ঢাকা ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাগেরহাটে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা হরিপুরে সরাসরি গোখরা সাপ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা দক্ষিণ রাউজানে মহানবমী পূজা উদযাপন ফেনী পৌরসভার উদ্যোগে ১৯টি পূজা মন্ডপে অনুদানের চেক বিতরণ বিজয়া দশমী অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম পশ্চিম গুজরায় জ্বালা কুমারী তরুণ সংঘে উগ্যােগে দুর্গোৎসব উদযাপন না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক গাজীপুরে হাইওয়ে রোডে দেহ ব্যবসার আড়ালে চাঁদাবাজি, এলাকাবাসীর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি ঝিনাইদহে বাসচাপায় শিশুসহ ২ জন নিহত রাণীশংকৈলে সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

মতিউরের সংস্পর্শে এসে অঢেল সম্পত্তির মালিক বান্ধবী আরজিনা খাতুন

নিজেস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:৪২:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪ ১৪৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া
আলোচিত ছাগলকাণ্ডে ওএসডি রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সাথে সম্পর্ক রেখে অঢেল সম্পদের মালিক আরেক এনবিআর কর্মকর্তা আরজিনা খাতুন। রাজধানীতে ফ্ল্যাট, গ্রামে আলিশান বাড়ি, পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে জমি, বাসায় বিলাসবহুল ইন্টেরিয়র এবং দামি সব আসবাবপত্র করেছেন। মাত্র তিন বছরে ৫০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মালিক তিনি। যার ২০০ ভরিই চোরাচালানের মাধ্যমে আনা, দুদকের কাছে এসেছে এ অভিযোগ। মতিউরের সাথে আরজিনার কিছু ফোনালাপও এসেছে গণমাধ্যমে।

এই আরজিনা খাতুন হচ্ছেন রাজস্ব বোর্ডের মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়ের দ্বিতীয় সচিব। এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার ছিলেন।

গত ১০ জুন দুদকে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন একজন। তাতে বলা হয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি, মানিলন্ডারিং, স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সাথে যোগসাজস আর দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন আরজিনা খাতুন।

এরই ভিত্তিতে যমুনা নিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, রাজধানীর মিরপুরে প্রায় ২ হাজার বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে তার। থাকেনও সেখানেই। যা কিনেছেন ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায়, কিন্তু রেজিসস্ট্রেশনসহ খরচ দেখিয়েছেন মাত্র ৬৮ লাখ।

ফ্ল্যাটটি কিনতে গিয়ে তার নেয়া ব্যাংক ঋণ স্যাংশন হয় ২০২০ সালে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা মিলে, এর ১ বছর আগেই ফ্ল্যাট কেনা আর রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। তাও ঋণের টাকার দ্বিগুণ দামে। বাসায় ব্যয়বহুল আসবাব আর অত্যাধুনিক ইন্টেরিয়র করেছেন ১ বছরের মধ্যেই।

আরজিনার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর নারোয়া ইউনিয়েনর তালুতপারা গ্রামে। কাস্টমসে চাকরির ৩ বছরের মধ্যে গ্রামের ছন আর টিনের বাড়িটিকে বদলে করেছেন আলীশান এক ভবন।

তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রামে বদলির পর ২০২২ সালেই গ্রামে তার পরিবারের সদস্যদের নামে কিনেছেন ৫টি জমি। যার বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা। সেসব জমির দলিলও পেয়েছে যমুনা নিউজ। আরও কোটি খানেক টাকার জমি বন্ধক নেন আরজিনা।

আরজিনা প্রাত্যহিক যে গহনা ব্যবহার করেন, এর বেশিরভাগই হীরার। যার মূল্যমান ১০ লাখ টাকা বলা হয়েছে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে। ২০১৮ থেকে ২৩ সালের মধ্যে ৫০০ ভরি স্বর্ণ আর ডায়মন্ড কিনেছেন নগদ টাকায়। যার ২০০ ভরি এক সিএন্ডএফ ব্যাবসায়ীর মাধ্যমে ৩ ধাপে চোরাচালানের মাধ্যমে এনেছেন বলে প্রমাণসহ অভিযোগ পড়েছে দুদকের টেবিলে।

