২ দফা দাবিতে “ব্রেক দ্য সাইলেন্স” কর্মসূচি ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের

- আপডেট সময় : ১১:৫১:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫ ৩৯ বার পড়া হয়েছে

নাদিয়া আফরিন কেয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শিক্ষার্থীরা সম্পূরক বৃত্তি বাস্তবায়ন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নীতিমালা অনুমোদনের দাবিতে টানা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় রবিবার সিন্ডিকেট সভা ডেকে নীতিমালা অনুমোদন না করলে “ব্রেক দ্য সাইলেন্স” কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১২টায় জবির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পরবর্তি করুন ঘোষনা প্রদান করা হয়। শিক্ষার্থীদের দুই দফা দাবি হলো:
১. জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত সম্পূরক বৃত্তি দ্রুত বাস্তবায়ন।
২. বিশেষ সিন্ডিকেট সভা ডেকে জকসুর নীতিমালা অনুমোদন ও নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা।
সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা জানান, দেশের অন্যতম প্রাচীন ও গৌরবময় সাফল্য গাঁথা ইতিহাস সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ সেখানে ছেলেদের জন্য কোনো আবাসিক হল নেই এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মাত্র একটি হল রয়েছে। ফলে প্রায় ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশোনা করতে হয়। এই বাস্তবতায় তারা গত মে মাসে শিক্ষার্থীরা “লং মার্চ টু যমুনা” কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সম্পূরক বৃত্তিকে জাতীয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে।
কিন্তু আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বাজেটে অনুমোদন হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো সম্পূরক বৃত্তি প্রদানের কার্যক্রম শুরু করেনি।
এছাড়া, ৫ আগস্ট নতুন প্রশাসন দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সুস্থ রাজনৈতিক চর্চা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে জকসুর নীতিমালা চূড়ান্ত করে দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু প্রশাসন এ বিষয়ে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
শিক্ষার্থীদের মতামত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ইতোমধ্যেই ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে জবির শিক্ষার্থীরা এখনো নীতিমালা অনুমোদনের অপেক্ষায়।
প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা বলেন,“প্রশাসনের এ গড়িমসি ও অদক্ষতার কারণে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নও ব্যাহত হচ্ছে।”
তারা আরও জানান, ন্যায্য দাবি আদায়ে টানা অবস্থান কর্মসূচি চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা আলটিমেটাম দিয়ে বলেন, আগামী রবিবার (২৪ আগস্ট) দুপুর ১২টার মধ্যে বিশেষ সিন্ডিকেট সভা ডেকে জকসুর নীতিমালা অনুমোদন না করা হলে তারা “ব্রেক দ্য সাইলেন্স” কর্মসূচি পালন করবেন। ওইদিন থেকে ভিসি ভবনের সব কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। এসময় অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা প্রশাসনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেন।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ বলেন,
“বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রহসন গত এক বছর ধরে চলছেই। যমুনা আন্দোলনের পরেও আমাদের সম্পূরক বৃত্তি এখনো প্রদান শুরু হয়নি। সারাদেশে যখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল বাজছে, সেখানে আমাদের জকসুর আইন এখনো অনুমোদন হয়নি। আমাদের ন্যায্য অধিকার যদি প্রশাসন না দেয়, তবে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই ‘দড়ি ধরে মারব টান, প্রশাসন হবে খানখান’।”
আপ বাংলাদেশ জবি শাখার আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন,“আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে সম্পূরক বৃত্তি ও জকসুর দাবিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা চাই একটি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ কবে থেকে সম্পূরক বৃত্তি কার্যকর হবে এবং কবে জকসু আইন পাস হবে। নতুবা আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনে নামব।”
শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল আউয়াল বলেন,“২০০৫ সালে বেগম খালেদা জিয়া জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করেন। কিন্তু পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো উন্নয়নমূলক কর্মসূচি নেয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের অন্যতম মাধ্যম হবে জকসু। তাই অতি দ্রুত আমাদের দুই দফা দাবি মেনে নিতে হবে।”
শাখা ছাত্রঅধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন,“আমরা দ্বিতীয় দিনের মতো শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রশাসন এখনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, আপনারা যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেন তবে এর পরিণতি ভয়াবহ হবে।”
প্রসঙ্গত, এই দুই দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে টানা কর্মসূচি দিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। তাই আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, তারা যেকোনো মূল্যে “ব্রেক দ্যা সাইলেন্স” কর্মসূচির মাধ্যমে এই দুই দফা দাবি যথাসম্ভব দ্রুত আদায় করে ছাড়বেন।
https://shorturl.fm/4yjEL