বালিয়াডাঙ্গীতে ১৫ মিনিটের ব্যবধানে ঝড়ে লন্ডভন্ড ২০ গ্রাম, শিশুসহ ৩ জনের মৃত্যু

- আপডেট সময় : ০৯:৪৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ জুন ২০২৪ ৮৯ বার পড়া হয়েছে

একে আজাদ, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :-
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে ১৫ মিনিটের ভারী বৃষ্টি ও ঝড়ে তিনজনের মৃত্যু হ য়েছে। ঝড়ের কবলে দুই নারী ও জমে থাকা পানিতে ডুবে মারা গেছে আড়াই বছরের এক শিশু।
শনিবার (১ জুন)ভোর ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। দুটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কাঁচা বাড়িঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে। গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক পরিবার।
নিহতরা হলেন- বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামের পইনুল ইসলামের স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা বেগম (৫০) এবং একই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলামের আড়াই বছরের ছেলে নাঈয়ুম।
পইনুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে থাকা অবস্থায় ঝড় শুরু হয়। বাড়িতে ছুটে এসে স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে ডাকাডাকি শুরু করি। পরে বাতাসে উড়ে এসে বারান্দায় পড়া টিন ও ছাউনি সরিয়ে দেখি নিচে চাপা পড়ে আছে স্ত্রী। উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
পাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি রুবেল জানান, ঝড়ের সময় বারান্দা বসে ছিলেন দবিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহেদা। মেঘের গর্জন আর ঝড়ে গাছপালা উড়তে দেখে বারান্দায়ই মারা যান তিনি।
পইনুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে মসজিদে থাকা অবস্থায় ঝড় শুরু হয়। বাড়িতে ছুটে এসে স্ত্রীকে খুঁজে না পেয়ে ডাকাডাকি শুরু করি। পরে বাতাসে উড়ে এসে বারান্দায় পড়া টিন ও ছাউনি সরিয়ে দেখি নিচে চাপা পড়ে আছে স্ত্রী। উদ্ধার করে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’
দবিরুল ইসলাম জানান, তাঁর স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ঝড়ের সময় ভয়ে স্ট্রোক করেছেন বলে ধারণা করছেন তাঁরা।
লালাপুর নয়াপাড়া গ্রামের নাজমুল ইসলাম জানান, বাড়ির পাশে গর্তে বৃষ্টির পানি জমে ছিল। খেলতে গিয়ে শিশুটি পানিতে পড়ে গিয়ে মারা যায়। পরে পরিবারের লোকজনের নজরে এলে তাঁকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
শনিবার দুপরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ঝড়ে পাড়িয়া ইউনিয়নের তিলকড়া, শালডাঙ্গা, বঙ্গভিটা, লোহাড়া, বামুনিয়াসহ ১২টি গ্রাম, বড়বাড়ি ইউনিয়নের বেলহাড়া, বেলবাড়ী, বটের হাট, হরিপুরসহ আটটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বেশির ভাগ কাঁচা বাড়ির টিনের চালা উড়ে গেছে। গাছ ভেঙে পড়েছে ঘরের ওপর।
বড়বাড়ী ইউনিয়নের আধারদীঘি বাজারে পাঁচটি দোকান ও দুটি হোটেলে গাছ ভেঙে পড়েছে। ঘরের টিন নষ্টসহ সার ও কীটনাশক ও সিমেন্ট ব্যবসায়ীর ৫ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতি হয়েছে।
আধাদীঘি বাজারের ব্যবসায়ী হাসান আলী জানান, বাজারে শতবর্ষী কিছু আমগাছ ছিল দীর্ঘদিনের। ১৫ মিনিটের ঝড়ে সেই গাছের বড় ডাল ভেঙে পড়েছে দোকানের ওপর। এতে দোকানগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
লোহাগাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান জানান, ঝড়ে তাদের স্কুলের হলরুমের টিনের ছাউনি মাঠে এসে পড়েছে। বৈদ্যুতিক খুঁটির ওপর বিদ্যালয়টির প্রবেশদ্বারে গাছ ভেঙে পড়েছে।
এদিকে বড়বাড়ি ইউনিয়নের আধারদীঘি থেকে হরিণমারী যাওয়ার রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ে চলাচল বন্ধ আছে। কয়েকজনকে গাছ কেটে সরিয়ে রাস্তায় চলাচল স্বাভাবিক করতে দেখা গেছে ।
এদিকে ঘটনার পর থেকে এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বালিয়াডাঙ্গী জোনাল অফিসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম জানান, ঝড়ে ৪০টির বেশি বৈদ্যুতিক খুঁটি উপড়ে ও ভেঙে গেছে। এ ছাড়া অনেক স্থানে বৈদ্যুতিক তারের ওপর গাছ ভেঙে পড়েছে। বালিয়াডাঙ্গী বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি সব এলাকায় বিদ্যুৎ বন্ধ। সকাল থেকে আমাদের লোকজন মাঠে কাজ করছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন সোহেল বলেন, ঝড়ে মরিচ, বোরো ধান, পটোলসহ বিভিন্ন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিসংখ্যান সংগ্রহে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফছানা কাওছার বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান এবং আমাদের লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে কাজ করছে।
এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোতে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।