ঢাকা ১২:২১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ২০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বিএনপির ১১৩ আসনে প্রার্থী বদলে রেকর্ড: শীর্ষ আলোচিত সর্ব মহলে আগৈলঝাড়ায় সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত রাণীশংকৈলে ৬ বছরেরও উদ্বোধন হয়নি মডেল মসজিদ মনিরামপুরে ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ইফতেখার সেলিম অগ্নি — জনগণের আস্থার প্রতীক তৃণমূলে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা ঝিনাইদহ-২ আসন শরীকদের ছেড়ে দিলে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বিএনপি কাঠালিয়ায় বিএনপির নির্বাচনী প্রস্তুতি সভায় গোলাম আজম সৈকত নীলফামারীর ৪টি আসনের মধ্যে ২টিতে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা রংপুরের গঙ্গাচড়ায় 18 মাস বয়সের শিশুকন্যা আনহা বলাৎকারের শিকার সোনাগাজীর মুন্সি খুরশিদ আলম বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা ও উপদেষ্টা পরিষদ গঠিত এনামুল হক এনাম সভাপতি ফেনীতে বিএনপি’র তিন আসনের প্রার্থী ঘোষণা

সম্পদ নয় প্রাণ বাঁচানোই মুখ্য হয়ে উঠেছে

নিজেস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৪:৩৮:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪ ২২০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আশরাফ উদ্দিন:-
স্মরণকালের বন্যার ভয়াবহ রূপ দেখছে ফেনীর পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। সম্পদ নয়, প্রাণ বাঁচানোই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে মানুষের। ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপ ও অবিরাম বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা যোগ দিয়েছেন। তবে দুর্গত এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ও পানির প্রবল স্রোত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম। বন্ধ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগও নেই।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সময়ের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন দুর্গত অঞ্চলে বানভাসি মানুষের বাঁচার আকুতি প্রবল হয়ে উঠেছে। সেনা ও কোস্টগার্ডের ২৪টি বোট উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে। বন্যায় জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ।পরশুরামের বীর চন্দ্রনগর গ্রামের আবদুল কাইয়ুম জানান, প্রবল স্রোতে এখন সম্পদ নয়, মানুষের জান বাঁচানোই দায় হয়েছে। বন্যার্তরা প্রাণ বাঁচানোর করুণ আকুতি জানাচ্ছে নৌকা নিয়ে তাদের উদ্ধারের জন্য। পরশুরামের মির্জানগর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাঁচার আশায় আশ্রয়ের সন্ধানে ফেনী শহরের একটি হোটেলে এসে উঠেছেন আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাতভর আতঙ্ক, মানুষের আর্তি আর বন্যার প্রবল বিধ্বংসী রূপ দেখেছি। ভিটেমাটি ছেড়ে সামান্য কয়েকটি কাপড়চোপড় সম্বল হিসেবে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে বাধ্য হয়েছি।’ পরিবার-পরিজন নিয়ে পানিবন্দি হয়ে আছেন। উদ্ধারের জন্য নৌকার সহায়তা কামনা করেছেন।ফেনী শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শফিউল আলম। বুধবার দুপুরে মোবাইল ফোনে পরশুরামের মধ্যম ধনীকুণ্ডায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় তার। তিনি বলেন, ‘সন্তানদের নিয়ে প্রাণে বাঁচতে পাশের একটি দোতলা ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল পরিবারের সদস্যরা। সেখানে তখন পানিতে নিচতলা পুরোটা ডুবে ছিল। তার পর থেকে আর কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। পানির তীব্রতার কারণে বাড়ি ফেরারও পরিস্থিতি নেই। এ ছাড়া শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। ভয়ানক দুঃসময় কাটছে আমাদের।’ পরশুরামের শালধর গ্রামের মো. রহিম জানান, বেশিরভাগ এলাকার একচালা ও এক তলা পাকাঘর ডুবে গেছে। কোথাও আশ্রয় নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।আনন্দপুর ইউনিয়নের মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা হলেও ১৯৮৮ সালের পর এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা আর হয়নি। তিন উপজেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।দাগনভূঞা উপজেলার ওমরাবাদ গ্রামের আকবর হোসেন বলেন, ‘পরিবার-পরিজন নিয়ে কেবল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো অন্যের হেফাজতে রেখে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। পানিতে ঘরবাড়িসহ চারপাশ ডুবে গেছে।’ফেনী শহরের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, ‘শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত। দোকানপাটে পানি প্রবেশ করে মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৭টি ভাঙা অংশ দিয়ে হুহু করে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। নদীর পানি বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া ২৬টির সঙ্গে এবার নতুন করে আরও একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকায় ঠিকভাবে উদ্ধারকাজও করা যাচ্ছে না। এখনও বৃষ্টির সঙ্গে পানি বাড়ছে।’জানতে চাইলে ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। এখনও পাঁচ উপজেলার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। তবে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকায় কতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে বা কোন এলাকায় কেমন আক্রান্ত হচ্ছে তার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না।’

