স্টাফ রিপোর্টার:-
বরিশাল অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ নদীপথ রয়েছে ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত বেশী ঝুঁকিপূর্ণ বলে দাবি লঞ্চ মালিক শ্রমিকদের। নদ-নদী অশান্ত থাকায় এই সময়কে বিপজ্জনক মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এ সময়ে সার্ভে সনদ ছাড়া ছোট একতলা লঞ্চগুলোর চলাচলে অনুমতি মেলে না। কিন্তু বরিশালে মিলেছে ভিন্ন চিত্র। সার্ভে সনদ ছাড়াই চলছে বেশ কয়েকটি একতলা লঞ্চ। বরিশাল নৌবন্দর থেকে আন্ত:জেলা নৌ-রুটগুলোতে প্রতিদিন সহস্রাধিক যাত্রী জেলা-উপজেলা গুলোতে আসা-যাওয়া করে। ৯০ দিনের ওই দুর্যোগপুর্ণ মৌসুমেও নৌ ট্রাফিক ও সার্ভে সনদের শর্তাবলী না মেনে লঞ্চগুলোর মালিকরা বেশ নির্বিঘ্নেই যাত্রী পরিবহন করে চলছে।
এ বিষয়ে বরিশাল সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো: করিম বলেন, বিপদজ্জনক মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ একতলা লঞ্চের সার্ভে সনদ দেয়া হয় না। সার্ভে সনদের জন্য প্রায় ১৫ থেকে ১৬টি শর্তাবলীর প্রয়োগ নিশ্চিত করে সার্ভে সনদ দেয়া হয়। সার্ভে সনদ বরিশাল ও ঢাকা থেকে দেয়া হয়। এরপর সেসব শর্তাবলী পরবর্তীতে লঞ্চ মালিকরা অব্যাহত রাখবে কিনা তা নিশ্চিত করবে নৌবন্দরের ট্রাফিক বিভাগ।
সরোজমিন গিয়ে দেখা যায়, সার্ভে সনদের শর্তাবলী অনুযায়ী প্রতিটি লঞ্চে নাবিক, লাইফ সার্পোট সরঞ্জামাদি ও অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রপাতির পর্যাপ্ত অভাব। গড়মিল রয়েছে লঞ্চগুলোর গভীরতা-প্রস্থেও।
তিনি আরো বলেন, যথাযথ নিয়ম মেনেই সার্ভে সনদ দেয়া হয়। কিন্তু সার্ভে সনদের শর্তাবলী লঞ্চ চলাচলের সময় মানা হয় কিনা তা দেখভাল করার দায়িত্ব নৌবন্দর কর্তৃপক্ষের। শুধু তাই নয়, সার্ভে সনদ থাকলেই লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহনের জন্য সিডিউল পাবে। অপরদিকে নিরাপদ যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আভ্যন্তরীন নৌ চলাচল অধ্যাদেশ ১৯৭৮ এর ৯ অনুযায়ী সার্ভে সনদ প্রাপ্ত হয়ে লঞ্চগুলো যাত্রী পরিবহন করবে। এক্ষেত্রে যাত্রী বহন ক্ষমতা, নৌযান নির্মানকাল ও টনেজ, জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম ও অন্যান্য তথ্যাদি, মাস্টার, নাবিক, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, গভীরতা, ইঞ্জিন, পাম্প, অগ্নি নির্বাপনী ব্যবস্থা, ডকইয়ার্ড, কনজারভেন্সী চার্জ (নদীতে চলাচলের জন্য) সহ শর্তাবলী মেনেই সার্ভে সনদ পেতে হয় মালিকদেরকে। কিন্তু বরিশাল নৌবন্দর থেকে চলাচলরত একতলা লঞ্চগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই, দুর্যোগ মুহুর্তে জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জামাদির স্বল্পতা ও ব্যবহার অনুপযোগী থাকা, প্রয়োজন সংখ্যক নাবিক না থাকা, গভীরতায় গড়মিলসহ ঝুঁকিপুর্ণভাবে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে এই ঝড়ো মৌসুমেও।
