ফেনী ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা

- আপডেট সময় : ০৩:৫৭:৩৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫ ৬০ বার পড়া হয়েছে

মোহাম্মদ হানিফ,ফেনী জেলা স্টাফ রিপোর্টার: নিজেদের স্থায়ী ক্যাম্পাসসহ একাধিক দাবিতে এবার ফেনী ইউনিভার্সিটি শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সোমবার (১৮ আগস্ট) সকাল থেকে সকল ধরনের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে ইউনিভার্সিটি প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা।
এ সময় ‘মেরুদণ্ডহীন প্রশাসন মানি না, মানবো না‘, ‘ছাত্র আন্দোলন দুর্বার হোক, ভাড়া ক্যাম্পাস শেষ হোক’, ‘স্থায়ী ক্যাম্পাস মানতে হবে, প্রতারণা ভাঙতে হবে’, ‘আজকের সংগ্রাম, আগামী প্রজন্মের অধিকার’, ’শিক্ষা ব্যবসা একসাথে চলে না’সহ নানা স্লোগান দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- স্থায়ী ক্যাম্পাস, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস সার্ভিস চালুকরণ, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, লাইব্রেরিতে প্রয়োজনীয় বই সংযুক্ত করা, মুট কোর্ট রুম, ছাত্র সংসদ গঠন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় জরিমানা বন্ধকরণ ও পর্যাপ্ত শিক্ষক নিয়োগ।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের লক্ষ্যে আমাদের ১৫ দফা দাবি প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করেছি। প্রশাসন শুরুতে আমাদের দাবিগুলোকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে মেনে নিলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি। এর মধ্যে অন্যতম দাবি হলো নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস। স্থায়ী ক্যাম্পাস না হলে ইউজিসি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘রেড লিস্ট’-এ অন্তর্ভুক্ত করতে পারে, আর সে ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।
কাজী আল-আমিন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের উত্থাপিত দাবিগুলো শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এখনো কর্তৃপক্ষ সেই দাবিগুলো পূরণ করতে পারেনি। বারবার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা বাস্তবে রূপ নেয়নি। তাই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করছি।
সৈকত হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, চলমান আন্দোলন হঠাৎ বা অযৌক্তিক নয়। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষার্থীরা বারবার দাবি জানিয়ে আলোচনায় বসেছে, কিন্তু স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অথচ ইউজিসি স্পষ্ট করেছে, এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসবে। এছাড়া ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকলেও ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা হয়েছে, অথচ কর্তৃপক্ষ কোনো কঠোর অবস্থান নেয়নি। উন্নয়ন ফি আদায় করা হলেও দৃশ্যমান কোনো কাজ হয়নি, বরং সেমিস্টার ফি প্রদানে দেরি হলে জরিমানাও চলছে।
ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের জায়গা নিয়ে মামলা চলমান রয়েছে। নতুন যে জায়গাটি কেনা হয়েছে, সেখানে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। শিক্ষার্থীদের বাস সার্ভিস চালুর দাবির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোন রুটে কতজন শিক্ষার্থী যাতায়াত করবে সে বিষয়ে একটি পরিসংখ্যান করতে বলা হয়েছিল। তবে এরপর এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি।
শাটডাউন প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার বলেন, শিক্ষার্থীরা বোর্ড অব ট্রাস্টিজ চেয়ারম্যানকে আসতে বলেছিল। তিনি জানিয়েছেন শুক্রবারে আসবেন। আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছিলাম ততদিন শ্রেণি ও অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে যেতে। কিন্তু তারা শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বছর ১৩ আগস্ট শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে ১৫ দফা দাবি পেশ করেছিল। কর্তৃপক্ষ দাবি মানার আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ২১ অক্টোবর ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে। এতে পুরো ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরবর্তীতে আবারও আশ্বাস দেওয়া হলেও বাস্তবে পরিবর্তন হয়নি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পুনরায় অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করে।