠকের কথোপকথনের টেপ ফাঁস হয়। ওই টেপে মন্তাযেরিকে বলতে শোনা যায়, দণ্ডিতদের হত্যা ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অপরাধ’।

আয়াতুল্লা খোমেইনির মৃত্যুর পর তার পূর্ব-নির্ধারিত উত্তরসূরি আয়াতোল্লা খামেনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা হওয়ার পর মন্তাযেরিকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তেহরানের কৌঁসুলির দায়িত্বে বসানো হয় রাইসিকে, এরপর তিনি রাষ্ট্রীয় পরিদর্শক সংস্থার প্রধান হন, দেশটির বিচার বিভাগের প্রথম উপ-প্রধান পদে নিযুক্ত হন এবং ২০১৪ সালে ইরানের মহাকৌঁসুলি (প্রসিকিউটর জেনারেল) পদের দায়িত্ব পান।

দুই বছর পর আয়াতোল্লা খামেনি ইরানের অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পদশালী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আসতান-ই কুদস্-ই রাজাভি দেখাশোনার সব দায়িত্ব তুলে দেন রাইসির হাতে। এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মাশাদে অষ্টম শিয়া ইমাম রেজার দরগাটির রক্ষণাবেক্ষণ করে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধরনের বহু দাতব্য এবং অন্যান্য সংস্থা পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির হাতে।
রাইসির ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেছিল। ওই নির্বাচনে আরেকজন ধর্মীয় নেতা হাসান রুহানি প্রথম দফার ভোটাভুটিতে ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান।

তবে ওই পরাজয় তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারেনি এবং ২০১৯ সালে আয়াতোল্লা খামেনি তাকে দেশটির বিচার বিভাগের ক্ষমতাশালী পদে অধিষ্ঠিত করেন। পরে তিনি অ্যাসেম্বলি অব এক্সপার্টস বা বিশেষজ্ঞমণ্ডলীর ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে থাকে ৮৮ ধর্মীয় নেতার সমন্বয়ে গঠিত এই মণ্ডলী।

বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে রাইসি কিছু সংস্কার সাধন করেন, যার ফলে দেশটি মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমেছে এবং অবৈধ মাদক সংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে কম।

রাইসির ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বেশি কিছু জানা যায় না। শুধু এটুকুই জানা যায়, তার স্ত্রী জামিলে তেহরানের শহীদ বেহেস্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা এবং তাদের দুটি সন্তান আছে। তার শ্বশুর আয়াতুল্লা আহমাদ আলামোলহোদা। তিনিও একজন কট্টরপন্থী ধর্মীয় নেতা। মাশাদে জুমার নামাজ তিনি পরিচালনা করেন।