ঢাকা ০৮:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ এপ্রিল ২০২৫, ২৮ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
গাংনীতে বিদেশি পিস্তল গুলি ও ম্যাগজিন সহ আটক-১ কালিগঞ্জে ধর্ষন চেষ্টা মামলার আসামি গৌরপদ মন্ডলকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার কৃষিগুচ্ছ ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় বাকৃবির বিশেষ বাস সার্ভিস এলাকার প্রভাবশালী নেতার কারণে বলি হতে যাচ্ছে নবদম্পতির নতুন জীবন মাদারগঞ্জে ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন বাতিলের দাবীতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল  সাতক্ষীরায় এক নারীকে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ, আদালতের নির্দেশে সদর থানায় মামলা জীবননগর থানাধীন শাহাপুর পুলিশ ক্যাম্প কর্তৃক মাদক বিরোধী অভিযানে ২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার গ্রেফতার-০১জন চাঞ্চল্যকর অপহরণ পলাতক আসামী গ্রেফতার: ভিকটিম উদ্ধার রাণীশংকৈলে বৈরী আবহাওয়ার কারণে শাপলা রানীর পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরী হয়ায় পরীক্ষা দেওয়া হলো না ঝিনাইদহে বিনামূল্যে পাট বীজ ও সার পেলেন ৮’শত কৃষক

ফরিদপুরে বিলাসবহুল টেপাখোলা রিসোর্ট তৈরিতে অর্ধশতাব্দী প্রাচীন ৩১টি গাছের মৃত্যু পরোয়ানা

প্রতিনিধির নাম
  • আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪ ৮০ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার:-

ফরিদপুরের সোহরাওয়ার্দী সরোবর তথা টেপাখোলা লেকপাড়ে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট নামে ব্যয়বহুল এক বিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের জায়গায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তথা এলজিইডি।

আর এ কাজের জন্য কেটে ফেলা হবে সেখানকার দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ! ইতোমধ্যে গাছগুলো কেটে ফেলার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে সেগুলোর গায়ে খোদাই করে চিহ্ন দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে শহরবাসীর মাঝে উঠেছ নানা গুঞ্জন। বিশাল বাজেটের আয়েশী এ প্রকল্প শেষ পর্যন্ত সরকারের গলায় শ্বেতহস্তীর মতো আটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ না পেলে লেকপাড়ের বর্তমানের নিসর্গ পরিবেশটুকুও হারাতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ২১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট’ নামে একনেক বৈঠকে এই প্রকল্পটি পাশ করা হয়। তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একান্ত প্রচেষ্টায় মূলত এ প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে যায়। নকশা অনুযায়ী এই টেপাখোলা রিসোর্টে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, টেপাখোলা রিসোর্ট স্কুল ব্লক, জিমনেসিয়াম, মসজিদ, রিসোর্ট সেন্টার, ভিকটোরি মিউজিয়াম, ভিকটোরি কমপ্লেক্স, ওয়ান্ডার হুইল, ফুড কোড, সিনিয়র সিটিজেন কর্নার, আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট সেন্টার, চিল্ড্রেন ওয়াটার গেইম, চিল্ড্রেন সুইমিংপুল, টেপা ক্যাফে ও হল, অ্যাম্পিথিয়েটার, বোর্ট ল্যান্ডিং ক্যাফে ও বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ার তৈরির কথা। তবে পরে বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ারটি বাদ দিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দ ১৮০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে আজাদ সাহেব আগামী একমাসের মধ্যে এই রিসোর্টের কাজ উদ্বোধন করবেন বলে এলজিইডি ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহিদুজ্জামান খান
জানিয়েছেন।

ফরিদপুর জেলা পরিষদ সুত্রে জানা গেছে, টেপাখোলা লেকটি ১৪ একর জমির উপর অবস্থিত। এ লেকসহ আশেপাশে সবমিলিয়ে ১৮ একর জমির উপর লেকের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২৬ সালেন ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন প্রকল্প পরিচালক। আর একাজে প্রথম পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

