মোঃ সজিব সরদার,স্টাফ রিপোর্টার : দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন, গৌরব আর অহংকারের প্রতীক—পায়রা সেতু। নদী, আকাশ আর আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এই সেতুটি ছিল এক মহৎ শিল্পকর্ম। কিন্তু আজ সেটি পরিণত হচ্ছে “লোহার খাঁচায় বন্দি এক সৌন্দর্যে।”
পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলায় ২০২১ সালের ২৪ অক্টোবর চালু হওয়া চার লেনের এ সেতু দ্রুতই হয়ে ওঠে হাজারো মানুষের প্রিয় গন্তব্য। পরিবার-পরিজন কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে বিকেলের আড্ডা, নদীর বুক চিরে বয়ে যাওয়া বাতাস, আর আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে ছবি তোলার আনন্দ—সবই মিলতো এই সেতুর ওপরে। কিন্তু হঠাৎ করেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) ‘নিরাপত্তার অজুহাত’ দেখিয়ে সেতুর দুই পাশে উঁচু কংক্রিট প্রাচীরের ওপরে লোহার গ্রিল বসানো শুরু করেছে।
বরিশাল অংশের ৪৬৩ মিটার জুড়ে ইতোমধ্যেই বসানো হয়েছে এই গ্রিল। অথচ চালু হওয়ার পর থেকে সেতুতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি—এমন তথ্যই দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তাই সাধারণ মানুষ এই সিদ্ধান্তকে বলছেন তড়িঘড়ি ও পরিকল্পনাহীন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, “নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিকল্প কোনো নকশা করা যেত, যা সেতুর সৌন্দর্য নষ্ট করতো না। এই গ্রিল পুরো নান্দনিকতা ধ্বংস করে দিয়েছে।
ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরাও জানালেন, গ্রিল বসানোর কারণে দর্শনার্থী কমে গেছে, ফলে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। লেবুখালী পয়েন্টের চা-নাস্তার দোকান ও ফুচকা বিক্রেতারা বিক্রি কমে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন। কলেজছাত্রী সুমাইয়া আক্তার দুঃখ করে বলেন, “আগে মনে হতো আকাশের নিচে নদীর বুকে দাঁড়িয়ে আছি। এখন মনে হয় যেন কারাগারের ভেতর থেকে ছবি তুলছি।”
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ স্বীকার করেছেন, কিছু তরুণ ছবি তুলতে গিয়ে মাঝপথে চলে আসে, এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। তবে তিনি নিরাপত্তার পাশাপাশি সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন। অন্যদিকে সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী জামিল হোসেন জানান, নিরাপত্তার কারণেই গ্রিল বসানো হচ্ছে, তবে অবশিষ্ট অংশে কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
স্থানীয় বাসিন্দা মো: নাঈম হোসেনের ক্ষোভ ছিল তীব্র: “এটা শুধু একটা সেতু নয়, আমাদের দক্ষিণাঞ্চলের স্বপ্ন। নিরাপত্তা যেমন প্রয়োজন, তেমনি সৌন্দর্যেরও মর্যাদা দিতে হবে। লোহার খাঁচা দিয়ে আমরা স্বপ্নকে বন্দি দেখতে চাই না।”
আজ তাই প্রশ্ন একটাই—
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে কি দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণ, পায়রা সেতুকে বন্দি করে দেওয়া হবে? নাকি মানুষের স্বপ্ন, আনন্দ আর সৌন্দর্যের মর্যাদাই অটুট থাকবে?
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রায়হান সুলতান।
যোগাযোগঃ ৭২/৭-৮ মানিকনগর, মুগদা,ঢাকা-১২০৩
মোবাইলঃ +৮৮০৯৬৩৮০৮৯০১৪
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র. All rights reserved.