৭ বছর পর মিথ্যা মামলার অবসান, মনিরামপুরে অশ্রুসিক্ত মুক্তির মুহূর্ত

- আপডেট সময় : ০৪:১৪:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫ ৫৩ বার পড়া হয়েছে

ক্রাইম রিপোর্টার,মনিরামপুর:যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলায় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গড়া হয় একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা। এই মামলার মাধ্যমে শুধু বিএনপি-জামায়াত নয়, বরং অনেক সাধারণ নিরীহ মানুষকেও ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগের কিছু অসাধু নেতা-কর্মী রাতের আঁধারে অথবা দিনে বাজারে ঘোরাঘুরি করা মানুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে থানায় ফোন করে পুলিশ ডেকে ধরিয়ে দিতেন। পরে সেই আটককৃতদের পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পুলিশ ও রাজনৈতিক চক্র মিলে ভাগাভাগি করে নিত। যারা টাকা দিতে পারেননি, তাদের বছরের পর বছর নিরুদ্দেশ জীবন কাটাতে বাধ্য করা হতো। কেউ কেউ রাত কাটাতেন বিল, ধানক্ষেত, গভীর জঙ্গল কিংবা কবরস্থানে।
যার মামলা নম্বর, STC337/ এই মামলায় মোট ৬৮ জনের নামে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়। সাক্ষী হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিছু নির্লজ্জ মিথ্যাবাদী:
ইদ্রিস আলী (পিতা: শমসের আলী)
ধনঞ্জয় (পিতা: অজ্ঞাত)
নজরুল ইসলাম (পিতা: অজ্ঞাত)
মুরাদ হোসেন (পিতা: শুকুর মোড়ল)
যারা সকলে মনিরামপুর উপজেলার চাঁন্দুয়া, সমসকাটি, শ্রীপুর ও ভোমরদাহ এলাকার বাসিন্দা।
এই মামলার অন্তর্ভুক্ত ছিলেন জামায়াতের তিন কর্মী। তাঁদের মধ্যে দুজন এখনও বেঁচে থাকলেও, একজনকে পুলিশ কোরাসে পিটিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। নিহত সেই জামায়াত কর্মীর রক্তের দাগ আজও মুছে যায়নি মানুষের মনে। অন্য দুজন আজও সেই বিভীষিকার স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন আতঙ্ক আর কান্না নিয়ে।
আজ ৮ মে, ২০২৫—বৃহস্পতিবার, যখন এই মামলাটি অবশেষে খারিজ হয়, তখন সেই নির্যাতিতদের একজন মুরুব্বি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। দীর্ঘ ৭ বছর সন্তান ও পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যে জীবনের মূল্যবান সময় তারা হারিয়েছেন, তা ফিরিয়ে পাওয়ার কোনো পথ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগীর জবানিতে ২০১৩,ও ২০১৪ সালের বাস্তবচিত্র:
এক রাতে আমার আম্মু একটা দেশি মোরগ জবাই করে রান্না করেছিলেন। আমি মাত্র তিন-চার গাল খেয়েছি, এমন সময় ফোন আসে—‘তুই কোথায়?’ বললাম, বাড়িতে। তখনই জানানো হয়, ‘এই মুহূর্তে বাড়ি ছাড়, পুলিশ আসতেছে।’ আমার মা ভয়ে আমাকে আর খেতে দিলেন না, কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন। আমি চোখের জল ফেলে রাতের অন্ধকারে চলে যাই—না খেয়েই।”
এই ঘটনার মতো এমন হাজারো বেদনার গল্প লুকিয়ে আছে মনিরামপুরের প্রতিটি কোণে। সন্ধ্যা নামলেই বিএনপি-জামায়াত বা সাধারণ মানুষ ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতেন মাঠে, বাগানে, ঘেরে। কেউ জঙ্গলে ঘুমাতেন, কেউ ধানক্ষেতে। শীতের রাতে শিয়াল এসে কম্বল টানত, আবার কেউ কেউ বিষধর সাপের মুখোমুখি হতেন।
একজন মুরুব্বি বলেন—“১৯৭১ সালে যুদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু তখনও আমরা আমাদের বাড়ি ছেড়ে কোথাও গিয়ে ঘুমায় নাই। কিন্তু এই সরকারের সময় ঘুমাইতে হইছে ধানক্ষেতে, জঙ্গলে, কবরস্থানে।”
এই গল্প শুধু রাজনৈতিক হয়রানির নয়, এটা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দলিল।