এদিকে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সেখানকার দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ বিক্রির জন্য গত ২৮ মার্চ ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় নিলাম করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেপাখোলা লেকের পূর্ব পাড়ে এবং দক্ষিণ পাড়ের সড়কের পাশে অবস্থিত গাছগুলোর বেশিরভাগই মেহগনি গাছ। এর পাশাপাশি, আম, কাঠাল, নারকেল গাছও রয়েছে। গাছগুলির বয়স আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ বছর। এরইমধ্যে সেগুলোর শক্ত বাকল কেটে লাল রঙ দিয়ে সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেকোন সময় সেগুলো কেটে ফেলার কাজ শুরু হবে। এছাড়া গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে লেকের পানি তুলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। তবে এ গাছগুলি কাটার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাসহ শহরবাসীর মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নগরায়নের যুগে শহরবাসীর প্রাতভ্রমন, বৈকালিক হাঁটা এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার একটি বড় স্থান এই লেকপাড়। বর্তমানে প্রচন্ড দাবদাহে প্রতিদিন বিকেলে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সেখানে ছুটে যান শহরসহ আশপাশের অনেক মানুষ। পাশাপাশি সারাবছরই শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে সর্বস্তরের লোকজন ছুটে আসে এই লেকপাড়ে অলস ও অবসর সময় কাটাতে।

টেপাখোলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুর রহমান (৪৮) বলেন, শৈশব থেকেই এই গাছগুলি দেখে আসছি। এখানকার লেকের স্বচ্ছতার সাথে গাছগুলোর ছায়াময় পরিবেশ এক দারুণ নিসর্গের অনুভূতি তৈরি করেছে। একারণে প্রাকৃতিকভাবেই এটি একটি সুন্দর বিনোদন স্পট হিসেবে দাড়িয়ে গেছে। এখন এই গাছগুলো কেটে ফেললে এই পরিবেশটাই বদলে যাবে।

স্বপন মৃধা (৩৮) নামে এক যুবক বলেন, এই গাছগুলোর ছায়ায় আমাদের শৈশব কেটেছে। প্রচন্ড গরমে একটু স্বস্তির আশায় শুধু আমরাই নই, শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একটু স্বস্তির আশায় ছুটে আসেন। এখন শুনছি এখানে বড় প্রকল্প হবে, বড় বড় ভবন হবে। এজন্য গাছগুলি কেটে ফেলা হবে। এ খবর শোনার পরে মনে স্বস্তি পাচ্ছিনা।

টেপাখোলা লেকপাড়ের বাসিন্দা এস এম মনিরুজ্জামান মনির নামে স্থানীয় একজন সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী বলেন, তীব্র গরমে শহরের মানুষ সকালে, দুপুরে এবং সন্ধ্যার পরে এই গাছের তলায় একটু বিশ্রাম নিয়ে থাকে। আমার জানামতে লেকের উন্নয়নে যে নকশা ও ব্যয় বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিলো তা সংকুচিত করা হয়েছে। আর যেহেতু মূল নকশা অনুযায়ী আর কাজটি হচ্ছেনা তাই গাছগুলো রেখেই নতুন করে নকশা করা উচিত। আমরা চাই পরিবেশ রক্ষায় গাছগুলো রক্ষা করা হোক।

একই এলাকার বাসিন্দা সজিব মিয়া (২৩) বলেন, এই গাছগুলো ফরিদপুরের অক্সিজেনের ভান্ডার। এলাকার সব পর্যায়ের মানুষ এ গাছতলার এসে বিশ্রাম নেন, প্রাণ জুড়ান। আমাদের সকলের উদ্যোগে গাছ কাটার এ পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গাছগুলি রাস্তার পাশে এবং লেকের পাড়ে অবস্থিত। আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। তবে আমার মনে হয়েছে গাছগুলি রক্ষা করে এ প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব। গাছগুলি কেটে ফেলার উদ্যোগের কোন যুক্তিসংগত কারণ দেখছি না।

ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুল আলম মিলন বলেন, কোন যুক্তিতেই ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী এ গাছগুলি কেটে ফেলা আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। গাছগুলি রক্ষা অবশ্যই করতে হবে। বড় বড় এ গাছগুলি কেটে ফেললে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এ উদ্যোগ আমরা নাগরিক সমাজ মেনে নিতে পারি না।

ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাকাহীদ হোসেন বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও বড় বড় ওই গাছগুলি রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এগুলি রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়। তিনি বলেন, ওই ৩১টি গাছ কাটা হলেও পাশাপাশি এক হাজার ৭৬২টি গাছ রোপন করা হবে। এটি সরকারি উদ্যোগে একটি দৃষ্টি নন্দন কাজ হবে। এ কাজের স্বার্থে আপাতত এ ক্ষতি আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

