ঢাকা ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
রাউজানে আশরাফিয়া আবুশাহ মিয়া জব্বারিয়া মঈনীয়া এতিমখানা ও হেফজখানা উদ্বোধন চট্টগ্রামে বাগীশিকের মাস্টার ট্রেইনার কর্মশালা সম্পন্ন সিবিসি পরীক্ষা”করতে না চাওয়ায় রোগীর মুখে থাপ্পড় চিকিৎসকের জামালপুরে গ্রেপ্তারকৃত যুব মহিলালীগ সভাপতি কারাগারে চুয়াডাঙ্গায় অনলাইন জুয়ার মাস্টার এজেন্টসহ গ্রেফতার-০২জন শ্যামনগর উপজেলায় তারেক জিয়া পরিষদের কমিটি অনুমোদন ৩য় তম বার্ষিকী দৈনিক সাতক্ষীরা সকাল শ্যামনগর থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে চুরি মামলার গ্রেফতার ২ শ্যামনগরে নারীদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরন রাণীশংকৈলে সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রেখে শারদীয় দূর্গা পূজা পালন করা হবে সহকারী পুলিশ সুপার

বিএনপিতে বহিষ্কারের হিড়িক, ৩০০ নেতার ক্ষমা চেয়ে আবেদন

নিজেস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৭:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪ ৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:-

বিএনপিতে বহিষ্কারের হিড়িক চলছে। গত কয়েক বছরে সাত শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতারাও রয়েছেন। বেশিরভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ দলীয় শৃংখলাভঙ্গ।

বহিষ্কার হওয়া নেতাদের মধ্যে অনেকে নিজ নিজ এলাকার রাজনীতিতে অনেক প্রভাবশালী। এসব নেতারা দলে ফিরতে চান। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে অন্তত তিনশ জন আবেদন করলেও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে মাত্র ২০ জনের। বাকিদের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে অনড় হাইকমান্ড।
যে কোনো উপায়ে দলে ফিরতে চান বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া নেতারা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দলের কাছে একাধিকবার আবেদনও করেছেন। ঘুরছেন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। এদিকে দল থেকে কোনো সংকেত না মিললেও বিএনপির কর্মসূচিতে বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের অনেকেই অংশ নিচ্ছেন। অবশ্য তাদের ক্ষমা না করার কারণ হিসাবে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বেশ কয়েকজন একাধিকবার আবেদন করলেও স্থানীয় গ্রুপিং-দ্বন্দ্বের কারণে দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। আবার ঢালাওভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে দলে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়তে পারে। তবে এত সংখ্যক নেতার বহিষ্কারে তৃণমূলে সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে বলে নেতারা স্বীকার করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন কারণে দলের ত্যাগী নেতাদের বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছে দল। তবে কয়েকজনের বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা ইতিবাচক ছিলেন। তারা ভুল স্বীকার করে আবেদন করেছে। এগুলো নিয়ে কয়েকবার স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাও হয়েছে। সাংগঠনিক নেতারাও এই বিষয়ে সুপারিশ করেছেন। একদফার আন্দোলন চলাকালীন কয়েকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার কথা ছিল। কেন হচ্ছে না তা জানা নেই। তবে তিনি এ-ও বলেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে দলীয় শৃঙ্খলা ধরে রাখা যাবে না। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, বহিষ্কৃত নেতাদের আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে।

জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপির অন্তত পাঁচশ পদধারী নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া কয়েকশ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর বাইরেও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাকেও বহিষ্কার ও দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিট কমিটির বিরোধিতা, স্থানীয় বিরোধ, বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের অনেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়ে সক্রিয় হওয়া, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও স্বপদে পুনর্বহালের জন্য আবেদন করেছেন। যা কেন্দ্রীয় দপ্তরে পড়ে আছে বছরের পর বছর। বেশ কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে মহাসচিব, কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতাদের সুপারিশ থাকলেও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে স্থানীয় রাজনীতিতে শক্তি হারাচ্ছে বিএনপি-এমনটাই বলেছেন তৃণমূলের নেতারা।

এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের ১৪ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এর মধ্যে দুজন ছাড়া কেউ বিজয়ী হতে পারেননি। ফলে বাকিদের কেউ কেউ বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়েছে ২০৪ নেতাকে।
প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বহিষ্কার হন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সাবেক মেয়র ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মনিরুল হক সাক্কু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারকে আজীবন বহিষ্কার করে দলটি। ২০২১ সালে খুলনা মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে দলের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানালে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে।

