ঢাকা ০২:১৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
তুরস্কে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিএসপি চেয়ারম্যান সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ মাইজভাণ্ডারী ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের কৃষিগুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত কালিগঞ্জে প্লাস্টিক পলিথিন দূষণ প্রতিরোধে রূপান্তরের গনশুনানি অনুষ্ঠিত বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় মহানবীকে নিয়ে কটূক্তিকারি মিলন খান কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কালীগঞ্জে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নববর্ষকে বরণ রাউজানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন ঝিনাইদহে ৮ দফা দাবি আদায়ে এটিআই শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ফটিকছড়ি দাঁতমারার ইউ.পি চেয়ারম্যান আদালত হতে কারাগারে নীলফামারীতে স্ত্রীর মামলায় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা স্বামী শ্রীঘরে বরিশালে স্বামী-স্ত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার

নীলফামারীতে ধানের দাম কম, ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৭:০১:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ ৬১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিনিধি:-

কৃষি প্রধান জেলা নীলফামারী চড়া দামে সার-সেচ-শ্রম দিয়ে ফসল ফলাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও সে অনুপাতে ধানের দাম না পাওয়া তারা ব্যাপক লোকসানে পড়ছেন বলে তাদের অভিযোগ। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও ধানের দাম নিম্নমুখি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, মাঠগুলোতে এখন ধান কাটার উৎসব। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরোর সোনালি শীষ। সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে নিয়, কেউ ভ্যানে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন ধান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭০ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত মোট আবাদী জমির মধ্যে ২০ ভাগ ধান কাটা শুরু হয়েছে।

তরনীবাড়ী এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমি ধান লাগিয়েছি। ধান চাষে লাভ কম। দুই বিঘা ধান চাষে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি হবে ৩৮হাজার টাকা। ধানের দাম যদি বাড়তো তাহলে ধান চাষে পোষাতো। ধানের বাজার খারাপ। এ বাজারে ধান চাষ করে লাভ নাই। ধানের চাইতে ভুট্টায় লাভ বেশি। আগামীতে ধান নালাগে ভুট্টা চাষ করবো।

নীলফামারীর লক্ষীচাপ নিমতলী এলাকার ধান চাষি ললিত চন্দ্র রায় জানান, এবছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। জমি অনুযায়ী এক বিঘা (৩০ শতাংশে) প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়া যাবে। আবার কোনো মাঠে বিঘাপ্রতি ২২ মণ ধান পেয়েছে কৃষক। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল এবং  পোকার আক্রমণও ছিল তুলনামূলক কম। তবে  দীর্ঘ খরায় ফসল উৎপাদন বাড়তি সেচ খরচ যোগাতে হয়েছে । ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের লাভ কম হবে।

শহরের মানিকের মোড় এলাকার কৃষক রজব আলী জানান, দিন দিন বাড়তি হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। বাড়ছে সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি। সব মিলে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে চাষাবাদের উৎপাদন খরচ। ধান চাষে এত অল্প লাভে কৃষকের চাষাবাদ করা লোকসান।

মীরগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা যায় ১ সপ্তাহ আগে প্রতি মণ হাইব্রিড জাতের ধান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১১শ টাকা মণ। এবং এক সপ্তাহ পর এখন সেই ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা মণ। চাষিরা বলছেন এই দামে ধান বিক্রি করে লাভ হবে না। নিরুপায় হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

পলাশবাড়ী ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি মো কাফি মিয়া বলেন, বিঘা জমিতে সেচের পানি নিতে লাগছে তিন হাজার টাকা। এতে কৃষকেরা ধান আবাদ করে লাভবান হতে পারছে না। কারণ সার ওষুধ সব জিনিসের দাম বেশি। কিন্তু ধানের দাম কম। ধান পরিচর্যা, কাটা শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই ও পরিবহনসহ অন্য সব ধরনের খরচও বাড়তি। কয়েক দফায় সবকিছুর দাম বাড়লেও ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা।

নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক হাসান বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন হয়েছে ভালো। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ছিল কম, ফলে কীটনাশকের ব্যবহার লেগেছে অল্প। এখন পর্যন্ত সদরে ১৫ ভাগ ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে। এই মাসের মধ্যেই বাকি ধানগুলো কাটা শেষ হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এস.এম আবু বক্কর সাইফুল বলেন, সরকার ধানের যে দাম দিয়েছে ৩২ টাকা কেজি, সেই হিসেবে এক বস্তা ধানের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা। সরকারি রেটে ধান কেনা শুরু হয়নি, তাই হয়তোবা দাম কম। এ চলতি মৌসুমে জেলায় ধানের চাষ হয়েছে ৮১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর।

তিনি আরও বলেন, জেলায় কৃষি শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের ৭৮টি কম্বাইন হারভেস্টার মিশন দিয়ে ধান কাটতে কৃষকদের সহযোগিতা করছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষক সুন্দরভাবে ধান কাটতে পারছে।###