সরজমিন গিয়ে আরো জানা গেছে, মিলন এক্সপ্রেস লঞ্চে যাত্রী ধারন ক্ষমতা রয়েছে ১শ ৮০জন। লাইফ বয়া ৫৫টি থাকার নিয়ম থাকলেও নেই অর্ধেকও। যাও রয়েছে তা আবার মানহীন। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র ৩টি থাকার নিয়ম থাকলেও একটি রয়েছে তা অনেক পুরানো। নাবিক ৯ জন থাকার নিয়ম থাকলেও রয়েছে ৩/৪জন।
এনিয়ে লঞ্চটির মাস্টার স্বপন বলেন, যাত্রী যা হয় খারাপ না। কিন্তু মালিক পক্ষ খরচ কমানোর জন্য তেমন কিছু করেনা। আর বর্ষার মৌসুম ছাড়া আমাদের তেমন কোন ঝুঁকি নেই।
তিনি আরো বলেন, যেহেতু আপনারা এসেছেন এখন তাদের কানে পানি যাবে।
মিলন লঞ্চের মালিক ওসমান মিয়ার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে ম্যানেজার মকবুল হোসেন বলেন, আমরা বর্ষা মৌসুমে তেমন যাত্রী পাইনা এছাড়া শুকনা মৌসুমে নদীতে ডুবোচরের কারণে ঠিকমতো চলাচল করতে পারিনা। কিন্তু সার্ভে সনদ অনুযায়ী লঞ্চটির গভীরতা ১.৮৩মিটার থাকলেও তা সরেজমিনে কম রয়েছে।
এ সময় বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমরা এখন যাত্রী সংকটে রয়েছি। এদিকে সাইপ্রাস লঞ্চটির অবস্থা আরো নাজুক যা খোলা চোখেই দেখা যায়। সার্ভে সনদের ১৪/১৫ শর্তাবলীর অর্ধেকও মানা হয়নি লঞ্চটিতে।
এ ব্যাপারে নৌ বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাককে প্রশ্ন করলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
নৌ-নিরাপত্তা ট্রাফিক বিভাগের সহকারি পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, সার্ভে সনদ দেয় নৌ-মন্ত্রনালয় আমরা শুধু দেখভাল করি। সার্ভে সনদের বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, হয়তো সব নিয়মকানুন মানেনা লঞ্চ গুলো তবে সার্ভে সনদ আছে।
সুত্রে জানা গেছে, বরিশাল থেকে ভোলার রুটে কাক ডাকা ভোর থেকে চলাচল করে এম এল মুনির, উপকুল, বিসমিল্লাহ, মুন্নী এক্সপ্রেস, সঞ্চিতা, পারভীন, রাকিন, মেহেন্দিগঞ্জ রুটে চলাচল করে গ্রীন ওয়াটার, সুচনা, আল আফছার, সায়মুন, রাতুল, হিজলা রুটে রয়েছে সোহেলি, আল মদিনা, ইনজাম, বোরহানউদ্দিন রুটে ধানসিঁড়ি, লক্ষীপুর রুটে পারিজাত, জনতা ও বরগুনাসহ বাকেরগঞ্জ রুট মিলিয়ে ত্রিশটি একতলা লঞ্চ চলাচল করে।
এ সব বিষয়ে বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আজিজুল হক আক্কাস বলেন, সার্ভে সনদ দেয়ার সময় সবকিছু দেখেই সনদ দেয়। হয়তো পরবর্তিতে রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, লাইফ সার্পোট সরঞ্জামাদি ও অগ্নি নির্বাপন যন্ত্রপাতির কিছু ঘাটতি রয়েছে। যেগুলোর দাম হাতের নাগালে হলেও ক্রয় করেননা অনেক লঞ্চ মালিক।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রায়হান সুলতান।
যোগাযোগঃ ৭২/৭-৮ মানিকনগর, মুগদা,ঢাকা-১২০৩
মোবাইলঃ +৮৮০৯৬৩৮০৮৯০১৪
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র. All rights reserved.