সিলেটে দারুল মাহমুদ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসায় হিফয সমাপন ও পাগড়ি প্রদান অনুষ্ঠিত

- আপডেট সময় : ০৪:৩৯:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১৭৯ বার পড়া হয়েছে

সিলেটের অন্যতম ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল মাহমুদ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসায় এক গর্বিত ও আবেগঘন পরিবেশে হিফয সমাপনকারী ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান ও অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল
এই আয়োজনে দেশের বিশিষ্ট ইসলামিক ব্যক্তিত্ব, উলামায়ে কেরাম, অভিভাবক, শিক্ষার্থী এবং কুরআনপ্রেমী ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্থ করার পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের পাগড়ি প্রদান ও সনদ বিতরণ করা হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিল হাফিজদের আনুষ্ঠানিকভাবে পাগড়ি প্রদান ও সনদ বিতরণ। শিক্ষার্থীদের মাথায় পবিত্র কুরআনের হাফিজ হওয়ার প্রতীকী পাগড়ি পরিয়ে দেওয়া হয় এবং তাঁদের হাতে সম্মাননা সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
এই সময় শিক্ষার্থীরা পবিত্র কুরআনের তেলাওয়াত করেন, যা উপস্থিত দর্শকদের আবেগাপ্লুত করে তোলে। কুরআনের সুমধুর তেলাওয়াত শুনে অনেকেই অশ্রুসজল হয়ে পড়েন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হাফিজ মাওলানা তজম্মুল আমিন সাহেব বলেন—
“একজন হাফিজ কেবল কুরআনের সংরক্ষণকারী নন, বরং তিনি ইসলামের সুমহান বার্তা সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্বও বহন করেন। তাই আমাদের উচিত কুরআনের শিক্ষাকে শুধু মুখস্থ করায় সীমাবদ্ধ না রেখে তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করা।”
উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও তাঁদের মূল্যবান বক্তব্য
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন—
▪️ হাফিজ মাওলানা আহমদ সগীর বিন আমকুনী সাহেব
▪️ মাওলানা আব্দুল আহাদ নুমানি সাহেব
▪️ উস্তাদুল হুফফাজ হাফিজ জুনাইদ আহমদ সাহেব
এছাড়াও আরও উপস্থিত ছিলেন—
▪️ জনাব মনির হোসাইন (স্যার)
▪️ জনাব আব্দুল হামিদ চৌধুরী
বিশিষ্ট বক্তারা তাঁদের আলোচনায় ইসলামিক শিক্ষার গুরুত্ব, হিফযুল কুরআনের ফজিলত ও সমাজে হাফিজদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন।
তাঁরা বলেন—
“একজন হাফিজ শুধু একজন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব নন, বরং তিনি সমাজের জন্য একটি আলোকবর্তিকা। ইসলামী মূল্যবোধ ও কুরআনের আদর্শ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাই তাঁদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।”
মাদ্রাসার উন্নয়ন ও নতুন ভূমি ক্রয় প্রকল্প
অনুষ্ঠানে দারুল মাহমুদ তাহফিজুল কুরআন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হাফিজ মাওলানা আব্দুল আহাদ মাদ্রাসার সম্প্রসারণ সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন—
“আমাদের মাদ্রাসার পরিধি বাড়ানোর জন্য ৭ শতক জমির বায়না করা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু অংশের মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে, তবে এখনো কিছু টাকা বাকি রয়েছে।”
তিনি মাদ্রাসার উন্নয়ন ও জমি ক্রয়ে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন এবং সমাজের দানশীল ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিদের প্রতি সাহায্যের আহ্বান জানান।
“এই মাদ্রাসা থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন হাফিজে কুরআন তৈরি হচ্ছে। এটি কুরআনের খেদমতের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। আমাদের সকলের উচিত, মাদ্রাসার স্থায়ী উন্নয়নে সহযোগিতা করা।”
অভিভাবকদের অনুভূতি ও প্রতিক্রিয়া
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানের হাফিজ হওয়া নিয়ে আনন্দ ও গর্ব প্রকাশ করেন এবং মাদ্রাসার প্রশংসা করেন।
একজন অভিভাবক বলেন—
“আমার সন্তান কুরআনের হাফিজ হয়েছে, এটি আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত। আমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও পরিচালকদের প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া এটি সম্ভব হতো না।”
অন্য এক অভিভাবক বলেন—
“দারুল মাহমুদ মাদ্রাসা কুরআনী শিক্ষার ক্ষেত্রে অনন্য ভূমিকা পালন করছে। আমি চাই, আরও শিক্ষার্থী এখানে এসে পবিত্র কুরআন হিফয করুক এবং ইসলামের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করুক।”
বিশেষ দোয়া ও সমাপ্তি
অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে মাদ্রাসার ভবিষ্যৎ উন্নয়ন, নতুন ভূমি ক্রয়, শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
বিশিষ্ট উলামায়ে কেরাম দোয়া পরিচালনা করেন এবং উপস্থিত সবাই আল্লাহর দরবারে হাত তুলে মাদ্রাসার অগ্রগতি, শিক্ষার্থীদের নেক হায়াত ও ইসলামিক শিক্ষার প্রসারের জন্য প্রার্থনা করেন।