ঢাকা ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
জুলাই সনদ নিয়ে সমঝোতায় আসতেই হবে : প্রধান উপদেষ্টা সূফীকথা’র ব্যবস্থাপনায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ভূমিকম্পে কাঁপল বাংলাদেশসহ ৬ দেশ রাণীশংকৈলে নারী ও কন্যাশিশুদের মানবাধিকার রক্ষার্থে গণ শুনানি শ্যামনগরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনি খাতুনের বদলি প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন আগৈলঝাড়ায় ৭শ পিচ ইয়াবা ও ১ কেজি ৮শ গ্রাম গাঁজা ব্যবসায়ীসহ ৩ জন আটক বরিশালের গৌরনদীতে ৮ মাসে কোরআনে হাফেজ ১০ বছরের শিশু আবদুল্লাহ দুমকি প্রেসক্লাব পরিবর্তনের অঙ্গীকারে-নতুন কমিটি গঠন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১৪ দিনের ছুটি যশোরে জাল ওয়ারিশ সনদ প্রদান, ইউপি প্রশাসকের বিরুদ্ধে মামলা

রাসেলস ভাইপার নিয়ে নতুন তথ্য

নিজেস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৮:০১:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪ ৮০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া

সম্প্রতি দেশজুড়ে আলোচিত রাসেল’স ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ নিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশে পর্যাপ্ত এন্টিভেনমের মজুদ রয়েছে এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত তা পৌঁছানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বহুল আলোচিত এই সাপটি সারাবিশ্বে বিষধর ১০টি সাপের মধ্যে নেই বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে ‘রাসেল’স ভাইপার: ফেরার ভার্সেস ফ্যাক্ট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচকরা বলেন, দেশের ২৭ জেলায় বহুল আলোচিত রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ পাওয়া গেছে। এর মানে এই নয় যে, এসব এলাকার মানুষ ঘর থেকে বের হবে না। এই সাপ নিয়ে অনেক বেশি গুজব ছড়িয়েছে। এই সাপ কখনও তেড়ে এসে মানুষকে কামড়ায় না। সে বিপদের ঝুঁকি দেখলেই শুধু কামড় দেয়। ২০১৩ সালে প্রথববার সাপটির কামড়ে রোগী পাওয়া যায়। এ সাপের দংশনে ৭০ শতাংশ রোগী সুস্থ হচ্ছে৷ বাকি ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী দেরিতে হাসপাতালে আসা। বর্তমানে দেশে এর এন্টিভেনম রয়েছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর এন্টিভেনম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দেশে এর এন্টিভেনম তৈরি কাজ চলমান আছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, জনগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে, রাসেল’স ভাইপার নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। আমি সংসদ সদস্যদের রোগীকে চিকিৎসকের কাছে দ্রুত মানুষের কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করার আহ্বান করেছি। আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের এন্টিভেনমের সংকট নেই। যদি নাও থাকে আমরা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো।

চিকিৎসকদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, করোনাকালে আমরা শুনেছিলাম, ঢাকার রাস্তায় মানুষের লাশ পড়ে থাকবে। চিকিৎসকদের কল্যাণে তা হয়নি। এবারও সবার চেষ্টায় এ সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে পারবো।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, বাংলাদেশে সবাই ডাক্তার। এটি একটি বড় সমস্যা। আমাদের এখানে যেকোনো রোগে মানুষ নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওষুধ খায়। এমনকি এন্টিবায়োটিকও খায়। সাপের কামড়ে ওঝাদের কাছে না গিয়ে যেকোনো রোগে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাপের বিষয়ে আমরা সচেতনা তৈরির চেষ্টা করছি। এই বিষয়ে গণমাধ্যনের সহযোগিতা চাই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হক বলেন, দেশে ৬৬৫ জনকে প্রতিদিন কুকুরে কামড়ায়। ডুবেও অনেক সংখ্যক মানুষ মারা যায়। রাসেল’স ভাইপারে কামড়ের সংখ্যা আরও অনেক কম। এ বিষয়ে আতঙ্ক তৈরি না করে সচেতন হবে। ভয় তৈরি করা যাবে না।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া বলেন, সাপে কাটা রোগী যদি হাসপাতালে এসে মৃত্যুবরণ করে এর দায় আমাদের। আমাদের প্রতিটি হাসপাতালে এন্টিভেনম পৌঁছানো হয়েছে। আমাদের চিকিৎসকরা এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত। তবে ওঝাসহ নানা কারণে রোগী হাসপাতালে আসতে দেরি করায় মৃত্যু বাড়ে। দেরিতে হাসপাতালে আসায় রোগীরা অন্তত ক্রিটিক্যাল অবস্থায় চলে যায়। ওই অবস্থায় তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার সেন্টারের প্রয়োজন। হাসপাতালে এই ক্রিটিক্যাল রোগীদের মৃত্যু অনেকটার রোধ করা সম্ভব যদি ইনটেনসিভ সেবা নিশ্চিত করা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, সাপের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘোষণা করা হয়েছে। এটি করা যাবে না৷ সাপ ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স রক্ষা করে। সাপের বিষ ওষুধ তৈরির একটি উপাদান। মানবসৃষ্ট কারণের সাপ তার বাসস্থান থেকে লোকালয়ে আসছে। রাসেল ভাইপার নিয়ে অসংখ্য মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের একটি। অথচ বিশ্বের দশটি বিষধর সাপের মধ্যেও নেই রাসেল’স ভাইপার।

