ঢাকা ১২:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সুনামগঞ্জের ছাতকে কানাডা প্রবাসীর স্ত্রীর উপর সন্ত্রাসী হামলা ফটিকছড়ি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যেগে দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় ভাড়া বাড়ি থেকে নারীর মরদেহ উদ্ধার মনিরামপুরের ঢাকুরিয়া কলেজে প্রথম বর্ষের ক্লাস উদ্বোধন বাংলাদেশে আসছেন হানিয়া আমির রোহিঙ্গা সুন্দরী তৈয়বার মালয়েশিয়ায় ‘বিয়ে বাণিজ্য’ নারায়ণগঞ্জে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রী ও ছেলের মরদেহ উদ্ধার ১৭ দিন পর হাসপাতাল ছাড়লেন সাবেক ভিপি নুর কুতুবদিয়ায় জলদস্যু,মাদক ও সন্ত্রাস দমনে থানা, কোস্ট গার্ড এবং মৎস্য অফিসের যৌথ সচেতনতামূলক সভা তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরবেন এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত

ভূরুঙ্গামারীতে কান্না শুনে নবজাতক উদ্ধার

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • আপডেট সময় : ০৩:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ ৫৩ বার পড়া হয়েছে

মোঃ গালিব খান:- ভোর তখন ঠিক যেন আড়মোড়া ভাঙার মুহূর্ত। পৃথিবীটা ঢেকে আছে চাদরের মতো। সূর্য তখনও ওঠেনি, পাখিরা জাগেনি, চারদিক নিস্তব্ধতার পাতায় মোড়ানো, সবুজ-শ্যামলে ছড়ানো এক পল্লী-বালার ছোট্ট গ্রাম।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর দক্ষিণ ছাট গোপালপুর গ্রামের কোনো এক পথ ধরে হঠাৎ-ই ছিন্ন কিছু কান্না যেন ছিঁড়ে দেয় সেই নিস্তব্ধতা। প্রথমে মনে হয়েছিল, হাওয়া দিচ্ছে দোল — হয়তো পাতায় পাতায় শব্দ। কিন্তু না, কান্নার স্বর ছিল স্পষ্ট, একেবারে হৃৎপিণ্ডে গিয়ে ঠেকার মতো।

গ্রামের আব্দুল জলিল, ভোরে নামাজ পড়তে বেরিয়ে এসেছিলেন। কানে আসে ক্ষীণ এক কান্না। প্রথমে থমকে যান — খানিকটা ভয়, খানিকটা কৌতূহল। গাছপালার ফাঁক দিয়ে এগিয়ে যান আওয়াজের দিকে। আর সেখানেই — ঝোপঝাড়ে মোড়ানো এক খালের পাশ ঘেঁষে দেখা মেলে একটি নবজাতকের। যেন সদ্য পরমায়ুর প্রথম নিঃশ্বাস নিয়েই ঠেলে ফেলা হয়েছে নিষ্ঠুর জগতে।

শীতল কচুরিপানার পাশেই পড়েছিল সে। মাটির ওপর সাদা এক পাতলা কাপড়ে জড়ানো। দেহে এখনও জীবনের কম্পন আছে — একটি খুদে অস্তিত্ব, যার কান্নায় থমকে গেছে এক গ্রামের সকাল।

জলিল চাচা ছুটে নিয়ে যান নবজাতককে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল হকের কাছে। দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে। থানা পুলিশ আসে, জনতা ভিড় জমায়। শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, সদ্যোজাত — হয়তো কয়েক ঘণ্টার। আশ্চর্যভাবে বেঁচে গেছে সে, হাইপোথার্মিয়া ছিল না বললেই চলে।

ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাম্মেল হক জানান, নবজাতক উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ও শিশু অধিকার সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে শিশুটির নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করছে, এটি একটি অবাঞ্ছিত শিশুর পরিকল্পিত পরিত্যাগ — তবে কে বা কারা এমন কাজ করেছে, তা এখনও অজানা।

মানুষের মুখে মুখে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন — এ কেমন মা, যে নিজের রক্ত-মাংস ফেলে যায় ঝোপের আঁধারে? আর তার পাশেই উঁকি দেয় আরেক অনুভব — এ কেমন নিষ্ঠুর সমাজ, যেখানে কেউ হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়?

