ঢাকা ০৬:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
কুতুবদিয়া কালী মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মতবিনিময় সভা রাজাপুরে ধানের শীষের পক্ষে গোলাম আজম সৈকতের গণসংযোগ শার্শায় সাংবাদিক মনি’র মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কাউখালি বেকুটিয়ায় বিশ্ব নদী দিবস ২০২৫ইং পালিত শাল্লায় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম’র উপজেলা শাখায় কমিটি গঠন করা হয় বিশ্ব নদী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গ্রীন ভয়েসের মানববন্ধন কুলিয়া চরবালিথা মুনষ্টার তরুণ সংঘের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের সংবর্ধনা উজিরপুরে বিএনপি নেতা বহিষ্কার: ধর্মীয় সম্প্রীতি ভাঙা ও কুকীর্তির গল্প শ্যামনগরে বিশ্ব নদী দিবসে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত পবিপ্রবিতে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন সুযোগ-সুবিধা চালু

বর্নাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে আগৈলঝাড়ায় রথযাত্রা উৎসব পালিত

নিজেস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০:০৩:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪ ১০০ বার পড়া হয়েছে

মোঃ সোহেল রানা,বরিশাল জেলা রিপোর্টার:-
আগৈলঝাড়া উপজেলায় ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা পালিত হয়েছে।এ উপলক্ষে আজ রবিবার সকালে ইসকন পরিচালিত উপজেলা জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনে ভাগবতীয় আলোচনা, সংকীর্ত্তন শেষে দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের জগন্নাথ মন্দির থেকে শ্রী জগন্নাথদেব, বলরাম আর সুভদ্রার প্রতিকৃতি রথে বসিয়ে পুণ্যের আশায় রথ টেনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে বিভিন্ন বয়সী হাজার হাজার নারী-পুরষ ভক্ত কোদালধোয়া শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির পর্যন্ত রথ টেনে নিয়ে যান।আগৈলঝাড়া উপজেলা শহরে রথ যাত্রার বর্নাঢ্য শোভাযাত্রায় ভক্তদের সাথে অংশ গ্রহন করেন আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ, আগৈলঝাড়া উপজেলা কেন্দ্রীয় জগন্নাথ দেব মন্দির পরিচালনা কমিটি (নামহট্ট) সভাপতি ডা. সুকুমার রায়, আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রী, পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দসহ কয়েক বিবিণœ বয়সী হাজার নারী-পুরুষ ভক্ত। অন্যদিকে উপজেলা সদরের ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী থেকে রথ টেনে নিয়ে যায় ভক্তরা। ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী মাঠে জড়ো হয়ে আনন্দ উল্লাস করেন। রথ উপলক্ষে বসেছিল মেলা। এছাড়াও আগৈলঝাড়া উপজেলার বাহাদুরপুর, রথবাড়ি, রামানন্দেরআঁক ও গৈলার প্রসিদ্ধ রথখোলা নামক স্থানে রথযাত্রা উৎসব পালনের খবর পাওয়া গেছে। উল্টো রথ যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুলাই। রথ যাত্রার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জড়ৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মোক্ষ লাভ হয়। জীব রুপে তাকে আর জন্ম গ্রহন করতে হয় না। এই বিশ্বা্স থেকেই রথের উপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমুর্তি স্থাপন করে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পৌরাণিক মতে- রাজা ইন্দ্রদ্যুতি ছিলেন ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অন্যতম ভক্ত। ভগবানের দর্শণ লাভের জন্য অত্যান্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু ভগবানের দর্শণ না পেয়ে অনশন করে প্রাণ বিসর্জনের সংকল্প করেন তিনি। তখন জগন্নাথ দেব তাকে স্বপ্নাদেশে বলেন, “তুমি চিন্তা করিও না, সমুদ্রে ‘বাঙ্কী মোহনা’ নামক স্থানে দারুব্রহ্মরূপে ভাসতে ভাসতে আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত হব।” স্বপ্নাদেশ শুনে রাজা তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে ‘বাঙ্কী মোহনা’ স্থানে গেলেন এবং যথাসময়ে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মাকৃত শ্রী দারুব্রহ্মকে দেখলেন। সেই কাঠখন্ডকে (দারুব্রহ্ম) রাজা অনেক বলবান লোক, হাতি দিয়ে সমুদ্র থেকে তীরে উঠালেন।একটি কক্ষে ২১ দিন এক শিল্পী বিগ্রহ তৈরির কাজ করার সময় ওই কক্ষের দ্বার খোলা যাবে না শর্তে স্বর্গের শিল্পী বিশ্বকর্মা দেব ছদ্মাবেশে জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মাণে সম্মত হলেন। রানী প্রতিদিন নির্মানের শব্দ শুনিতে পেলেও ১৭ দিনে কক্ষ থেকে জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ নির্মাণের কোন আওয়াজ শুনতে না পেয়ে পর অধৈর্য হয়ে রাজাকে বিষয়টি জানালে রাজা রুদ্ধ দ্বার খুলে দেখেন সেখানে পরিপুর্ণ কোন ভাস্কর্য নির্মিত হয়নি। পরে আছে শুধু শ্রী শ্রী জগন্নাথ, শ্রী বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীর অ-সম্পন্ন বিগ্রহ। যে বিগ্রহই রথযাত্রার রথে আজ আমরা দেখে থাকি। এটাও ছিল পূর্ব নিয়তি। অন্যদিকে বৃন্দাবন ত্যাগ করে শ্রী কৃষ্ণ দ্বারকার রাজা হলেন। ব্রজবাসীরা কৃষ্ণ দর্শনে পাগল প্রায়। সূর্য গ্রহণ উপলক্ষে শ্রী কৃষ্ণ, বলরাম, সুভদ্রাসহ দ্বারকার অনেকেই কুরুক্ষেত্রে গিয়েছিলেন। সেখানে ব্রজবাসীরাও ছিলেন, তারা ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে তার বাল্য লীলার স্থান বৃন্দাবনে নিয়ে আসতে চাইলেন। কৃষ্ণ ভক্তরা তাদের প্রাণের সখা শ্রী কৃষ্ণকে রাজবেশে নয়; ব্রজ বেশে দেখে তার সহচর্য্য পেতে উন্মুখ হয়ে পরেন।ব্রজবাসীগণ, কৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথে চড়িয়ে ঘোড়ার পরিবর্তে নিজেরাই রথ টেনে বৃন্দাবনে নিয়ে এলেন। এই লীলাকে স্মরণ করে ভক্তরা আজও পুরির জগন্নাথ মন্দির থেকে বৃন্দাবনে রথ টেনে নিয়ে যান। ৫শ বছর আগে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে সেই রথ যাত্রার প্রচলন আজ অবদি ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যর মধ্যে দিয়ে পালন হয়ে আসছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

