ঢাকা ০৫:০৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
সরকারি অর্থের অপচয়ের আরেক নজির-দুমকিতে সংযোগ সড়ক ছাড়া সেতু সোনাগাজীর শাহজাহান সাজু কে ঢাকায় অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ ‎খেলাধুলায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গর্বিত- পবিপ্রবি উপাচার্য ‎ চুয়াডাঙ্গায় মাদকসহ যুবক গ্রেফতার, ১৫ দিনের কারাদণ্ড কুতুবদিয়া থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে শ্রমিকলীগ নেতা গ্রেফতার কালিগঞ্জে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় প্রাথমিকের ২ শিক্ষক বিভাগীয় জবাবদিহির মুখে বহমান বাংলা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা বরেণ্য শিক্ষাবিদ মো. জিয়াউর রহমান’র ওফাতে গভীর শোক প্রকাশ সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর) আসনে এবি পার্টির আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু সাতক্ষীরা জেলা ব্যাপি ঔষধের দোকান বন্ধ রেখে ধর্মঘট সফল করার লক্ষ্যে প্রস্তুতি সভা শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে সাংবাদিকদের মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

মায়ের অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়া দুই ভাইবোনের সংগ্রামের গল্প

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৭৪ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদন,সজীব সরদার,স্টাফ রিপোর্টার:সময়টা ছিল ২০১৬ সালের ৮ই এপ্রিল। চারদিকে বসন্তের মিষ্টি হাওয়া, মাঠে ফুলের গন্ধ আর পাখির ডাক। কিন্তু পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার এক ছোট্ট গ্রামের ছোট্ট পরিবারে যেন হঠাৎ নেমে আসে কালো ঝড়। হাসি-আনন্দে ভরা একটি পরিবার মুহূর্তেই নিঃশব্দ হয়ে যায়—কারণ সেদিনই না ফেরার দেশে চলে যান পরিবারের প্রাণ, দুই ভাইবোনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় তাদের মা।

‎তখন বড় ভাইয়ের বয়স মাত্র ১৬—সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছে। ছোট বোনটি তখনও শিশুসুলভ নিষ্পাপ, বয়স মাত্র ১২ বছর—সপ্তম শ্রেণির মেয়েটির জীবন তখনো ছিল রঙিন বই আর মায়ের আঁচলের ছায়ায় ভরা।


‎ছোটবেলার সেই সুখের দিনগুলো।

‎তাদের শৈশব ছিল স্বপ্নময়। সকালের কাকডাকা ভোরে মায়ের ডাক, “উঠো, রোদ হচ্ছে, স্কুলে দেরি হবে,”—এই ডাকেই শুরু হতো দিন। মা হাতে গরম ভাত মেখে খাইয়ে দিতেন, ছোট বোন স্কুলের পথে ভাইয়ের হাত ধরে মায়ের হাসির দিকে ফিরে তাকাতো।

‎বিকেলবেলায় খেলার মাঠে দৌড়ঝাঁপ শেষে বাড়ি ফেরার পর মায়ের স্নেহমাখা হাতের স্পর্শে মুছে যেত সব ক্লান্তি। রাতের খাওয়া শেষে মা গল্প শোনাতেন—রাজপুত্র আর পরীর কাহিনি, যা শুনে চোখ জুড়ে আসত ঘুম। কিন্তু সেই সবকিছুই যেন মুহূর্তে শেষ হয়ে যায় এক কালো রাতের অন্ধকারে।


‎শূন্যতার ভয়ংকর অনুভূতি।

‎মায়ের মৃত্যু চোখের সামনে দেখার পরে বাড়ির প্রতিটি কোণ নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ছোট্ট বোনটি ভেবেছিল, মা হয়তো একটু পরেই ফিরে আসবেন, আগের মতো কোলে তুলে নেবেন। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারে—মায়ের সেই স্নেহমাখা আঁচল আর কোনোদিন তার কপালে জড়াবে না।

‎বড় ভাই তখন বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন শূন্য আকাশের দিকে। এক অদ্ভুত অসহায়তা গ্রাস করেছিল তাকে। সেদিন থেকে কিশোর ভাইটি হয়ে ওঠে পরিবারের মাথা—এক অনিচ্ছাকৃত দায়িত্ব এসে ভর করে তার কাঁধে।