নবজাতকের জন্য এগিয়ে এসেছে কয়েকটি পরিবার — দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা। প্রশাসন জানিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ যেন গল্প নয়, বাস্তবতার এক উজ্জ্বল সত্যতা। আমাদের সমাজের অন্ধকার প্রান্তরের এক রক্তক্ষরণ। তবে তার মধ্যেও জেগে ওঠে মানবতার জাগরণ— জলিল চাচার মতো মানুষের হৃদয়ে, যারা কান্না শুনে এগিয়ে যান, পরম যত্নে বাঁচিয়ে নেন একটি অচেনা প্রাণ।

তথ্যসূত্র:
সরেজমিন তথ্য ও স্থানীয় সংবাদদাতা রতন মিয়ার প্রতিবেদন
ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের ওসি মোজাম্মেল হক
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. সুমনা আক্তারের প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

ভূরুঙ্গামারীতে কান্না শুনে নবজাতক উদ্ধার

আপডেট সময় : ০৩:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

মোঃ গালিব খান:- ভোর তখন ঠিক যেন আড়মোড়া ভাঙার মুহূর্ত। পৃথিবীটা ঢেকে আছে চাদরের মতো। সূর্য তখনও ওঠেনি, পাখিরা জাগেনি, চারদিক নিস্তব্ধতার পাতায় মোড়ানো, সবুজ-শ্যামলে ছড়ানো এক পল্লী-বালার ছোট্ট গ্রাম।

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর দক্ষিণ ছাট গোপালপুর গ্রামের কোনো এক পথ ধরে হঠাৎ-ই ছিন্ন কিছু কান্না যেন ছিঁড়ে দেয় সেই নিস্তব্ধতা। প্রথমে মনে হয়েছিল, হাওয়া দিচ্ছে দোল — হয়তো পাতায় পাতায় শব্দ। কিন্তু না, কান্নার স্বর ছিল স্পষ্ট, একেবারে হৃৎপিণ্ডে গিয়ে ঠেকার মতো।

গ্রামের আব্দুল জলিল, ভোরে নামাজ পড়তে বেরিয়ে এসেছিলেন। কানে আসে ক্ষীণ এক কান্না। প্রথমে থমকে যান — খানিকটা ভয়, খানিকটা কৌতূহল। গাছপালার ফাঁক দিয়ে এগিয়ে যান আওয়াজের দিকে। আর সেখানেই — ঝোপঝাড়ে মোড়ানো এক খালের পাশ ঘেঁষে দেখা মেলে একটি নবজাতকের। যেন সদ্য পরমায়ুর প্রথম নিঃশ্বাস নিয়েই ঠেলে ফেলা হয়েছে নিষ্ঠুর জগতে।

শীতল কচুরিপানার পাশেই পড়েছিল সে। মাটির ওপর সাদা এক পাতলা কাপড়ে জড়ানো। দেহে এখনও জীবনের কম্পন আছে — একটি খুদে অস্তিত্ব, যার কান্নায় থমকে গেছে এক গ্রামের সকাল।

জলিল চাচা ছুটে নিয়ে যান নবজাতককে স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল হকের কাছে। দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে। থানা পুলিশ আসে, জনতা ভিড় জমায়। শিশুটিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা জানান, সদ্যোজাত — হয়তো কয়েক ঘণ্টার। আশ্চর্যভাবে বেঁচে গেছে সে, হাইপোথার্মিয়া ছিল না বললেই চলে।

ভূরুঙ্গামারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোজাম্মেল হক জানান, নবজাতক উদ্ধারের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ও শিশু অধিকার সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে শিশুটির নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করছে, এটি একটি অবাঞ্ছিত শিশুর পরিকল্পিত পরিত্যাগ — তবে কে বা কারা এমন কাজ করেছে, তা এখনও অজানা।

মানুষের মুখে মুখে এখন শুধু একটাই প্রশ্ন — এ কেমন মা, যে নিজের রক্ত-মাংস ফেলে যায় ঝোপের আঁধারে? আর তার পাশেই উঁকি দেয় আরেক অনুভব — এ কেমন নিষ্ঠুর সমাজ, যেখানে কেউ হয়তো এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়?

নবজাতকের জন্য এগিয়ে এসেছে কয়েকটি পরিবার — দত্তক নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা। প্রশাসন জানিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ যেন গল্প নয়, বাস্তবতার এক উজ্জ্বল সত্যতা। আমাদের সমাজের অন্ধকার প্রান্তরের এক রক্তক্ষরণ। তবে তার মধ্যেও জেগে ওঠে মানবতার জাগরণ— জলিল চাচার মতো মানুষের হৃদয়ে, যারা কান্না শুনে এগিয়ে যান, পরম যত্নে বাঁচিয়ে নেন একটি অচেনা প্রাণ।

তথ্যসূত্র:
সরেজমিন তথ্য ও স্থানীয় সংবাদদাতা রতন মিয়ার প্রতিবেদন
ভূরুঙ্গামারী থানা পুলিশের ওসি মোজাম্মেল হক
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডা. সুমনা আক্তারের প্রাথমিক চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য