বর্নাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে আগৈলঝাড়ায় রথযাত্রা উৎসব পালিত

আপডেট সময় : ১০:০৩:৩৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুলাই ২০২৪

মোঃ সোহেল রানা,বরিশাল জেলা রিপোর্টার:-
আগৈলঝাড়া উপজেলায় ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা আর ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যর মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা পালিত হয়েছে।এ উপলক্ষে আজ রবিবার সকালে ইসকন পরিচালিত উপজেলা জগন্নাথ মন্দির প্রাঙ্গনে ভাগবতীয় আলোচনা, সংকীর্ত্তন শেষে দুপুরে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের জগন্নাথ মন্দির থেকে শ্রী জগন্নাথদেব, বলরাম আর সুভদ্রার প্রতিকৃতি রথে বসিয়ে পুণ্যের আশায় রথ টেনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা সহকারে বিভিন্ন বয়সী হাজার হাজার নারী-পুরষ ভক্ত কোদালধোয়া শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির পর্যন্ত রথ টেনে নিয়ে যান।আগৈলঝাড়া উপজেলা শহরে রথ যাত্রার বর্নাঢ্য শোভাযাত্রায় ভক্তদের সাথে অংশ গ্রহন করেন আগৈলঝাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পুজা উদযাপন কমিটির সভাপতি সুনীল কুমার বাড়ৈ, আগৈলঝাড়া উপজেলা কেন্দ্রীয় জগন্নাথ দেব মন্দির পরিচালনা কমিটি (নামহট্ট) সভাপতি ডা. সুকুমার রায়, আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রী, পরিচালনা কমিটির সদস্যবৃন্দসহ কয়েক বিবিণœ বয়সী হাজার নারী-পুরুষ ভক্ত। অন্যদিকে উপজেলা সদরের ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী থেকে রথ টেনে নিয়ে যায় ভক্তরা। ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী মাঠে জড়ো হয়ে আনন্দ উল্লাস করেন। রথ উপলক্ষে বসেছিল মেলা। এছাড়াও আগৈলঝাড়া উপজেলার বাহাদুরপুর, রথবাড়ি, রামানন্দেরআঁক ও গৈলার প্রসিদ্ধ রথখোলা নামক স্থানে রথযাত্রা উৎসব পালনের খবর পাওয়া গেছে। উল্টো রথ যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুলাই। রথ যাত্রার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জগন্নাথ দেব হলেন জগতের নাথ বা অধীশ্বর। জড়ৎ হচ্ছে বিশ্ব আর নাথ হচ্ছেন ঈশ্বর। তাই জগন্নাথ হচ্ছেন জগতের ঈশ্বর। তার অনুগ্রহ পেলে মানুষের মোক্ষ লাভ হয়। জীব রুপে তাকে আর জন্ম গ্রহন করতে হয় না। এই বিশ্বা্স থেকেই রথের উপর জগন্নাথ দেবের প্রতিমুর্তি স্থাপন করে রথ নিয়ে যাত্রা করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পৌরাণিক মতে- রাজা ইন্দ্রদ্যুতি ছিলেন ভগবান শ্রী কৃষ্ণের অন্যতম ভক্ত। ভগবানের দর্শণ লাভের জন্য অত্যান্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু ভগবানের দর্শণ না পেয়ে অনশন করে প্রাণ বিসর্জনের সংকল্প করেন তিনি। তখন জগন্নাথ দেব তাকে স্বপ্নাদেশে বলেন, “তুমি চিন্তা করিও না, সমুদ্রে ‘বাঙ্কী মোহনা’ নামক স্থানে দারুব্রহ্মরূপে ভাসতে ভাসতে আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত হব।” স্বপ্নাদেশ শুনে রাজা তার সৈন্য সামন্ত নিয়ে ‘বাঙ্কী মোহনা’ স্থানে গেলেন এবং যথাসময়ে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মাকৃত শ্রী দারুব্রহ্মকে দেখলেন। সেই কাঠখন্ডকে (দারুব্রহ্ম) রাজা অনেক বলবান লোক, হাতি দিয়ে সমুদ্র থেকে তীরে উঠালেন।একটি কক্ষে ২১ দিন এক শিল্পী বিগ্রহ তৈরির কাজ করার সময় ওই কক্ষের দ্বার খোলা যাবে না শর্তে স্বর্গের শিল্পী বিশ্বকর্মা দেব ছদ্মাবেশে জগন্নাথ দেবের মূর্তি নির্মাণে সম্মত হলেন। রানী প্রতিদিন নির্মানের শব্দ শুনিতে পেলেও ১৭ দিনে কক্ষ থেকে জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ নির্মাণের কোন আওয়াজ শুনতে না পেয়ে পর অধৈর্য হয়ে রাজাকে বিষয়টি জানালে রাজা রুদ্ধ দ্বার খুলে দেখেন সেখানে পরিপুর্ণ কোন ভাস্কর্য নির্মিত হয়নি। পরে আছে শুধু শ্রী শ্রী জগন্নাথ, শ্রী বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীর অ-সম্পন্ন বিগ্রহ। যে বিগ্রহই রথযাত্রার রথে আজ আমরা দেখে থাকি। এটাও ছিল পূর্ব নিয়তি। অন্যদিকে বৃন্দাবন ত্যাগ করে শ্রী কৃষ্ণ দ্বারকার রাজা হলেন। ব্রজবাসীরা কৃষ্ণ দর্শনে পাগল প্রায়। সূর্য গ্রহণ উপলক্ষে শ্রী কৃষ্ণ, বলরাম, সুভদ্রাসহ দ্বারকার অনেকেই কুরুক্ষেত্রে গিয়েছিলেন। সেখানে ব্রজবাসীরাও ছিলেন, তারা ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে তার বাল্য লীলার স্থান বৃন্দাবনে নিয়ে আসতে চাইলেন। কৃষ্ণ ভক্তরা তাদের প্রাণের সখা শ্রী কৃষ্ণকে রাজবেশে নয়; ব্রজ বেশে দেখে তার সহচর্য্য পেতে উন্মুখ হয়ে পরেন।ব্রজবাসীগণ, কৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথে চড়িয়ে ঘোড়ার পরিবর্তে নিজেরাই রথ টেনে বৃন্দাবনে নিয়ে এলেন। এই লীলাকে স্মরণ করে ভক্তরা আজও পুরির জগন্নাথ মন্দির থেকে বৃন্দাবনে রথ টেনে নিয়ে যান। ৫শ বছর আগে থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে সেই রথ যাত্রার প্রচলন আজ অবদি ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যর মধ্যে দিয়ে পালন হয়ে আসছে।