‎অল্প বয়সে দায়িত্বের ভার।

‎নিজের স্বপ্ন ভুলে গিয়ে পরিবারের জন্য সংগ্রাম শুরু করে বড় ভাই। একদিকে পড়াশোনা, অন্যদিকে সংসারের দায়িত্ব—সব মিলিয়ে যেন এক কঠিন লড়াই। ভোরবেলা দোকানে কাজ করে কিছু অতিরিক্ত আয় করে , তারপর ক্লান্ত শরীরে রাতের বেলা বই হাতে নিয়ে পড়াশোনা—এভাবেই কেটে যায় দিনগুলো।

‎ছোট বোনটিও বুঝে যায় জীবনের কঠিন বাস্তবতা। খেলাধুলার বদলে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ভাইকে সাহায্য করে, দাদির সেবা করে, ঘরের ছোটখাটো কাজ গুছিয়ে দেয়। মায়ের অনুপস্থিতি তাকে অল্প বয়সেই পরিণত করে তোলে বড়দের মতো চিন্তাশীল এক মেয়েতে।


‎মায়ের স্মৃতি, অদৃশ্য সঙ্গী।

‎আজও তারা ভুলতে পারে না মায়ের গন্ধমাখা সেই আঁচল, ভুলতে পারে না উৎসবের সেই আনন্দময় দিনগুলো। ঈদ এলে ছোট বোনের মনে পড়ে যায়—মা হাত ধরে নিয়ে যেতেন নতুন জামা গায়ে পড়িয়ে দিতে । বানিয়ে দিতেন প্রিয় সেমাই,পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে দিতেন আশীর্বাদ।

‎প্রতিটি সাফল্যের মুহূর্তে, প্রতিটি কষ্টের দিনে, মায়ের অভাব যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। তবু তারা জানে, মা হয়তো স্বর্গ থেকে দেখছেন—দুই সন্তানের সংগ্রামী পথচলা।


‎সংগ্রামের শক্তি।

‎আজ সেই ভাইবোন বড় হয়েছে। জীবনের কষ্ট তাদের শিখিয়েছে দায়িত্ব, ধৈর্য আর স্বপ্ন দেখতে শেখার শক্তি। বড় ভাই পরিবারকে বাঁচাতে রাতদিন পরিশ্রম করছে, আর ছোট বোনও নিজের পড়াশোনায় মনোযোগী, মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছে নিঃশব্দে।

‎তাদের গল্প শুধু দুজন মানুষের নয়—এটি হাজারো এমন সন্তানের প্রতিচ্ছবি, যারা মাকে হারিয়েও ভেঙে পড়েনি; বরং মায়ের আশীর্বাদকে শক্তি বানিয়ে লড়াই করছে বাঁচার জন্য, এগিয়ে যাওয়ার জন্য।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

মায়ের অকাল মৃত্যুতে ভেঙে পড়া দুই ভাইবোনের সংগ্রামের গল্প

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৫০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

প্রতিবেদন,সজীব সরদার,স্টাফ রিপোর্টার:সময়টা ছিল ২০১৬ সালের ৮ই এপ্রিল। চারদিকে বসন্তের মিষ্টি হাওয়া, মাঠে ফুলের গন্ধ আর পাখির ডাক। কিন্তু পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার এক ছোট্ট গ্রামের ছোট্ট পরিবারে যেন হঠাৎ নেমে আসে কালো ঝড়। হাসি-আনন্দে ভরা একটি পরিবার মুহূর্তেই নিঃশব্দ হয়ে যায়—কারণ সেদিনই না ফেরার দেশে চলে যান পরিবারের প্রাণ, দুই ভাইবোনের সবচেয়ে বড় আশ্রয় তাদের মা।

‎তখন বড় ভাইয়ের বয়স মাত্র ১৬—সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখছে। ছোট বোনটি তখনও শিশুসুলভ নিষ্পাপ, বয়স মাত্র ১২ বছর—সপ্তম শ্রেণির মেয়েটির জীবন তখনো ছিল রঙিন বই আর মায়ের আঁচলের ছায়ায় ভরা।


‎ছোটবেলার সেই সুখের দিনগুলো।

‎তাদের শৈশব ছিল স্বপ্নময়। সকালের কাকডাকা ভোরে মায়ের ডাক, “উঠো, রোদ হচ্ছে, স্কুলে দেরি হবে,”—এই ডাকেই শুরু হতো দিন। মা হাতে গরম ভাত মেখে খাইয়ে দিতেন, ছোট বোন স্কুলের পথে ভাইয়ের হাত ধরে মায়ের হাসির দিকে ফিরে তাকাতো।

