দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের শপথ
- আপডেট সময় : ০৫:৩৪:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ৬ বার পড়া হয়েছে

তৌফিকুর রহমাম তাহের সুনামগঞ্জ বিশেষ প্রতিনিধি:
“দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা। গড়বে আগামীর শুদ্ধতা” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সুনামগঞ্জে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস-২০২৫ উদযাপিত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক), সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এবং জেলা প্রশাসন, সুনামগঞ্জ যৌথভাবে দিনব্যাপী এই কর্মসূচির আয়োজন করে।
দিবসটি উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর (বুধবার) সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসন প্রাঙ্গণের জুলাই চত্ত্বরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বর্ণাঢ্য র্যালী আয়োজনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সমর কুমার পাল। এরপর সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, দুপ্রক ও সনাক সদস্য, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে মানববন্ধন, দুর্নীতিবিরোধী গণস্বাক্ষর এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সমর কুমার পাল বলেন, “আগামীর বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে আজকের তরুণ প্রজন্ম। তাই তাদের মধ্যে দুর্নীতিবিরোধী মনোভাব সৃষ্টিসহ সততা ও শুদ্ধাচারের চর্চার প্রসারে আন্তর্জাতিক, রাষ্ট্রীয় ও নাগরিকসহ সকল অংশীজনদের দায় রয়েছে।”
তিনি তরুণ সমাজের মুক্ত আলোচনা ও উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগানোর সুযোগ নিশ্চিত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি, সেবাখাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে নাগরিকদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যেখানেই অতিরিক্ত বা অনৈতিক অর্থ দাবি করবে, সেখানেই নাগরিকদের তা চ্যালেঞ্জ করতে হবে।” সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নীতিবহির্ভূত যেকোনো নির্দেশের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এবং স্ব-স্ব অবস্থানে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
দিবসটি উপলক্ষে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), সুনামগঞ্জ কর্তৃক দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের বিবেচনার জন্য ১১ দফা সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সুশাসন ও দুর্নীতি প্রতিরোধসহ সকল সংস্কার কার্যক্রমে তরুণ সমাজের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। দুদকের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিতের স্বার্থে দুদক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের প্রতিফলন ঘটিয়ে অধ্যাদেশটি ঢেলে সাজানো। প্রাথমিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমে দুর্নীতিবিরোধী মূল্যবোধ, সুশাসন এবং নাগরিক অধিকারসংক্রান্ত বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা। রাজনৈতিক দলের তহবিল ও নির্বাচনী অর্থায়নে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে আয়ের সকল উৎসের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা। সরকারি কার্যে ব্যক্তি স্বার্থ ও দুর্নীতি প্রতিরোধে অবিলম্বে “স্বার্থের সংঘাত আইন” প্রণয়ন করা। সরকারি ও বেসরকারি খাতে সকল চাকুরিতে নিয়োগ দুর্নীতি ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করে সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক ও স্বচ্ছ নিয়োগ নিশ্চিত করা। কর ফাঁকি ও অর্থপাচার রোধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী “কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ড (সিআরএস)” অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা।
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সহ-সভাপতি ও সচেতন নাগরিক কমিটির সদস্য অ্যাড. খলিল রহমান’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সৈয়দ মহিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল মোমেন, সনাক, সুনামগঞ্জ’র সভাপতি কানিজ সুলতানা, দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দীন এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ প্রমুখ। বক্তারা দেশের টেকসই উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতির মূলোৎপাটনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।



















