ঢাকা ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
দক্ষিণ রাউজানে মহানবমী পূজা উদযাপন ফেনী পৌরসভার উদ্যোগে ১৯টি পূজা মন্ডপে অনুদানের চেক বিতরণ বিজয়া দশমী অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম পশ্চিম গুজরায় জ্বালা কুমারী তরুণ সংঘে উগ্যােগে দুর্গোৎসব উদযাপন না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক গাজীপুরে হাইওয়ে রোডে দেহ ব্যবসার আড়ালে চাঁদাবাজি, এলাকাবাসীর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি ঝিনাইদহে বাসচাপায় শিশুসহ ২ জন নিহত রাণীশংকৈলে সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব দুমকীতে পূজা মন্ডপে এনসিপির শুভেচ্ছা বিনিময় বিদায়ের সুরে শ্যামনগরের পূজা মণ্ডপগুলো

পাঁচ প্রশ্নে ‘আটকা’ ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু

নিজেস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৪২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪ ৭৭ বার পড়া হয়েছে

মো: রাসেল হোসেন৷ ঝিনাইদহ জেলা:-
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় নতুন করে সামনে এসেছে পাঁচ প্রশ্ন। এসবের উত্তর জানতে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে খুনের এক সপ্তাহ আগে ৬ মে কেন হত্যা মিশনের প্রধান দুই সদস্য মিন্টুকে ফোন করলেন? যাদের সঙ্গে মিন্টুর এ কথোপকথন হয়েছে, তারা হলেন– মূল পরিকল্পনাকারী যুক্তরাষ্ট্রে পালানো আক্তারুজ্জামান শাহীন ও তাঁর বেয়াই চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ। দু’পক্ষের মধ্যে আলাপ হয় টাকার অঙ্ক নিয়ে। দেশে ফিরে ওই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল গিয়াস আহমেদ বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শাহীন ও শিমুলকে নির্দেশ দেন মিন্টু। অনেক দিন ধরে বাবু এলাকায় মিন্টুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। গতকাল বুধবার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার ধানমন্ডির একটি এলাকা থেকে মিন্টুকে আটক করে ডিবি। এর পর তাঁকে ডিএমপির গোয়েন্দা কার্যালয় মিন্টো রোডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে পুলিশ হেফাজতে আগে থেকেই রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বাবু। গতকাল পর্যন্ত মিন্টুকে আটকের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, বাবুর মুখোমুখি করেও মিন্টুকে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন গোয়েন্দারা।
গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সংসদ সদস্য আজীম হত্যার তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে তদবির বা কোনো চাপ নেই। সঠিক পথেই তদন্ত এগোচ্ছে। কে চাপ দেবে? তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে, সেভাবেই বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।
মিলছে না যেসব প্রশ্নের উত্তর
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দু’জন কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, আজীম হত্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুর জড়িত থাকার বিষয়টি প্রথমে সামনে আসে শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে। শিমুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিতে তাঁর নাম বলেছেন। এ ছাড়া বাবুর নামও ফাঁস করেন শিমুল। এর পর গোয়েন্দারা খুঁজতে থাকেন– কেন, কীভাবে, কী কারণে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্টুর নাম সামনে আসছে। এর উত্তর মেলাতে গিয়ে গোয়েন্দাদের তদন্তে সন্দেহভাজন কিছু বিষয় ঘুরপাক খায়। আজীম হত্যার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগে কেন বাবুর ফোন থেকে ছবি দেখে তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মিন্টু। নিজ জেলার একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করার মতো লোমহর্ষক ঘটনার ক্লু পেয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাননি তিনি। ওই সময় আজীমের পরিবারের সদস্যরা নানা জায়গায় তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেছিলেন। যখন অনেকেই জানতেন আজীম হয়তো ‘নিখোঁজ’, তখন মিন্টু নিশ্চিত হয়ে যান আজীমকে হত্যা করা হয়েছে। কলকাতা থেকে লাশ উদ্ধারের আগেই কেন হঠাৎ বাবুর তিনটি ফোনসেট গায়েব! এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। পরে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বাবু দাবি করেন, তাঁর ব্যবহৃত তিনটি ফোনসেট নিয়ে গেছেন মিন্টু। এসব নষ্ট করে ফেলা হতে পারে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই ফোনে খুনের অনেক আলামত ছিল। সবকিছু সামনে আসার শঙ্কায় তিনটি ফোনসেট সরিয়ে ফেলা হয়। এ ব্যাপারে মিন্টুকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কেন খুনের এক সপ্তাহ আগে ৬ মে সঞ্জিভা গার্ডেনস থেকে মিন্টুকে ফোন করেন শাহীন ও শিমুল। গোয়েন্দা ভাষ্য, অগ্রিম ২০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আর হত্যা মিশন সফল করতে টাকার অঙ্ক ছিল ২ কোটির বেশি। এমনকি হত্যা মিশন সফল করে ১৫ মে ঢাকায় আসেন শিমুল। এর পর টাকা পরিশোধের জন্য বাবুকে ফোন করেন। দিন-তারিখ ঠিক হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। আজীম হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় ২২ মে। এর পরই হত্যা মিশনের সদস্যরা একে একে গা-ঢাকা দেন। তবে ২০ মে দেশ ছাড়েন শাহীন। কারও কারও ভাষ্য, আজীম হত্যার তদন্তে যে প্রশ্ন সামনে আসছে, তার সদুত্তর দিতে না পারলে আজকালের মধ্যে মিন্টুকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। গোয়েন্দারা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন, রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে এ হত্যার ছকে মিন্টু ছিলেন কিনা। কারণ সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মিন্টু।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