‎বিকেলবেলায় খেলার মাঠে দৌড়ঝাঁপ শেষে বাড়ি ফেরার পর মায়ের স্নেহমাখা হাতের স্পর্শে মুছে যেত সব ক্লান্তি। রাতের খাওয়া শেষে মা গল্প শোনাতেন—রাজপুত্র আর পরীর কাহিনি, যা শুনে চোখ জুড়ে আসত ঘুম। কিন্তু সেই সবকিছুই যেন মুহূর্তে শেষ হয়ে যায় এক কালো রাতের অন্ধকারে।


‎শূন্যতার ভয়ংকর অনুভূতি।

‎মায়ের মৃত্যু চোখের সামনে দেখার পরে বাড়ির প্রতিটি কোণ নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ছোট্ট বোনটি ভেবেছিল, মা হয়তো একটু পরেই ফিরে আসবেন, আগের মতো কোলে তুলে নেবেন। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারে—মায়ের সেই স্নেহমাখা আঁচল আর কোনোদিন তার কপালে জড়াবে না।

‎বড় ভাই তখন বোবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন শূন্য আকাশের দিকে। এক অদ্ভুত অসহায়তা গ্রাস করেছিল তাকে। সেদিন থেকে কিশোর ভাইটি হয়ে ওঠে পরিবারের মাথা—এক অনিচ্ছাকৃত দায়িত্ব এসে ভর করে তার কাঁধে।


‎অল্প বয়সে দায়িত্বের ভার।

‎নিজের স্বপ্ন ভুলে গিয়ে পরিবারের জন্য সংগ্রাম শুরু করে বড় ভাই। একদিকে পড়াশোনা, অন্যদিকে সংসারের দায়িত্ব—সব মিলিয়ে যেন এক কঠিন লড়াই। ভোরবেলা দোকানে কাজ করে কিছু অতিরিক্ত আয় করে , তারপর ক্লান্ত শরীরে রাতের বেলা বই হাতে নিয়ে পড়াশোনা—এভাবেই কেটে যায় দিনগুলো।

‎ছোট বোনটিও বুঝে যায় জীবনের কঠিন বাস্তবতা। খেলাধুলার বদলে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে ভাইকে সাহায্য করে, দাদির সেবা করে, ঘরের ছোটখাটো কাজ গুছিয়ে দেয়। মায়ের অনুপস্থিতি তাকে অল্প বয়সেই পরিণত করে তোলে বড়দের মতো চিন্তাশীল এক মেয়েতে।


‎মায়ের স্মৃতি, অদৃশ্য সঙ্গী।

‎আজও তারা ভুলতে পারে না মায়ের গন্ধমাখা সেই আঁচল, ভুলতে পারে না উৎসবের সেই আনন্দময় দিনগুলো। ঈদ এলে ছোট বোনের মনে পড়ে যায়—মা হাত ধরে নিয়ে যেতেন নতুন জামা গায়ে পড়িয়ে দিতে । বানিয়ে দিতেন প্রিয় সেমাই,পাশে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে দিতেন আশীর্বাদ।

‎প্রতিটি সাফল্যের মুহূর্তে, প্রতিটি কষ্টের দিনে, মায়ের অভাব যেন আরও তীব্র হয়ে ওঠে। তবু তারা জানে, মা হয়তো স্বর্গ থেকে দেখছেন—দুই সন্তানের সংগ্রামী পথচলা।


‎সংগ্রামের শক্তি।

‎আজ সেই ভাইবোন বড় হয়েছে। জীবনের কষ্ট তাদের শিখিয়েছে দায়িত্ব, ধৈর্য আর স্বপ্ন দেখতে শেখার শক্তি। বড় ভাই পরিবারকে বাঁচাতে রাতদিন পরিশ্রম করছে, আর ছোট বোনও নিজের পড়াশোনায় মনোযোগী, মায়ের অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছে নিঃশব্দে।

‎তাদের গল্প শুধু দুজন মানুষের নয়—এটি হাজারো এমন সন্তানের প্রতিচ্ছবি, যারা মাকে হারিয়েও ভেঙে পড়েনি; বরং মায়ের আশীর্বাদকে শক্তি বানিয়ে লড়াই করছে বাঁচার জন্য, এগিয়ে যাওয়ার জন্য।