নির্বাচনের ক্যালেন্ডার হাতে নেই জাতিসংঘের—গণতন্ত্রের ঘড়ি টিকবে মানুষের কণ্ঠে

- আপডেট সময় : ১২:৪১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫ ৩৭ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক:-গালিব খাঁন কুড়িগ্রাম জেলা:-
রোদ উঠে আবার মিলিয়ে যায়। সূর্য কি বলে কবে উঠবে, কবে অস্ত যাবে? না। সে চলে নিজস্ব নিয়মে। ঠিক তেমনই—একটি রাষ্ট্রের ভবিষ্যতও নির্ধারিত হয় তার জনগণের ইচ্ছায়, রাজনীতির গতিপথে, আর সময়ের অনিবার্য আহ্বানে। জাতিসংঘ তা-ই মনে করিয়ে দিল বাংলাদেশকে।
ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, “নির্বাচনের তারিখ জাতিসংঘ ঠিক করবে না। সেটি ঠিক করবে বাংলাদেশের জনগণ এবং তাদের রাজনৈতিক শক্তিগুলো।” তাঁর কণ্ঠ ছিল না কোনো হস্তক্ষেপের—ছিল এক নিঃশব্দ নিরপেক্ষতার স্পষ্ট প্রতিধ্বনি।
এই বক্তব্য যেন হাওয়ার মতো, কিন্তু ভারী—চোখে দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব হয়। কারণ, এ কথার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো: আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যদি জেগে থাকে নিরীক্ষকের ভূমিকায়, তবু মূল নাটকের নির্দেশক হিসেবে তারা মঞ্চে নামবে না। গণতন্ত্রের রিহার্সালে সহায়ক হতে পারে তারা, তবে কাহিনির মোড় ঘোরানো কিংবা শেষ দৃশ্য লেখার ক্ষমতা একমাত্র মানুষের।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন নানা দলীয় মতভেদ, অবিশ্বাস আর অভিযোগের পালা চলছে, তখন জাতিসংঘের এই বক্তব্য যেন এক বাস্তব বোধের প্রতিধ্বনি। আন্তর্জাতিক চাপ নয়, স্থানীয় চেতনা—সেটিই গণতন্ত্রের মূল চালিকা।
এই বক্তব্য শুধু একখানা সংবাদ নয়, বরং একখানা চাবি—যা খুলে দেয় রাষ্ট্রব্যবস্থার আত্মার দরজা। যেখান থেকে বেরিয়ে আসে প্রশ্ন—তবে কি আমরা প্রস্তুত? রাজনীতি কি প্রস্তুত সহাবস্থানের জন্য? জনগণ কি প্রস্তুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য, নিজেদের ভোটে ভবিষ্যৎ গড়ার জন্য?
রাজনীতি যদি হয় একটি নদী, তবে জনগণ তার দিকনির্দেশক স্রোত। জাতিসংঘ কেবল পারে কূলে দাঁড়িয়ে বাতাসের পূর্বাভাস দিতে। কিন্তু নৌকা কোন দিকে যাবে—তা ঠিক করবে বৈঠার চালনা, আর বৈঠা যাদের হাতে, তারা হলেন আমরা, এই দেশের নাগরিকেরা।
গোয়েন লুইসের কথা তাই একটি কূটনৈতিক বিবৃতি নয় কেবল। এটি যেন একটি আয়নার মতো—যেখানে আমরা দেখতে পারি আমাদের নিজেদের অবস্থান, আমাদের প্রস্তুতি, আর আমাদের ভবিষ্যতের রূপরেখা। সেই আয়নায় মুখ দেখেই প্রশ্ন আসে—আচ্ছা, আমরা কি সত্যিই প্রস্তুত?
রাজনীতি যখন উত্তপ্ত, রাস্তায় যখন দ্বন্দ্ব আর প্রেসবিজ্ঞপ্তির ছায়ায় যখন জনমতের চাপা কোলাহল, তখন এই কথাগুলো সাহস জোগায়। কারণ, এতে লুকিয়ে আছে এক অনুচ্চারিত আহ্বান—”তোমরাই নির্ধারণ করো তোমাদের সময়।” আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র, আর স্বাধীনতার অর্থ কেবল পতাকা নয়, নির্ভরযোগ্য একটি নির্বাচনও বটে।
তাই, ২০২৫ সালের এই গ্রীষ্মে যখন পরিবেশ দিবস পালিত হচ্ছে, তখন গণতন্ত্রের পরিবেশ ঠিক রাখার দায়িত্বও যেন অর্পিত হলো আমাদেরই কাঁধে। জাতিসংঘ কেবল বলল—”আমরা দেখছি।” কিন্তু দেখানোর দায় আমাদের।
সত্যি তো, সময়টা কারো জন্য থেমে থাকে না। ঠিক যেমন গণতন্ত্রও কারো জন্য অপেক্ষা করে না। গণতন্ত্র আসে না কারো বিদেশি আমন্ত্রণপত্রে—সে আসে জনগণের ডাকেই। আর সেই ডাক যদি জোরালো হয়, তবে সময় তার আপন গতিতেই ঠিক চলে আসে। তারিখও আসে, নির্বাচনও।
পরিশেষে বলা যায়,
গোয়েন লুইসের কথায় যেটি উঠে এসেছে, তা হলো—এখনও সময় আছে আত্মসংলাপের, সহমতের, এবং সব পক্ষকে নিয়ে সমঝোতার। বাংলাদেশে নির্বাচন কবে হবে, তা লিখে রাখার দায় আন্তর্জাতিক কোনো ক্যালেন্ডারে নয়। সেটি লিখে রাখবে সময়। আর সময় শুনবে জনগণের কণ্ঠস্বর।
তথ্যসূত্র
1. ‘নির্বাচন কবে হবে সিদ্ধান্ত নেবে বাংলাদেশের জনগণ: গোয়েন লুইস’, একাত্তর অনলাইন, ৪ জুন ২০২৫
2. ‘আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস’, NTV Online, ৫ জুন ২০২৫