
গোলাম রব্বানী, হরিপুর (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধিঃ
সারা দেশের ন্যায় ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের অধিকার ও বঞ্চনার প্রেক্ষিতে হরিপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণীর চলমান পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
সোমবার(১লা ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে No work কর্মসূচির অংশ হিসেবে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এতে হতাশায় পরীক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে হরিপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.জামাল উদ্দিনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন একই যোগ্যতা ও একই নিয়োগ পদ্ধতির মাধ্যমে সবাই ৯ম গ্রেডে উন্নত হয়েছে শুধু আমরা পাইনি, এটা সুবিধা নয় বৈষম্য দূর করার জন্য আমাদের প্রাণের দাবি। আন্দোলনে পরীক্ষা বন্ধ হলে তো ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষতি এ বিষয়ে তিনি বলেন সাময়িক ক্ষতি হতে পারে কিন্তু আমরা দায়িত্ব নিয়ে ক্ষতিপুষিয়ে দিতে পারবো বলে আমরা বিশ্বাস করি। শীতকালীন ছুটি বাদ দিয়ে পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ করাবো। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি পূরণ করতে সচেষ্ট হবো। কিন্তু হতাশ অবমানিত শিক্ষক কখনোই মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারেনা। একজন মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষকই আপনাদের সন্তানদের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা, তিনি আরো বলেন এটি সরকারবিরোধী আন্দোলন নয় প্রাথমিক শিক্ষক, কলেজ প্রভাষক, স্বাস্থ্যকর্মকর্তা সবাই ন্যায্য অধিকার পেতে আন্দোলন করেছেন। আমরাও সেই একই ন্যায় ও মর্যাদা চায়। প্রধান শিক্ষক আরো বলেন আমরা আপনাদের সন্তানদের শিক্ষক, আমাদের প্রতিটি স্বপ্নে প্রতিটি সাফল্যে আপনাদের শ্রম ও ভালবাসা জড়িয়ে রয়েছে ।
কিন্তু যে শিক্ষকেরা বৈষম্যের শিকার ও অন্যায় ভাবে বঞ্চিত, যার পদোন্নতি বছরের পর বছরে আটকে থাকে, যার প্রাপ্য অধিকার আদালতের রায়ের পরও দেওয়া হয় না, কিভাবে তিনি আপনার সন্তানকে ন্যায় মর্যাদা ও সম্মান শেখাবেন এ আন্দোলন কেবল বেতন গ্রেড ইনক্রিমেন্টের জন্য লড়াই নয় এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ টেকসই ন্যায্য শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ার লড়াই, যাতে আপনার সন্তান গর্ব করে বলতে পারে আমাদের স্যার ম্যাডাম নিজের অধিকার আদায় করেছেন তাই আমাকে ন্যায় শিক্ষা শেখাবেন । শিক্ষকের সম্মান বাড়লে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে।
যে চারটি স্পষ্ট যৌক্তিক দাবির জন্য সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা পরীক্ষা স্থগিত করেছেন সেই দাবিগুলো হলোঃ
০১. এন্ট্রিপদ ৯ম গ্রেডকে এন্টিগ্রেড রেখে আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠন করা
০২. শুন্য পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির দ্রুত ব্যবস্থা গ্ৰহণ
০৩. টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বকেয়া প্রদান
০৪. বিএড/এমএড স্কেলে ২-৩টি ইনক্রিমেন্ট পুনর্বহালের দাবিতে আজকে আমাদের এই কর্মবিরতি সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কেন আন্দোলনে নামতে হলো এই বিষয়ে হরিপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন ১৯৯৩ সাল থেকে সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরা দশম গ্রেডেই আটকে আছেন ৫২ বছর ধরে কোন অগ্রগতি নেই ।২০ বছর চাকরি করেও নেই সিলেকশন গ্রেড নেই টাইম স্কেল নেই নেই উচ্চতর গ্রেডে ওঠার সুযোগ। সুপ্রিম কোর্ট ৩ মাসের মধ্যে টাইম স্কেল সিলেকশন গ্রেড দেওয়ার নির্দেশ দিলেও ছয় মাস ধরে ফাইল ঝুলে রয়েছে । আঞ্চলিক উপপরিচালকের স্বতন্ত্র পদটি বাতিল করা হয়েছে যা শিক্ষকদের প্রশাসনিক অগ্রগতির সরাসরি বন্ধ করে দেয়। সরকারি জেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা শিক্ষক অফিসার ও জেলা শিক্ষা অফিসারের পদ যা সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকদের পদোন্নতিযোগ্য ও অথচ সেগুলো প্রযুক্তর লোকদের নিয়ে পূরণের চেষ্টা চলছে। যা সম্পূর্ণ বিধি বহির্ভূত দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯০% প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য এবং ১০০% সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য।
২০১০ ব্যাচের আংশিক এবং তৎপরবর্তী ব্যাচগুলো অদ্যাবধি সিনিয়র শিক্ষক হতে পারেননি যেখানে ৭ বছর পর সিনিয়র শিক্ষক পদে পদোন্নতির বিধান বিদ্যমান আলাদা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গঠনের সুপারিশ ২০০৩ জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এবং সর্বোপরি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার লিখিত থাকা সত্ত্বেও কোন অগ্রগতি হচ্ছে না । দশকের পর দশক ধরে মানববন্ধন স্মারক লিপি প্রদান আলোচনা সভা সেমিনার সাক্ষাৎকার সবই হয়েছে, কিন্তু ফলাফল ০ ।
৫২ বছরের বৈষম্যে একই নিয়োগ যোগ্যতা একই সময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত অন্যান্য কর্মকর্তারা এগিয়ে গেছেন। ১৯৭৭ সালের মাধ্যমিক শিক্ষক পিটিআই ইন্সট্রাক্টর সাব রেজিস্টার দশম গ্রেটে ছিলেন। ১৯৮৩ সালে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার ৯ম গ্রেডে উন্নীত হয় ।২০০৫ সালে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নবম গ্রেডে উন্নীত হয়। ২০১৫ সালে এসে শুধু সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকরাই দশম গ্রেডে আটকে রয়েছেন যারা আপনাদের সম্মান বা নিচে ছিলেন তারা সবাই উন্নীত হয়েছেন শুধু মাধ্যমিক শিক্ষকরাই দশম গ্রেডে আটকে আছেন বলে তিনি দাবি ব্যক্ত করেছেন। তিনি আরো বলেছেন এটি কোন অতিরিক্ত সুবিধা নয় এটি সমান মর্যাদা ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের লড়াই দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের এই কর্মবিরতি চলতে থাকবে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রায়হান সুলতান।
যোগাযোগঃ ৭২/৭-৮ মানিকনগর, মুগদা,ঢাকা-১২০৩
মোবাইলঃ +৮৮০৯৬৩৮০৮৯০১৪
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র. All rights reserved.