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

সম্পদ নয় প্রাণ বাঁচানোই মুখ্য হয়ে উঠেছে

আপডেট সময় : ০৪:৩৮:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : আশরাফ উদ্দিন:-
স্মরণকালের বন্যার ভয়াবহ রূপ দেখছে ফেনীর পাঁচ উপজেলার বিস্তীর্ণ জনপদের প্রায় ৩ লাখ মানুষ। সম্পদ নয়, প্রাণ বাঁচানোই এখন মুখ্য হয়ে উঠেছে মানুষের। ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের প্রবল চাপ ও অবিরাম বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা যোগ দিয়েছেন। তবে দুর্গত এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় ও পানির প্রবল স্রোত থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম। বন্ধ সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগও নেই।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সময়ের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন দুর্গত অঞ্চলে বানভাসি মানুষের বাঁচার আকুতি প্রবল হয়ে উঠেছে। সেনা ও কোস্টগার্ডের ২৪টি বোট উদ্ধারকাজে নিয়োজিত রয়েছে। বন্যায় জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া, ফেনী সদর ও দাগনভূঞার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ।পরশুরামের বীর চন্দ্রনগর গ্রামের আবদুল কাইয়ুম জানান, প্রবল স্রোতে এখন সম্পদ নয়, মানুষের জান বাঁচানোই দায় হয়েছে। বন্যার্তরা প্রাণ বাঁচানোর করুণ আকুতি জানাচ্ছে নৌকা নিয়ে তাদের উদ্ধারের জন্য। পরশুরামের মির্জানগর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাঁচার আশায় আশ্রয়ের সন্ধানে ফেনী শহরের একটি হোটেলে এসে উঠেছেন আমজাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘রাতভর আতঙ্ক, মানুষের আর্তি আর বন্যার প্রবল বিধ্বংসী রূপ দেখেছি। ভিটেমাটি ছেড়ে সামান্য কয়েকটি কাপড়চোপড় সম্বল হিসেবে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরোতে বাধ্য হয়েছি।’ পরিবার-পরিজন নিয়ে পানিবন্দি হয়ে আছেন। উদ্ধারের জন্য নৌকার সহায়তা কামনা করেছেন।ফেনী শহরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শফিউল আলম। বুধবার দুপুরে মোবাইল ফোনে পরশুরামের মধ্যম ধনীকুণ্ডায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় তার। তিনি বলেন, ‘সন্তানদের নিয়ে প্রাণে বাঁচতে পাশের একটি দোতলা ভবনে আশ্রয় নিয়েছিল পরিবারের সদস্যরা। সেখানে তখন পানিতে নিচতলা পুরোটা ডুবে ছিল। তার পর থেকে আর কোনোভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না। পানির তীব্রতার কারণে বাড়ি ফেরারও পরিস্থিতি নেই। এ ছাড়া শহরের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। ভয়ানক দুঃসময় কাটছে আমাদের।’ পরশুরামের শালধর গ্রামের মো. রহিম জানান, বেশিরভাগ এলাকার একচালা ও এক তলা পাকাঘর ডুবে গেছে। কোথাও আশ্রয় নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।আনন্দপুর ইউনিয়নের মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় প্রতি বছর পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা হলেও ১৯৮৮ সালের পর এ ধরনের ভয়াবহ বন্যা আর হয়নি। তিন উপজেলায় প্রায় প্রতিটি বাড়ি ও বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।দাগনভূঞা উপজেলার ওমরাবাদ গ্রামের আকবর হোসেন বলেন, ‘পরিবার-পরিজন নিয়ে কেবল প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো অন্যের হেফাজতে রেখে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছি। পানিতে ঘরবাড়িসহ চারপাশ ডুবে গেছে।’ফেনী শহরের ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন লিটন বলেন, ‘শহরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত। দোকানপাটে পানি প্রবেশ করে মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, ‘মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ২৭টি ভাঙা অংশ দিয়ে হুহু করে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। নদীর পানি বিপদসীমার ৮৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত বন্যায় ভেঙে যাওয়া ২৬টির সঙ্গে এবার নতুন করে আরও একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকায় ঠিকভাবে উদ্ধারকাজও করা যাচ্ছে না। এখনও বৃষ্টির সঙ্গে পানি বাড়ছে।’জানতে চাইলে ফেনীর জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা কাজ করছেন। এখনও পাঁচ উপজেলার ৩ লাখ মানুষ পানিবন্দি। তবে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন থাকায় কতজনকে উদ্ধার করা হয়েছে বা কোন এলাকায় কেমন আক্রান্ত হচ্ছে তার কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে কোথাও যাওয়া যাচ্ছে না।’