ফরিদপুরে বিলাসবহুল টেপাখোলা রিসোর্ট তৈরিতে অর্ধশতাব্দী প্রাচীন ৩১টি গাছের মৃত্যু পরোয়ানা

আপডেট সময় : ০৩:৩৫:৪৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

স্টাফ রিপোর্টার:-

ফরিদপুরের সোহরাওয়ার্দী সরোবর তথা টেপাখোলা লেকপাড়ে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট নামে ব্যয়বহুল এক বিলাসী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জেলা পরিষদের জায়গায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর তথা এলজিইডি।

আর এ কাজের জন্য কেটে ফেলা হবে সেখানকার দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ! ইতোমধ্যে গাছগুলো কেটে ফেলার টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে সেগুলোর গায়ে খোদাই করে চিহ্ন দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ নিয়ে শহরবাসীর মাঝে উঠেছ নানা গুঞ্জন। বিশাল বাজেটের আয়েশী এ প্রকল্প শেষ পর্যন্ত সরকারের গলায় শ্বেতহস্তীর মতো আটকে পূর্ণাঙ্গ রূপ না পেলে লেকপাড়ের বর্তমানের নিসর্গ পরিবেশটুকুও হারাতে হবে বলে মনে করছেন অনেকে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ২১১ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ফরিদপুর টেপাখোলা রিসোর্ট’ নামে একনেক বৈঠকে এই প্রকল্পটি পাশ করা হয়। তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের একান্ত প্রচেষ্টায় মূলত এ প্রকল্পটি একনেকের বৈঠকে যায়। নকশা অনুযায়ী এই টেপাখোলা রিসোর্টে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য, টেপাখোলা রিসোর্ট স্কুল ব্লক, জিমনেসিয়াম, মসজিদ, রিসোর্ট সেন্টার, ভিকটোরি মিউজিয়াম, ভিকটোরি কমপ্লেক্স, ওয়ান্ডার হুইল, ফুড কোড, সিনিয়র সিটিজেন কর্নার, আর্ট এন্ড ক্রাফ্ট সেন্টার, চিল্ড্রেন ওয়াটার গেইম, চিল্ড্রেন সুইমিংপুল, টেপা ক্যাফে ও হল, অ্যাম্পিথিয়েটার, বোর্ট ল্যান্ডিং ক্যাফে ও বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ার তৈরির কথা। তবে পরে বঙ্গবন্ধু ইনডেক্স ফিঙ্গার টাওয়ারটি বাদ দিয়ে প্রকল্পের বরাদ্দ ১৮০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য এ কে আজাদ সাহেব আগামী একমাসের মধ্যে এই রিসোর্টের কাজ উদ্বোধন করবেন বলে এলজিইডি ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহিদুজ্জামান খান
জানিয়েছেন।

ফরিদপুর জেলা পরিষদ সুত্রে জানা গেছে, টেপাখোলা লেকটি ১৪ একর জমির উপর অবস্থিত। এ লেকসহ আশেপাশে সবমিলিয়ে ১৮ একর জমির উপর লেকের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের প্রকল্প নিয়েছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ২০২৬ সালেন ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। তবে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন প্রকল্প পরিচালক। আর একাজে প্রথম পর্যায়ে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

এদিকে, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সেখানকার দীর্ঘদিনের পুরনো ৩১টি গাছ বিক্রির জন্য গত ২৮ মার্চ ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকায় নিলাম করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেপাখোলা লেকের পূর্ব পাড়ে এবং দক্ষিণ পাড়ের সড়কের পাশে অবস্থিত গাছগুলোর বেশিরভাগই মেহগনি গাছ। এর পাশাপাশি, আম, কাঠাল, নারকেল গাছও রয়েছে। গাছগুলির বয়স আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ বছর। এরইমধ্যে সেগুলোর শক্ত বাকল কেটে লাল রঙ দিয়ে সংখ্যা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেকোন সময় সেগুলো কেটে ফেলার কাজ শুরু হবে। এছাড়া গত মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে শ্যালো ইঞ্জিন বসিয়ে লেকের পানি তুলে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। তবে এ গাছগুলি কাটার সিদ্ধান্তে স্থানীয় বাসিন্দাসহ শহরবাসীর মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