অনুষ্ঠানে রাসেল’স ভাইপারের বাসস্থান, অভ্যাসসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে আলোচকরা সাপটির বিষের ধরন, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও কামড় প্রতিরোধে করণীয়সহ এন্টিভেনম তৈরির নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

রাসেলস ভাইপার নিয়ে নতুন তথ্য

আপডেট সময় : ০৮:০১:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া

সম্প্রতি দেশজুড়ে আলোচিত রাসেল’স ভাইপার সাপ নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ নিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশে পর্যাপ্ত এন্টিভেনমের মজুদ রয়েছে এবং উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত তা পৌঁছানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। বহুল আলোচিত এই সাপটি সারাবিশ্বে বিষধর ১০টি সাপের মধ্যে নেই বলেও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে ‘রাসেল’স ভাইপার: ফেরার ভার্সেস ফ্যাক্ট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আলোচকরা বলেন, দেশের ২৭ জেলায় বহুল আলোচিত রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ পাওয়া গেছে। এর মানে এই নয় যে, এসব এলাকার মানুষ ঘর থেকে বের হবে না। এই সাপ নিয়ে অনেক বেশি গুজব ছড়িয়েছে। এই সাপ কখনও তেড়ে এসে মানুষকে কামড়ায় না। সে বিপদের ঝুঁকি দেখলেই শুধু কামড় দেয়। ২০১৩ সালে প্রথববার সাপটির কামড়ে রোগী পাওয়া যায়। এ সাপের দংশনে ৭০ শতাংশ রোগী সুস্থ হচ্ছে৷ বাকি ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী দেরিতে হাসপাতালে আসা। বর্তমানে দেশে এর এন্টিভেনম রয়েছে। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর এন্টিভেনম পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে দেশে এর এন্টিভেনম তৈরি কাজ চলমান আছে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, জনগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে, রাসেল’স ভাইপার নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। আমি সংসদ সদস্যদের রোগীকে চিকিৎসকের কাছে দ্রুত মানুষের কাছে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করার আহ্বান করেছি। আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমাদের এন্টিভেনমের সংকট নেই। যদি নাও থাকে আমরা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো।

চিকিৎসকদের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, করোনাকালে আমরা শুনেছিলাম, ঢাকার রাস্তায় মানুষের লাশ পড়ে থাকবে। চিকিৎসকদের কল্যাণে তা হয়নি। এবারও সবার চেষ্টায় এ সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে পারবো।

স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. রোকেয়া সুলতানা বলেন, বাংলাদেশে সবাই ডাক্তার। এটি একটি বড় সমস্যা। আমাদের এখানে যেকোনো রোগে মানুষ নিজেরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ওষুধ খায়। এমনকি এন্টিবায়োটিকও খায়। সাপের কামড়ে ওঝাদের কাছে না গিয়ে যেকোনো রোগে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাপের বিষয়ে আমরা সচেতনা তৈরির চেষ্টা করছি। এই বিষয়ে গণমাধ্যনের সহযোগিতা চাই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক দীন মো. নূরুল হক বলেন, দেশে ৬৬৫ জনকে প্রতিদিন কুকুরে কামড়ায়। ডুবেও অনেক সংখ্যক মানুষ মারা যায়। রাসেল’স ভাইপারে কামড়ের সংখ্যা আরও অনেক কম। এ বিষয়ে আতঙ্ক তৈরি না করে সচেতন হবে। ভয় তৈরি করা যাবে না।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. টিটো মিয়া বলেন, সাপে কাটা রোগী যদি হাসপাতালে এসে মৃত্যুবরণ করে এর দায় আমাদের। আমাদের প্রতিটি হাসপাতালে এন্টিভেনম পৌঁছানো হয়েছে। আমাদের চিকিৎসকরা এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত। তবে ওঝাসহ নানা কারণে রোগী হাসপাতালে আসতে দেরি করায় মৃত্যু বাড়ে। দেরিতে হাসপাতালে আসায় রোগীরা অন্তত ক্রিটিক্যাল অবস্থায় চলে যায়। ওই অবস্থায় তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার সেন্টারের প্রয়োজন। হাসপাতালে এই ক্রিটিক্যাল রোগীদের মৃত্যু অনেকটার রোধ করা সম্ভব যদি ইনটেনসিভ সেবা নিশ্চিত করা যায়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, সাপের বিরুদ্ধে বিপ্লব ঘোষণা করা হয়েছে। এটি করা যাবে না৷ সাপ ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স রক্ষা করে। সাপের বিষ ওষুধ তৈরির একটি উপাদান। মানবসৃষ্ট কারণের সাপ তার বাসস্থান থেকে লোকালয়ে আসছে। রাসেল ভাইপার নিয়ে অসংখ্য মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। বলা হচ্ছে এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিষধর সাপের একটি। অথচ বিশ্বের দশটি বিষধর সাপের মধ্যেও নেই রাসেল’স ভাইপার।

অনুষ্ঠানে রাসেল’স ভাইপারের বাসস্থান, অভ্যাসসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। একইসঙ্গে আলোচকরা সাপটির বিষের ধরন, চিকিৎসা ব্যবস্থা ও কামড় প্রতিরোধে করণীয়সহ এন্টিভেনম তৈরির নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।