চুয়াডাঙ্গায় অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপম্ন প্রচারণা, তথ্য নেয়ায় উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জিডি

- আপডেট সময় : ০৯:৪৩:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫ ৬৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারের অভিযোগ উঠেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের টিকটকার মাহফুজা আক্তারের (২২) বিরুদ্ধে। এরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সংবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচারের মতামত নেয়াসহ বিজ্ঞাপন প্রচারের ভিডিওটি একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে আপলোড করায় তিনজন সাংবাদিকসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দর্শনা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন ওই টিকটকার।
গত শুক্রবার ২৪ এপ্রিল দর্শনা থানায় জিডি করা হয়। বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জুয়া খেলা বেআইনি এবং অপরাধ। জুয়ার বিজ্ঞাপন প্রচার-প্রচারণার জন্য কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে জিডি গ্রহন করেছে পুলিশ। এ ঘটনার পরই সাংবাদিক মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
ভুক্তভোগীরা হলেন, ঢাকা পোস্টের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি ও দৈনিক মাথাভাঙ্গার স্টাফ রিপোর্টার আফজালুল হক, দৈনিক মাথাভাঙ্গার দর্শনা বুর্যো প্রধান হারুন রশিদ রাজু, অনলাইন নিউজ পোর্টাল নীলকণ্ঠের ডেস্ক ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন, জীবননগরের তুহিন উজ্জামান, মুহাম্মদ শাওমিন ও সাদিকুল ইসলাম।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেনের মেয়ে টিকটকার মাহফুজা আক্তার ১ মিনিট ২ সেকেন্ডের জুয়ার ভিডিও তৈরী করে নিজের টিকটক আইডিতে আপলোড করেন। এরপর থেকে আলোচনায় আসে এই টিকটকার।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আমি মাহফুজা আক্তার গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভুলবশত একটি গেমের (ক্যাসিনো) বিজ্ঞাপন প্রকাশ করি। পরবর্তীতে বিজ্ঞাপনটি আইনগত অপরাধ বুঝতে পেরে প্রকাশ করার ৩/৪ ঘন্টার মধ্যে আমি আমার প্রোফাইল থেকে ডিলিট করে দিই। এই বিষয়ে আর কোন ঝামেলা হয়নি। গত ১৪ এপ্রিল আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চুয়াডাঙ্গা সরকারী কলেজে পহেলা বৈশাখীর অনুষ্ঠানে একটি একক নৃত্যে অংশগ্রহণ করি। এই নৃত্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘রেডিও চুয়াডাঙ্গা’র ফেসবুক পেইজে প্রকাশ পাওয়ার পর অনেক ভাইরাল হয়। রেডিও চুয়াডাঙ্গার ফেসবুক এর মালিক পরিচয় দিয়ে জনৈক আফজাল হোসেন আমাকে একাধিকবার মোবাইলে জানায় যে, আপনার বিরুদ্ধে পূর্বের গেমের বিজ্ঞাপন (ক্যাসিনো) বিষয়ে অনেক কিছু শুনেছি, আপনি আমাকে বিষয়টি স্পষ্ট করে জানান। আমি তাকে ইতোপূর্বে ভুলবশত হয়ে গিয়েছিল, যা অল্প সময়ের মধ্যে আমার প্রোফাইল থেকে ডিলেট করে দিয়েছি মর্মে স্বীকার করি। সর্বশেষ আমি আমার উল্লেখিত ঠিকানায় অবস্থান করা কালীন রেডিও চুয়াডাঙ্গার ফেসবুক এর মালিক পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আমাকে গত ১৫ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কল করে বিষয়টি পুলিশ সুপার চুয়াডাঙ্গাকে জানানো হয়েছে, অল্প সময়ের মধ্যে পুলিশ আপনাকে এ্যারেস্ট করবে এবং আমরাও আপনার বিরুদ্ধে প্রচারণা করবে বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে দৈনিক মাথাভাঙ্গার দর্শনা বুর্যো প্রধান হারুন রশিদ রাজু, চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রী কলেজের ইংরেজি প্রভাষক সাদিকুল ইসলাম সাদিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল নীলকণ্ঠের ডেস্ক ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন, জীবননগরের তুহিন উজ্জামান, ও মুহাম্মদ শাওমিন তাঁদের আইডি হতে ভুলবশত গেমের (ক্যাসিনো বিজ্ঞাপন যা আমি ইতোমধ্যে ডিলেট করে দিয়েছি সেটি