শাল্লায় আবারও স্কুল মাঠ দখলের চেষ্টা নৌকা ফিরিয়ে দিলো শিক্ষার্থীরা

- আপডেট সময় : ০১:৫৯:১৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫ ৮২ বার পড়া হয়েছে

তৌফিকুর রহমান তাহের,সুনামগঞ্জ দিরাই শাল্লা প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের শাল্লায় গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কারের পরিবর্তে আবারও নির্মাণাধীন মহাসড়কের মালামাল রাখতে উঠেপড়ে লেগেছে ঠিকাদারের লোকজন। এরপূর্বে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই বালু, পাথরের নৌকা বোঝাই করে স্কুলের খেলার মাঠে নোঙর করে রেখে আনলোড চেষ্টা করে। এই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা খেলার জন্য মাঠ সংস্কারের দাবি করে বেশক’টি নৌকা ফিরিয়ে দেয়। এমনই অভিযোগ উঠেছে। পরে ঠিকাদাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন আবারও খেলার মাঠে সড়কের মালামাল রাখার জন্য অভিভাবকদের ডেকে এনে একটি সভার আয়োজন করেন।
২৬ জুলাই গিরিধর উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণিকক্ষে এসভা অনুষ্ঠিত হয়। ২৫জুলাই মাইকিং করে সভার কথা জানানো হয় গ্রামে গ্রামে। সভায় শতাধিক অভিভাবক উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা বিশ্বজিৎপতি চক্রবর্তী। দিনব্যাপী শিক্ষক, অভিভাবক, পূর্বের কমিটির সভাপতি, সদস্য ও ঠিকাদারদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সবাই খেলার মাঠ উন্মুক্ত রাখার পক্ষে কথা বলেন। সভার সভাপতি বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী বলেন কোটি টাকার বিনিময়েও আমি খেলার মাঠে মালামাল রাখার পক্ষে নই। আমি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার পক্ষে। পূর্বের নির্বাচিত কমিটির সদস্য আব্দুল খালেকও বলেন, আমাদের তিনবেলা পেটভরে খাবার দিলেন আর শেষে আমাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিবেন তাতো হতে পারে না। অভিভাবক ফখরুল ইসলাম বলেন খেলার মাঠ তো আর খেলার উপযোগী নেই। গত দুই বছর খেলার মাঠে এসব মালামাল রাখার অনুমতি কারা দিলেন, কীভাবে দিলেন আমরা জানতে চাই। এখন খেলার মাঠে খেলাধুলার উপযোগী না করে আবারও মালামাল রাখার কথা কীভাবে আসে? আমরা এমন এক কমিটি বানিয়ে দিলাম, যে কমিটি বলতেই পারে না কীভাবে মালামাল রাখা হলো!
অভিভাবক সুরঞ্জিত দাশ বলেন মাঠ দিল কারা? সংস্কার করার কথা ছিল কিনা, কত টাকার বিনিময়ে মাঠ ভাড়া দেয়া হয়েছিল? হবিবপুর ইউপির ২নং ওয়ার্ড মেম্বার বাবলু রায় বলেন শিক্ষার্থীরা এমাঠে খেলাধুলা করে। তাদের মাঠ তারাই এখন সিদ্ধান্ত নিবে। কারণ, যেহেতু মালামালের নৌকা বিদ্যালয়ের মাঠ জুন মাসে সংস্কার করে খেলাধুলা জন্য উপযোগী করে দেয়ার কথা শুনেছি পত্রিকার মাধ্যমে। এখন সংস্কার না করে আবারও মালামাল রাখার জন্য নৌকা নোঙর করে রাখা হয়েছে। এমনিতেই ছাত্ররা নৌকার মালামাল রাখতে দেয়নি। আমরা যদি এখন মাঠ দিই, পরে ছাত্ররা যদি প্রতিবাদ করে এই দায় কে নিবে? এক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব বিষয়টি ছাত্রদের উপর ছেড়ে দেয়া হোক। ছাত্ররাই সিদ্ধান্ত নিবে তারা মাঠ ভাড়া দিবে নাকি খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত রাখবে।
তবে মাঠ কীভাবে দু’বছর পর্যন্ত বালু, পাথর রেখে দখলে রেখেছে সড়কের ঠিকাদাররা এবিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারেননি প্রধান শিক্ষক আনন্দ মোহন চৌধুরীও! সবাই যেন দায় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে গেছেন অভিভাবক সভায়।
এসময় পূর্বের সভাপতি মৃদুল চন্দ্র দাশ বলেন আমি এবিষয়ে কিছুই জানি না। স্কুলের শিক্ষক কাজল কান্তি চৌধুরী এই মালামাল রাখার বিষয়টি অবগত করেছে আমাকে। তবে কোনও অর্থ লেনদেন হয়নি। শুধু মাঠ সংস্কারের কথা জানি। তবে সভাপতি হিসেবে অভিভাবকদের কাছে ক্ষমা চান তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই ২০২৪ সালের নৌকা প্রতীকের এমপি প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন) চৌধুরী কাউকে কিছু না বলেই এই মাঠ ঠিকাদারদের অনুমতি দিয়েছিলেন।
তবে দিনভর আলোচনা করেও মাঠ ভাড়া দেয়ার কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে আবার শোনা যায়, অভিভাবকরা ৫লাখ টাকার বিনিময়ে এই মাঠ ভাড়া দেয়ার প্রস্তাব করেছেন। তবে তারও কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা।
অন্যদিকে গত মার্চ মাসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাসের কাছে স্কুলের মাঠ খেলাধুলা করার উপযোগী করে দেয়ার জন্য একটি অভিযোগ করেছিলেন সিলেট জজকোর্টের আইনজীবী সুব্রত দাশ। পরে গত ২৮ মে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তড়িঘড়ি করে মাঠের বালু, পাথর খেলার মাঠ থেকে সরিয়ে নেয় ঠিকাদার। কিন্তু গত জুন মাসে মাঠে ভিটবালু ফেলে মাঠ সংস্কার করে দেয়ার কথা থাকলেও, তা না করে আবারও মাঠে মালামাল রাখার প্রস্তুতি নেয়া হয়।