পাঁচ প্রশ্নে ‘আটকা’ ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টু

আপডেট সময় : ০১:৪২:২১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন ২০২৪

মো: রাসেল হোসেন৷ ঝিনাইদহ জেলা:-
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় নতুন করে সামনে এসেছে পাঁচ প্রশ্ন। এসবের উত্তর জানতে ঝিনাইদহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জিভা গার্ডেন থেকে খুনের এক সপ্তাহ আগে ৬ মে কেন হত্যা মিশনের প্রধান দুই সদস্য মিন্টুকে ফোন করলেন? যাদের সঙ্গে মিন্টুর এ কথোপকথন হয়েছে, তারা হলেন– মূল পরিকল্পনাকারী যুক্তরাষ্ট্রে পালানো আক্তারুজ্জামান শাহীন ও তাঁর বেয়াই চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া ওরফে আমানুল্লাহ। দু’পক্ষের মধ্যে আলাপ হয় টাকার অঙ্ক নিয়ে। দেশে ফিরে ওই বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল গিয়াস আহমেদ বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শাহীন ও শিমুলকে নির্দেশ দেন মিন্টু। অনেক দিন ধরে বাবু এলাকায় মিন্টুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। গতকাল বুধবার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার ধানমন্ডির একটি এলাকা থেকে মিন্টুকে আটক করে ডিবি। এর পর তাঁকে ডিএমপির গোয়েন্দা কার্যালয় মিন্টো রোডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সেখানে পুলিশ হেফাজতে আগে থেকেই রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বাবু। গতকাল পর্যন্ত মিন্টুকে আটকের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়নি। তবে একটি সূত্র বলছে, বাবুর মুখোমুখি করেও মিন্টুকে কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন গোয়েন্দারা।
গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, সংসদ সদস্য আজীম হত্যার তদন্ত বাধাগ্রস্ত করতে তদবির বা কোনো চাপ নেই। সঠিক পথেই তদন্ত এগোচ্ছে। কে চাপ দেবে? তদন্তে যা বেরিয়ে আসবে, সেভাবেই বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে।
মিলছে না যেসব প্রশ্নের উত্তর
তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দু’জন কর্মকর্তা সমকালকে জানিয়েছেন, আজীম হত্যায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুর জড়িত থাকার বিষয়টি প্রথমে সামনে আসে শিমুল ভূঁইয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে। শিমুল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিতে তাঁর নাম বলেছেন। এ ছাড়া বাবুর নামও ফাঁস করেন শিমুল। এর পর গোয়েন্দারা খুঁজতে থাকেন– কেন, কীভাবে, কী কারণে এ হত্যাকাণ্ডে মিন্টুর নাম সামনে আসছে। এর উত্তর মেলাতে গিয়ে গোয়েন্দাদের তদন্তে সন্দেহভাজন কিছু বিষয় ঘুরপাক খায়। আজীম হত্যার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগে কেন বাবুর ফোন থেকে ছবি দেখে তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মিন্টু। নিজ জেলার একজন সংসদ সদস্যকে হত্যা করার মতো লোমহর্ষক ঘটনার ক্লু পেয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাননি তিনি। ওই সময় আজীমের পরিবারের সদস্যরা নানা জায়গায় তাঁকে খোঁজাখুঁজি করেছিলেন। যখন অনেকেই জানতেন আজীম হয়তো ‘নিখোঁজ’, তখন মিন্টু নিশ্চিত হয়ে যান আজীমকে হত্যা করা হয়েছে। কলকাতা থেকে লাশ উদ্ধারের আগেই কেন হঠাৎ বাবুর তিনটি ফোনসেট গায়েব! এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। পরে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে বাবু দাবি করেন, তাঁর ব্যবহৃত তিনটি ফোনসেট নিয়ে গেছেন মিন্টু। এসব নষ্ট করে ফেলা হতে পারে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ওই ফোনে খুনের অনেক আলামত ছিল। সবকিছু সামনে আসার শঙ্কায় তিনটি ফোনসেট সরিয়ে ফেলা হয়। এ ব্যাপারে মিন্টুকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কেন খুনের এক সপ্তাহ আগে ৬ মে সঞ্জিভা গার্ডেনস থেকে মিন্টুকে ফোন করেন শাহীন ও শিমুল। গোয়েন্দা ভাষ্য, অগ্রিম ২০ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আর হত্যা মিশন সফল করতে টাকার অঙ্ক ছিল ২ কোটির বেশি। এমনকি হত্যা মিশন সফল করে ১৫ মে ঢাকায় আসেন শিমুল। এর পর টাকা পরিশোধের জন্য বাবুকে ফোন করেন। দিন-তারিখ ঠিক হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করেননি তিনি। আজীম হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় ২২ মে। এর পরই হত্যা মিশনের সদস্যরা একে একে গা-ঢাকা দেন। তবে ২০ মে দেশ ছাড়েন শাহীন। কারও কারও ভাষ্য, আজীম হত্যার তদন্তে যে প্রশ্ন সামনে আসছে, তার সদুত্তর দিতে না পারলে আজকালের মধ্যে মিন্টুকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে। গোয়েন্দারা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছেন, রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতে এ হত্যার ছকে মিন্টু ছিলেন কিনা। কারণ সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন মিন্টু।