নগরায়নের যুগে শহরবাসীর প্রাতভ্রমন, বৈকালিক হাঁটা এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার একটি বড় স্থান এই লেকপাড়। বর্তমানে প্রচন্ড দাবদাহে প্রতিদিন বিকেলে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সেখানে ছুটে যান শহরসহ আশপাশের অনেক মানুষ। পাশাপাশি সারাবছরই শহরের বিভিন্ন মহল্লা থেকে সর্বস্তরের লোকজন ছুটে আসে এই লেকপাড়ে অলস ও অবসর সময় কাটাতে।

টেপাখোলা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদুর রহমান (৪৮) বলেন, শৈশব থেকেই এই গাছগুলি দেখে আসছি। এখানকার লেকের স্বচ্ছতার সাথে গাছগুলোর ছায়াময় পরিবেশ এক দারুণ নিসর্গের অনুভূতি তৈরি করেছে। একারণে প্রাকৃতিকভাবেই এটি একটি সুন্দর বিনোদন স্পট হিসেবে দাড়িয়ে গেছে। এখন এই গাছগুলো কেটে ফেললে এই পরিবেশটাই বদলে যাবে।

স্বপন মৃধা (৩৮) নামে এক যুবক বলেন, এই গাছগুলোর ছায়ায় আমাদের শৈশব কেটেছে। প্রচন্ড গরমে একটু স্বস্তির আশায় শুধু আমরাই নই, শহরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ একটু স্বস্তির আশায় ছুটে আসেন। এখন শুনছি এখানে বড় প্রকল্প হবে, বড় বড় ভবন হবে। এজন্য গাছগুলি কেটে ফেলা হবে। এ খবর শোনার পরে মনে স্বস্তি পাচ্ছিনা।

টেপাখোলা লেকপাড়ের বাসিন্দা এস এম মনিরুজ্জামান মনির নামে স্থানীয় একজন সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী বলেন, তীব্র গরমে শহরের মানুষ সকালে, দুপুরে এবং সন্ধ্যার পরে এই গাছের তলায় একটু বিশ্রাম নিয়ে থাকে। আমার জানামতে লেকের উন্নয়নে যে নকশা ও ব্যয় বরাদ্দ হওয়ার কথা ছিলো তা সংকুচিত করা হয়েছে। আর যেহেতু মূল নকশা অনুযায়ী আর কাজটি হচ্ছেনা তাই গাছগুলো রেখেই নতুন করে নকশা করা উচিত। আমরা চাই পরিবেশ রক্ষায় গাছগুলো রক্ষা করা হোক।

একই এলাকার বাসিন্দা সজিব মিয়া (২৩) বলেন, এই গাছগুলো ফরিদপুরের অক্সিজেনের ভান্ডার। এলাকার সব পর্যায়ের মানুষ এ গাছতলার এসে বিশ্রাম নেন, প্রাণ জুড়ান। আমাদের সকলের উদ্যোগে গাছ কাটার এ পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।

ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সদস্য মনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গাছগুলি রাস্তার পাশে এবং লেকের পাড়ে অবস্থিত। আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আমরা উন্নয়নের বিরোধী নই। তবে আমার মনে হয়েছে গাছগুলি রক্ষা করে এ প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব। গাছগুলি কেটে ফেলার উদ্যোগের কোন যুক্তিসংগত কারণ দেখছি না।

ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাহফুজুল আলম মিলন বলেন, কোন যুক্তিতেই ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী এ গাছগুলি কেটে ফেলা আমাদের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। গাছগুলি রক্ষা অবশ্যই করতে হবে। বড় বড় এ গাছগুলি কেটে ফেললে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে। এ উদ্যোগ আমরা নাগরিক সমাজ মেনে নিতে পারি না।

ফরিদপুর জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বাকাহীদ হোসেন বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবন ও বড় বড় ওই গাছগুলি রক্ষা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এগুলি রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয় বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে আমাদের জানানো হয়। তিনি বলেন, ওই ৩১টি গাছ কাটা হলেও পাশাপাশি এক হাজার ৭৬২টি গাছ রোপন করা হবে। এটি সরকারি উদ্যোগে একটি দৃষ্টি নন্দন কাজ হবে। এ কাজের স্বার্থে আপাতত এ ক্ষতি আমাদের মেনে নিতে হচ্ছে।