২০২২ থেকে শেয়ার বাজারেও আছেন সরকারি এ কর্মকর্তা। ১ দিনে বিনিয়োগ করেন ১০ লাখ টাকা। লাভ করেন প্রায় দ্বিগুণ। আছে ৩ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিনিয়োগ আছে সঞ্চয়পত্রে।

মতিউর রহমানের সাথে একই ব্রোকারেজ হাউসে একইরকম বিনিয়োগ ছিল আরজিনার। অভিযোগ আছে, কারসাজি করে মতিউরই আরজিনাকে শেয়ার বাজারে মুনাফা তুলে দেন।

তাদের দুইজনের মধ্যে কী সম্পর্ক? যা হাতে আসা কয়েকটি ফোনালাপে স্পষ্ট হয়েছে। ফোনালাপে মতিউরের উদ্দেশে মারজিনাকে বলতে শোনা যায়, কালকে যাই? কী বলে বের হবো, কী বলে বের হবো কোনো ইয়া পাচ্ছি না। বাসায় আছে তো…

জবাবে মতিউর বলেন, তাহলে ১৩ তারিখে…। উত্তরে তখন আরজিনা বলেন, ১৩ তারিখ? মন খারাপ হলো? মতিউরের জবাব ছিল, না অসুবিধা নেই।

এবার আরজিনা বলেন, শুক্রবার তো, কী বলে বের হবো, কোনো ইয়া খুঁজে পাচ্ছি না, বাইরে যে যাবো। আবার যদি সন্দেহ তৈরি হয়।

যদিও মুঠোফোনে আরজিনা খাতুন যমুনা নিউজকে বলেছেন, আমি আসলে যড়যন্ত্রের শিকার। আমার এক্স হাজবেন্ড একটা মামলা করেছেন, আমি একটা করেছি। আসলে সবগুলো মিলিয়ে আমি খুব বিপর্যস্ত। আমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছি, তাই উনি ক্ষীপ্ত হয়ে এগুলো করছেন।

মূলত, আরজিনার এমন ফুলেফেঁপে ধনী হয়ে ওঠা মতিউরের ছত্রছায়ায়। ছাগলকাণ্ডের এই কর্মকর্তা যাদেরকেই ছুঁয়েছেন তাদের বেশীরভাগই সম্পদ বানিয়েছেন, বানাচ্ছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

মতিউরের সংস্পর্শে এসে অঢেল সম্পত্তির মালিক বান্ধবী আরজিনা খাতুন

আপডেট সময় : ০৬:৪২:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া
আলোচিত ছাগলকাণ্ডে ওএসডি রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমানের সাথে সম্পর্ক রেখে অঢেল সম্পদের মালিক আরেক এনবিআর কর্মকর্তা আরজিনা খাতুন। রাজধানীতে ফ্ল্যাট, গ্রামে আলিশান বাড়ি, পরিবারের সদস্যদের নামে-বেনামে জমি, বাসায় বিলাসবহুল ইন্টেরিয়র এবং দামি সব আসবাবপত্র করেছেন। মাত্র তিন বছরে ৫০০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারের মালিক তিনি। যার ২০০ ভরিই চোরাচালানের মাধ্যমে আনা, দুদকের কাছে এসেছে এ অভিযোগ। মতিউরের সাথে আরজিনার কিছু ফোনালাপও এসেছে গণমাধ্যমে।

এই আরজিনা খাতুন হচ্ছেন রাজস্ব বোর্ডের মূসক মনিটরিং, পরিসংখ্যান ও সমন্বয়ের দ্বিতীয় সচিব। এর আগে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার ছিলেন।

গত ১০ জুন দুদকে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন একজন। তাতে বলা হয়, মিথ্যা তথ্য দিয়ে পণ্য আমদানি, মানিলন্ডারিং, স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সাথে যোগসাজস আর দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন আরজিনা খাতুন।

এরই ভিত্তিতে যমুনা নিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, রাজধানীর মিরপুরে প্রায় ২ হাজার বর্গফুটের একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে তার। থাকেনও সেখানেই। যা কিনেছেন ১ কোটি ৩০ লাখ টাকায়, কিন্তু রেজিসস্ট্রেশনসহ খরচ দেখিয়েছেন মাত্র ৬৮ লাখ।