তৈমূর আলম, মঞ্জু, সাক্কুসহ ডজনখানেক প্রভাবশালী নেতা দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে একাধিকবার আবেদন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন ঝুলে থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘তৃণমূল বিএনপি’তে যোগ দেন তৈমূর আলম খন্দকার। তবে সাক্কু, মঞ্জুসহ অনেকেই বিএনপির কর্মসূচিতে অনুসারীদের নিয়ে অংশ নিচ্ছেন। দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়ে ৫ বার আবেদন করেছেন মঞ্জু।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। ২০২২ সালে সিটি নির্বাচনে আরও কঠোর অবস্থান নেয় দলটি। সে সময় বহিষ্কৃত হন দুই শতাধিক নেতা। যদিও তাদের অনেকেই নিজস্ব শক্তি বলয়ের কারণে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত নেতাদের অনেকেই মামলা-হামলায় জর্জরিত। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনা হলে আন্দোলন আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করেছি, এখনো করছি। ৪৫ বছর ধরে এই দলের জন্য রক্ত, ঘাম, শ্রম দিয়েছি। বিএনপি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। রক্তে মিশে আছে বিএনপির নাম। এজন্যই আজীবন দলের হয়ে কাজ করতে চাই। আমি চাই বিএনপি আগের মতো ঘুরে দাঁড়াক। বিগত দিনের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করে জনগণের চাওয়া পূরণ করুক। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ পেলে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে চাঙা করব।’

মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রদল করে রাজনীতি শুরু করেছি। এলাকায় একাধিকবার জনপ্রতিনিধিত্ব করেছি। দলীয় নির্দেশনা না মানার কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুধু এলাকার জনগণের চাওয়ার কারণে দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করেছি। এছাড়া দলের অন্য কোনো ক্ষতি করিনি। এজন্য ক্ষমা চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছি। দলের বহিষ্কৃত নেতা হলেও আমি সব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। ২৮ অক্টোবর ঢাকার সমাবেশেও নেতাকর্মীদের নিয়ে হাজির হয়েছি। কয়েক বছর ধরে বহু দল আমাকে নিতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপির রাজনীতির বাইরে অন্যকিছু চিন্তা করিনি। আমি চাই দল আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করুক। সক্রিয় রাজনীতির মধ্য দিয়ে আগামী দিনের আন্দোলনকে জোরদার করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

বিএনপিতে বহিষ্কারের হিড়িক, ৩০০ নেতার ক্ষমা চেয়ে আবেদন

আপডেট সময় : ০৭:৩১:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:-

বিএনপিতে বহিষ্কারের হিড়িক চলছে। গত কয়েক বছরে সাত শতাধিক নেতাকে বহিষ্কার করেছে দলটি। এদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতারাও রয়েছেন। বেশিরভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ দলীয় শৃংখলাভঙ্গ।

বহিষ্কার হওয়া নেতাদের মধ্যে অনেকে নিজ নিজ এলাকার রাজনীতিতে অনেক প্রভাবশালী। এসব নেতারা দলে ফিরতে চান। ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়ে অন্তত তিনশ জন আবেদন করলেও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে মাত্র ২০ জনের। বাকিদের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্তে অনড় হাইকমান্ড।
যে কোনো উপায়ে দলে ফিরতে চান বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া নেতারা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দলের কাছে একাধিকবার আবেদনও করেছেন। ঘুরছেন বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। এদিকে দল থেকে কোনো সংকেত না মিললেও বিএনপির কর্মসূচিতে বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের অনেকেই অংশ নিচ্ছেন। অবশ্য তাদের ক্ষমা না করার কারণ হিসাবে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা জানান, বেশ কয়েকজন একাধিকবার আবেদন করলেও স্থানীয় গ্রুপিং-দ্বন্দ্বের কারণে দলে ফেরানোর সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। আবার ঢালাওভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে দলে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়তে পারে। তবে এত সংখ্যক নেতার বহিষ্কারে তৃণমূলে সাংগঠনিক শক্তি দুর্বল হচ্ছে বলে নেতারা স্বীকার করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন কারণে দলের ত্যাগী নেতাদের বহিষ্কার করতে বাধ্য হয়েছে দল। তবে কয়েকজনের বিষয়ে নীতিনির্ধারকরা ইতিবাচক ছিলেন। তারা ভুল স্বীকার করে আবেদন করেছে। এগুলো নিয়ে কয়েকবার স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাও হয়েছে। সাংগঠনিক নেতারাও এই বিষয়ে সুপারিশ করেছেন। একদফার আন্দোলন চলাকালীন কয়েকজনের আবেদনের প্রেক্ষিতে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার কথা ছিল। কেন হচ্ছে না তা জানা নেই। তবে তিনি এ-ও বলেন, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলে দলীয় শৃঙ্খলা ধরে রাখা যাবে না। অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, বহিষ্কৃত নেতাদের আবেদন বিবেচনাধীন রয়েছে।

জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপির অন্তত পাঁচশ পদধারী নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এর মধ্যে গাজীপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে অংশ নেওয়া কয়েকশ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এর বাইরেও শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কেন্দ্রীয় বেশ কয়েকজন নেতাকেও বহিষ্কার ও দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এছাড়া বিভিন্ন ইউনিট কমিটির বিরোধিতা, স্থানীয় বিরোধ, বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত ও অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের অনেকেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়ে সক্রিয় হওয়া, বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও স্বপদে পুনর্বহালের জন্য আবেদন করেছেন। যা কেন্দ্রীয় দপ্তরে পড়ে আছে বছরের পর বছর। বেশ কয়েকজনের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে মহাসচিব, কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতাদের সুপারিশ থাকলেও কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে স্থানীয় রাজনীতিতে শক্তি হারাচ্ছে বিএনপি-এমনটাই বলেছেন তৃণমূলের নেতারা।

এদিকে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের ১৪ জনকে বহিষ্কার করে বিএনপি। এর মধ্যে দুজন ছাড়া কেউ বিজয়ী হতে পারেননি। ফলে বাকিদের কেউ কেউ বিএনপিতে ফেরার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এছাড়া ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত বহিষ্কার করা হয়েছে ২০৪ নেতাকে।
প্রভাবশালী নেতাদের মধ্যে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে বহিষ্কার হন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তৈমূর আলম খন্দকার। কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সাবেক মেয়র ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য মনিরুল হক সাক্কু, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সারকে আজীবন বহিষ্কার করে দলটি। ২০২১ সালে খুলনা মহানগর কমিটি গঠন নিয়ে দলের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানালে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে।

তৈমূর আলম, মঞ্জু, সাক্কুসহ ডজনখানেক প্রভাবশালী নেতা দলের কাছে ক্ষমা চেয়ে একাধিকবার আবেদন করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের আবেদন ঝুলে থাকায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘তৃণমূল বিএনপি’তে যোগ দেন তৈমূর আলম খন্দকার। তবে সাক্কু, মঞ্জুসহ অনেকেই বিএনপির কর্মসূচিতে অনুসারীদের নিয়ে অংশ নিচ্ছেন। দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে ক্ষমা চেয়ে ৫ বার আবেদন করেছেন মঞ্জু।

২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। ২০২২ সালে সিটি নির্বাচনে আরও কঠোর অবস্থান নেয় দলটি। সে সময় বহিষ্কৃত হন দুই শতাধিক নেতা। যদিও তাদের অনেকেই নিজস্ব শক্তি বলয়ের কারণে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে বহিষ্কৃত নেতাদের অনেকেই মামলা-হামলায় জর্জরিত। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনা হলে আন্দোলন আরও গতিশীল হবে বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

নজরুল ইসলাম মঞ্জু যুগান্তরকে বলেন, ‘আমি বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের আদর্শের রাজনীতি করেছি, এখনো করছি। ৪৫ বছর ধরে এই দলের জন্য রক্ত, ঘাম, শ্রম দিয়েছি। বিএনপি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার সুযোগ নেই। রক্তে মিশে আছে বিএনপির নাম। এজন্যই আজীবন দলের হয়ে কাজ করতে চাই। আমি চাই বিএনপি আগের মতো ঘুরে দাঁড়াক। বিগত দিনের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করে জনগণের চাওয়া পূরণ করুক। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশ পেলে আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনকে চাঙা করব।’

মনিরুল হক সাক্কু বলেন, ‘ছাত্রজীবন থেকে ছাত্রদল করে রাজনীতি শুরু করেছি। এলাকায় একাধিকবার জনপ্রতিনিধিত্ব করেছি। দলীয় নির্দেশনা না মানার কারণে আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শুধু এলাকার জনগণের চাওয়ার কারণে দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করেছি। এছাড়া দলের অন্য কোনো ক্ষতি করিনি। এজন্য ক্ষমা চেয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেছি। দলের বহিষ্কৃত নেতা হলেও আমি সব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছি। ২৮ অক্টোবর ঢাকার সমাবেশেও নেতাকর্মীদের নিয়ে হাজির হয়েছি। কয়েক বছর ধরে বহু দল আমাকে নিতে চেয়েছে। কিন্তু বিএনপির রাজনীতির বাইরে অন্যকিছু চিন্তা করিনি। আমি চাই দল আমার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করুক। সক্রিয় রাজনীতির মধ্য দিয়ে আগামী দিনের আন্দোলনকে জোরদার করব।