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

নীলফামারীতে ধানের দাম কম, ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত কৃষক

আপডেট সময় : ০৭:০১:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিনিধি:-

কৃষি প্রধান জেলা নীলফামারী চড়া দামে সার-সেচ-শ্রম দিয়ে ফসল ফলাতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও সে অনুপাতে ধানের দাম না পাওয়া তারা ব্যাপক লোকসানে পড়ছেন বলে তাদের অভিযোগ। বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলেও ধানের দাম নিম্নমুখি হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কৃষক।

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, মাঠগুলোতে এখন ধান কাটার উৎসব। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে বোরোর সোনালি শীষ। সোনালি ধান কাটায় ব্যস্ত কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাঁধে নিয়, কেউ ভ্যানে করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন ধান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, চলতি মৌসুমে ৮১ হাজার ৮৫৭ হেক্টর জমিতে বোরো ধান লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৭০ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত মোট আবাদী জমির মধ্যে ২০ ভাগ ধান কাটা শুরু হয়েছে।

তরনীবাড়ী এলাকার কৃষক আব্দুল জলিল হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমি ধান লাগিয়েছি। ধান চাষে লাভ কম। দুই বিঘা ধান চাষে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা বিক্রি হবে ৩৮হাজার টাকা। ধানের দাম যদি বাড়তো তাহলে ধান চাষে পোষাতো। ধানের বাজার খারাপ। এ বাজারে ধান চাষ করে লাভ নাই। ধানের চাইতে ভুট্টায় লাভ বেশি। আগামীতে ধান নালাগে ভুট্টা চাষ করবো।

নীলফামারীর লক্ষীচাপ নিমতলী এলাকার ধান চাষি ললিত চন্দ্র রায় জানান, এবছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে। জমি অনুযায়ী এক বিঘা (৩০ শতাংশে) প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়া যাবে। আবার কোনো মাঠে বিঘাপ্রতি ২২ মণ ধান পেয়েছে কৃষক। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে ছিল এবং  পোকার আক্রমণও ছিল তুলনামূলক কম। তবে  দীর্ঘ খরায় ফসল উৎপাদন বাড়তি সেচ খরচ যোগাতে হয়েছে । ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকের লাভ কম হবে।

শহরের মানিকের মোড় এলাকার কৃষক রজব আলী জানান, দিন দিন বাড়তি হচ্ছে বিদ্যুতের দাম। বাড়ছে সার, কীটনাশক এবং শ্রমিকের মজুরি। সব মিলে দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে চাষাবাদের উৎপাদন খরচ। ধান চাষে এত অল্প লাভে কৃষকের চাষাবাদ করা লোকসান।

মীরগঞ্জ হাটে গিয়ে দেখা যায় ১ সপ্তাহ আগে প্রতি মণ হাইব্রিড জাতের ধান বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১১শ টাকা মণ। এবং এক সপ্তাহ পর এখন সেই ধান বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা মণ। চাষিরা বলছেন এই দামে ধান বিক্রি করে লাভ হবে না। নিরুপায় হয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে।

পলাশবাড়ী ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি মো কাফি মিয়া বলেন, বিঘা জমিতে সেচের পানি নিতে লাগছে তিন হাজার টাকা। এতে কৃষকেরা ধান আবাদ করে লাভবান হতে পারছে না। কারণ সার ওষুধ সব জিনিসের দাম বেশি। কিন্তু ধানের দাম কম। ধান পরিচর্যা, কাটা শ্রমিকের মজুরি, মাড়াই ও পরিবহনসহ অন্য সব ধরনের খরচও বাড়তি। কয়েক দফায় সবকিছুর দাম বাড়লেও ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা।

নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক হাসান বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন হয়েছে ভালো। পোকা-মাকড়ের আক্রমণ ছিল কম, ফলে কীটনাশকের ব্যবহার লেগেছে অল্প। এখন পর্যন্ত সদরে ১৫ ভাগ ধান কৃষকের ঘরে উঠেছে। এই মাসের মধ্যেই বাকি ধানগুলো কাটা শেষ হতে পারে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এস.এম আবু বক্কর সাইফুল বলেন, সরকার ধানের যে দাম দিয়েছে ৩২ টাকা কেজি, সেই হিসেবে এক বস্তা ধানের দাম ২ হাজার ৪০০ টাকা। সরকারি রেটে ধান কেনা শুরু হয়নি, তাই হয়তোবা দাম কম। এ চলতি মৌসুমে জেলায় ধানের চাষ হয়েছে ৮১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর।

তিনি আরও বলেন, জেলায় কৃষি শ্রমিকের পাশাপাশি কৃষি বিভাগের ৭৮টি কম্বাইন হারভেস্টার মিশন দিয়ে ধান কাটতে কৃষকদের সহযোগিতা করছে। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষক সুন্দরভাবে ধান কাটতে পারছে।###