প্রকাশ করে আমার সম্মান হানী করছে এবং আমাকে ভয়, ভীত প্রদর্শন করছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক আফজালুল হক বলেন, গত পহেলা বৈশাখের দিন জেলা প্রশাসন কর্তৃক চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গনে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে গণমাধ্যামকর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ওই অনুষ্ঠানে টিকটকার মাহফুজা আক্তার নৃত্য পরিবেশন করেন। এই নাচের ভিডিওটি আমার নিজস্ব অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘রেডিও চুয়াডাঙ্গার’ ফেসবুক পেইজে আপলোড করা হয়। এরপর থেকেই জুয়া বিজ্ঞাপনটি যে চুয়াডাঙ্গার স্থানীয় কেউ করেছেন সেই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।’
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি একাধিক ব্যক্তি আমার নিকট জানালে আমি সংবাদ প্রকাশের উদ্দেশ্যতে গত ১৫ এপ্রিল ওই তরুণীর মুঠোফোনে জুয়ার বিজ্ঞাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন। এরপরই পুলিশ সুপারকে জানালে তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান। তবে তাকে কোন প্রকার হুমকি দেয়া হয়নি। যা আমার নিকট ওই তরুনীর ফোন কলে কথোপকথন সংরক্ষিত আছে।
সাংবাদিক আফজালুল হক বলেন, ‘নিষিদ্ধ জুয়ার প্রমোটকারী হয়েও সাংবাদিকের বক্তব্য নেয়ার কারণে থানায় জিডি করলেন। অথচ পুলিশ স্বাচ্ছ্যন্দে তা গ্রহন করেছেন। এটা দুঃখজনক। যেখানে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা সেখানে উল্টো সাংবাদিকদের নামে জিডি নিয়েছে পুলিশ।
ভুক্তবোগী সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাতে উপযুক্ত বিচার হয়, সেজন্য আমি জুয়ার বিজ্ঞাপনের ভিডিওটি নিজ আইডিতে আপলোড করেছিলাম। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। একজন জুয়ার অ্যাপ প্রোমোশনকারীর আইনের আওতায় আনার পরিবর্তে জিডি গ্রহণ করা হয়েছে। আশা রাখি চুয়াডাঙ্গার পুলিশ বাহিনী বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না। সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে দোষীকে উপযুক্ত শাস্তি দেবে।
সাংবাদিক হারুন রশিদ রাজু বলেন, ‘জুয়া ধ্বংস করে ব্যাক্তিত্ব, পরিবার, সমাজ তথা জাতীকে। যুগের সাথে আধুনিক হচ্ছে জুয়া প্রথা। অনলাইন জুয়ায় আশক্ত হয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে অনেকে। তাই জুয়াকে প্রমোট করা আইনগত অপরাধ হওয়া উচিৎ নয় কি? যদি অপরাধ হয়ে থাকে, তবে সে অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার খেসারত কি থানায় জিডি হতে পারে ? আমি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার সহ দর্শনা থানার ওসির সুদৃষ্টি কামনাসহ দাবি করছি জুয়ার প্রমোটকারীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের।
এদিকে, বক্তব্য নেয়াকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে থানায় জিডির ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলছেন, সংবাদ প্রকাশের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট্যদের বক্তব্য নেয়া সাংবাদিকের দায়িত্ব। সেজন্য কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জিডি হতে পারে না। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি রাজিব হাসান কচি বলেন, ‘আমাদের দাবি থাকবে, জুয়ার বিজ্ঞাপনকারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক। এ ধরনের ঘটনায় আমরা মর্মাহত। সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জিডি প্রত্যাহার করতে হবে।’
চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিপুল আশরাফ বলেন, ‘আমরা পুলিশের প্রতি আহ্বান জানায় এই ঘটনায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে জিডি প্রত্যাহারসহ সংশ্লিষ্ট্য জুয়ার প্রচারকারীকে শাস্তির আওতায় আনা হোক।’
এ বিষয়ে জানতে দর্শনা থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) বলেন, ‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।’