হজের পথে মানুষের ঢল, কাবায় ঘুরছে আশেকানের দল

- আপডেট সময় : ০১:১১:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫ ১১০ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক: গালিব খাঁন:-
মক্কার আকাশ আজও তপ্ত, রোদের তাপে পুড়ছে প্রান্তর, অথচ বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে স্বর্গীয় সুগন্ধ। যেন প্রতিটি ধূলিকণার মধ্যে লেখা আছে তীর্থযাত্রীদের নিঃশ্বাস। আরবের বুকে, পবিত্র কাবার চারপাশে আজও তৈরি হচ্ছে নতুন ইতিহাস। ২০২৫ সালের হজ উপলক্ষে, এক কোটি মানুষের সমাবেশ—হ্যাঁ, এক কোটি তীর্থযাত্রী—তাদের প্রত্যাশা আর প্রার্থনার বোঝা নিয়ে পাড়ি জমাবে পবিত্র ভূমিতে। আর এই মহাযাত্রাকে ঘিরে নিরাপত্তার ব্যূহ যেন এক শক্ত প্রাচীরের মতো গড়ে তোলা হয়েছে।
চলমান প্রস্তুতির কথা বলছে সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়। সেখানকার সর্বশেষ ঘোষণার (Al Jazeera, 26 May 2025) সূত্রে জানা গেছে, ২৪ ঘণ্টা নজরদারির জন্য ৪০,০০০ সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে মক্কা-মদিনা অঞ্চলে। ৩,০০০ নিরাপত্তা কর্মী প্রতিদিন রাস্তায় টহল দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, পবিত্র মসজিদুল হারামে স্থাপন করা হয়েছে অতি-উন্নত ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম, যাতে তীর্থযাত্রীদের যেকোনো প্রয়োজনে দ্রুত সহায়তা পৌঁছে যায়।
মিনার তাঁবু-শিবির থেকে শুরু করে আরাফাতের প্রান্তর পর্যন্ত, প্রতিটি ধুলিকণার ওপরে নিরাপত্তার চোখ—এ যেন এক বিশাল মানবপ্রাচীর। প্রতি বছরই যেখানে মানুষের ঢল নামে, সেখানেই এবার বিশেষ নজর দিয়েছে সৌদি সরকার। সৌদি সিভিল ডিফেন্সের সর্বশেষ রিপোর্ট (Arab News, 25 May 2025) অনুযায়ী, এবারের হজে হিট স্ট্রোক এড়াতে ৫০০টিরও বেশি পানির ফোয়ারা বসানো হয়েছে, হজ রুটে ২৪/৭ মেডিকেল ক্যাম্প, এবং মিনার তাঁবুতে অগ্নি-নির্বাপক সিস্টেম উন্নত করা হয়েছে।
কাবাঘরের চারপাশের বাতাস যেন কান্না আর প্রার্থনার এক গভীর সুর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মানুষের চোখে জল, প্রতিটি মুখে একটাই নাম—”লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক”। কাবার দিকে এগিয়ে চলা এই মানুষগুলো যেন একেকটি জীবন্ত কাব্য—কোনোটা আসছে আফ্রিকা থেকে, কোনোটা পাকিস্তান থেকে, কোনোটা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মফস্বল থেকে। প্রত্যেকের হৃদয়ে কেবল একটাই আকুতি—”হে প্রভু, আমার দিকেই তাকাও, আমার প্রার্থনা গ্রহণ করো।”
হজের আনুষ্ঠানিকতার আগে, গত ২৫ মে (Saudi Gazette, 25 May 2025) থেকে মক্কা ও মদিনার রাস্তা পুনঃসংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। ১০০০টিরও বেশি শাটল বাস প্রস্তুত, ১৫০০টি ইলেকট্রিক বাসের বহরও রাস্তায়। নতুন অ্যাপ-নির্ভর ট্র্যাকিং সিস্টেম ‘নুসুক’ এখন বাধ্যতামূলক, যাতে প্রতিটি তীর্থযাত্রীর অবস্থান জানা যায়।
তবুও, যত নিরাপত্তা-প্রস্তুতি হোক না কেন, মানুষের মনের ভেতরের সেই তৃষ্ণা মেটানো যায় না। এক কোটি মানুষের বুকের ভেতর দাউ দাউ করে জ্বলছে যে আগুন, তা শুধুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছানোর জন্য। আর এই চাওয়া, এই আকুতি—একটি দেশ, একটি প্রশাসন, হাজারো নিরাপত্তা কর্মী—সবাই মিলে সাজিয়ে তুলছে এক স্বপ্নের মহাযাত্রা।
আরবের আকাশে তাই নতুন ভোর, নতুন প্রতিশ্রুতি। এক কোটি তীর্থযাত্রীর আশীর্বাদপূর্ণ যাত্রা নিশ্চিত করতে সৌদি সরকার ২৪ ঘণ্টার হটলাইনও চালু রেখেছে (SPA News, 26 May 2025)। প্রতিটি হজযাত্রীর স্বপ্ন পূরণের এই পথে যেন কোনো বাধা না আসে, কোনো অমঙ্গল না ছায়া ফেলে।
আজ মক্কা প্রান্তরে বাতাসে ভেসে আসা সেই কণ্ঠস্বর যেন বলে ওঠে—
“আমার হৃদয়ের পাঁজরে বাজে একটিই সুর, লাব্বাইকা, লাব্বাইকা—আমার প্রভু, আমি এসেছি, তোমারই দ্বারে।”
তথ্যসূত্র:
Al Jazeera, 26 May 2025
Arab News, 25 May 2025
Saudi Gazette, 25 May 2025
Saudi Press Agency (SPA News), 26 May 2025