বাকৃবি প্রতিনিধি:
প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম পছন্দ না হওয়ায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। সম্প্রতি ওই মেসেজের স্ক্রিনশটগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভাইরাল হওয়া মেসেজে সংবাদের ছবিসহ সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা লিখেছেন, ‘বাকৃবি প্রেসক্লাব থেকে প্রতিনিয়ত সংবাদ টুইস্ট করে প্রকাশ করে প্রশাসনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’
জানা যায়, ২০ মে বাকৃবি প্রেসক্লাব থেকে “আমরা গাছ কাটি, আবার রোপণও করি: বাকৃবি উপাচার্য” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদে বাকৃবি উপাচার্যের বক্তব্যে লেখা হয়েছে, “আমরা গাছ কাটি, আবার গাছ রোপণও করি। যে গাছগুলো পরিপক্ব হয়ে যায়, সেগুলো না কাটলে কখনো কখনো উন্নয়ন কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটে। তখন বাধ্য হয়ে সেগুলো কাটতে হয়। তবে ফলজ, বনজসহ সব ধরনের নতুন গাছও রোপণ করি।”
খবরটি অনলাইনে প্রকাশের পর ওই দিনই সহযোগী ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বলেন, “গাছ কি পূবালী ব্যাংক লাগায়? পূবালী ব্যাংক সহযোগিতা করছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গাছ লাগাবে। তুমি (সাংবাদিক) দেখো তো প্রেসক্লাবে নিউজগুলো কেমনভাবে করছো?”
তিনি সাংবাদিককে ধমক দিয়ে মুঠোফোনে আরও বলেন, “তুমি (সাংবাদিক) এই কথা কীভাবে লিখলে যে এটা ভিসি স্যার বলেছে—আমরা গাছ লাগাই, গাছ কাটি!”
ভাইরাল হওয়া মেসেজে তিনি আরও লিখেছেন, “কিছুদিন আগে ইলিয়াস ভাইয়ের (সহকারী প্রক্টর) ব্যাপারেও তারা বিতর্কিত সংবাদ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে হেয় করেছে। একটি কমিটিও হয়েছে, কিন্তু সেই কমিটির রিপোর্ট কোনো আলোর মুখ দেখেনি।”
এ বিষয়ে গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, গত ৪ মার্চ বাকৃবি প্রেসক্লাব থেকে প্রচারিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) অর্থায়নে পরিচালিত একটি গবেষণায় অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন (সহকারী প্রক্টর) বিশ্ববিদ্যালয়ে মিনি প্রসেসিং প্ল্যান্ট স্থাপনের তথ্য দিলেও ক্যাম্পাসে এমন কোনো প্ল্যান্টের অস্তিত্ব নেই বলে জানা যায়। এই বিষয়ে খবর প্রকাশের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গবেষণা তথ্য জালিয়াতির বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করতে কোনো তদন্ত কমিটি গঠন না করে সংবাদ প্রকাশের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তদন্ত কমিটি গঠন করে।
এদিকে ভাইরাল হওয়া মেসেজে সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন লিখেছেন, “আমার চাকরি কাল ও ছাত্রজীবন নিয়ে কেউ কোনো খারাপ কথা বলতে পারবে না। কিন্তু প্রশাসনের কাজ করতে গিয়ে সম্মানহানি ও হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি বাকৃবি প্রেসক্লাব দ্বারা। আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটি সত্য উদঘাটন করে পিছনের গডফাদারদের শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। না হলে আমার পরে সোনালী দল, এরপর বর্তমান প্রশাসন, তারপরে আপনি এর শিকার হবেন। সিদ্ধান্ত আপনাদের!!!”
এই বিষয়ে ওই ক্যাম্পাস সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখি শুধু গাছ কাটা হয়, কিন্তু গাছ লাগানোর ব্যাপারে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। সেখানে আমাদের সম্মানিত উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। গাছ কেন কাটা হয়, সেটি ব্যাখ্যা করেছেন। প্রয়োজনে গাছ কাটলেও তিনি তাঁর দায়িত্ববোধ থেকে আবার গাছ লাগানোর ব্যবস্থা করেছেন। আমি এই বিষয়টিই উপস্থাপন করেছি।”
বিষয়গুলো নিয়ে বাকৃবির সহযোগী ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'আমরা এত কষ্ট করতেছি, কিন্তু এর বিনিময়ে যদি ক্রেডিট না পাই তাহলে খারাপ লাগে। তোমরা (সাংবাদিক) শুধু পূবালী ব্যাংকের ক্রেডিট দিলা, বিশ্ববিদ্যালয় অনুমতি না দিলে পূবালী ব্যাংক কিভাবে এই প্রোগ্রাম করতো। টুইস্টেড বলতে আমি অন্য কিছু বুঝাইনি, বুঝিয়েছি প্রশাসনকে যে অ্যাভয়েড করা হয়েছে সেটিকে বুঝিয়েছি।'
অধ্যাপক ইলিয়াসের পক্ষ নিয়ে মেসেজ দেয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে অধ্যাপক সাইফুল্লাহ বলেন, 'এ বিষয়ে তোমার সাথে সামনাসামনি পরে কথা বলবো।'
বাকৃবি প্রেসক্লাবের সদস্যরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এভাবে চললে সাংবাদিকরা তাঁদের দায়িত্ব পালনে বাধাগ্রস্ত হতে পারেন। বিশেষ করে মত প্রকাশে যে স্বাধীনতা যা সাংবাদিকতার অন্যতম মূল ভিত্তি, তা নিয়েই এখন প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁরা আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের পেশাগত স্বাধীনতা এবং সংবাদমাধ্যমের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ করতে পারে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রায়হান সুলতান।
যোগাযোগঃ ৭২/৭-৮ মানিকনগর, মুগদা,ঢাকা-১২০৩
মোবাইলঃ +৮৮০৯৬৩৮০৮৯০১৪
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র. All rights reserved.