ফ্ল্যাটটি কিনতে গিয়ে তার নেয়া ব্যাংক ঋণ স্যাংশন হয় ২০২০ সালে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা মিলে, এর ১ বছর আগেই ফ্ল্যাট কেনা আর রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেছে। তাও ঋণের টাকার দ্বিগুণ দামে। বাসায় ব্যয়বহুল আসবাব আর অত্যাধুনিক ইন্টেরিয়র করেছেন ১ বছরের মধ্যেই।

আরজিনার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ীর নারোয়া ইউনিয়েনর তালুতপারা গ্রামে। কাস্টমসে চাকরির ৩ বছরের মধ্যে গ্রামের ছন আর টিনের বাড়িটিকে বদলে করেছেন আলীশান এক ভবন।

তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রামে বদলির পর ২০২২ সালেই গ্রামে তার পরিবারের সদস্যদের নামে কিনেছেন ৫টি জমি। যার বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকা। সেসব জমির দলিলও পেয়েছে যমুনা নিউজ। আরও কোটি খানেক টাকার জমি বন্ধক নেন আরজিনা।

আরজিনা প্রাত্যহিক যে গহনা ব্যবহার করেন, এর বেশিরভাগই হীরার। যার মূল্যমান ১০ লাখ টাকা বলা হয়েছে দুদকে জমা পড়া অভিযোগে। ২০১৮ থেকে ২৩ সালের মধ্যে ৫০০ ভরি স্বর্ণ আর ডায়মন্ড কিনেছেন নগদ টাকায়। যার ২০০ ভরি এক সিএন্ডএফ ব্যাবসায়ীর মাধ্যমে ৩ ধাপে চোরাচালানের মাধ্যমে এনেছেন বলে প্রমাণসহ অভিযোগ পড়েছে দুদকের টেবিলে।

২০২২ থেকে শেয়ার বাজারেও আছেন সরকারি এ কর্মকর্তা। ১ দিনে বিনিয়োগ করেন ১০ লাখ টাকা। লাভ করেন প্রায় দ্বিগুণ। আছে ৩ টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিনিয়োগ আছে সঞ্চয়পত্রে।

মতিউর রহমানের সাথে একই ব্রোকারেজ হাউসে একইরকম বিনিয়োগ ছিল আরজিনার। অভিযোগ আছে, কারসাজি করে মতিউরই আরজিনাকে শেয়ার বাজারে মুনাফা তুলে দেন।

তাদের দুইজনের মধ্যে কী সম্পর্ক? যা হাতে আসা কয়েকটি ফোনালাপে স্পষ্ট হয়েছে। ফোনালাপে মতিউরের উদ্দেশে মারজিনাকে বলতে শোনা যায়, কালকে যাই? কী বলে বের হবো, কী বলে বের হবো কোনো ইয়া পাচ্ছি না। বাসায় আছে তো…

জবাবে মতিউর বলেন, তাহলে ১৩ তারিখে…। উত্তরে তখন আরজিনা বলেন, ১৩ তারিখ? মন খারাপ হলো? মতিউরের জবাব ছিল, না অসুবিধা নেই।

এবার আরজিনা বলেন, শুক্রবার তো, কী বলে বের হবো, কোনো ইয়া খুঁজে পাচ্ছি না, বাইরে যে যাবো। আবার যদি সন্দেহ তৈরি হয়।

যদিও মুঠোফোনে আরজিনা খাতুন যমুনা নিউজকে বলেছেন, আমি আসলে যড়যন্ত্রের শিকার। আমার এক্স হাজবেন্ড একটা মামলা করেছেন, আমি একটা করেছি। আসলে সবগুলো মিলিয়ে আমি খুব বিপর্যস্ত। আমি তাকে ডিভোর্স দিয়েছি, তাই উনি ক্ষীপ্ত হয়ে এগুলো করছেন।

মূলত, আরজিনার এমন ফুলেফেঁপে ধনী হয়ে ওঠা মতিউরের ছত্রছায়ায়। ছাগলকাণ্ডের এই কর্মকর্তা যাদেরকেই ছুঁয়েছেন তাদের বেশীরভাগই সম্পদ বানিয়েছেন, বানাচ্ছেন।