ঢাকা ০৭:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ভোমরা স্থলবন্দর প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা হাবিবুর রহমানকে ক্রেস প্রদান সাতক্ষীরায় শহীদ আসিবের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ ও কবর জিয়ারত করে শিবির উঁকি দিচ্ছে ধানের শীষ স্বপ্ন দেখছেন হরিপুরের আমন চাষীরা মানিকগঞ্জে অবৈধ দোকানে দখলদারিত্ব: জনদুর্ভোগ চরমে গাজীপুরে অটো গাড়ি চুরি, স্থানীয়দের সহায়তায় উদ্ধার জামালপুরে মব সৃষ্টি করে সাংবাদিকের উপর হামলা, হাসপাতালে ভর্তি স্ত্রী কন্যাকে ফিরে পেলেন স্বামী দীপংকর সোনাগাজী উপজেলা পরিষদে ও ফুলগাজী উপজেলা পরিষদের জামায়াতের প্রার্থীতা ঘোষণা ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার রাউজানে বাবার ২৯৫তম আর্ভির্ভাব উৎসব উপলক্ষে বিশ্বশান্তি গীতাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত

দুই থেকে ৩ ঘন্টা ঘুরলেই দেখা যাবে বরিশালের ৮ টি নদীর সৌন্দর্য

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ১০:০৮:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫ ১২৩ বার পড়া হয়েছে

মো:আশরাফ, নিজস্ব প্রতিনিধি :-

‘ধান নদী খাল—এই তিনে মিলে বরিশাল’, এটি পুরোনো কথা। বৃহত্তর বরিশাল ঘিরে আছে বহু নদী। বরিশাল থেকে নদীপথে আড়াই ঘণ্টা ভোলার দিকে গেলে আট নদীর দেখা মেলে। কাজকর্ম সেরে, অনেকটা দৌড়ে ঘাটে গিয়ে টিকিট কাটলাম। এমভি বিউটি অব ইমা এক্সপ্রেস লঞ্চে উঠে পড়লাম। উদ্দেশ্য, বরিশাল থেকে ভোলা যাব। পেটে প্রচণ্ড খিদে, তাই লঞ্চের ভাতের হোটেলে খেয়ে নিলাম। লঞ্চ ছাড়ল বেলা দেড়টায়। দোতলার পেছনে গিয়ে দেখি, মাথার ওপর মস্ত নীল আকাশ।চারদিকে কীর্তনখোলা নদী। সবুজ দিয়ে ঘিরে রেখেছে প্রকৃতি। ১৮০১ সালের আগে এ নদীকে বরিশাল নদী, সুগন্ধা নদী নামে ডাকা হতো। বরিশালের শায়েস্তাবাদ থেকে শুরু, ঝালকাঠির নলছিটির কাছে শেষ। প্রাচীন পদ্মার ধারা থেকে কীর্তনখোলার উৎপত্তি।প্রায় আড়াই কিলোমিটার চলার পর লঞ্চটি ডানে বুখাইনগর নদীতে বাঁক নেয়। এ নদীর বাঁ পাশে চরমোনাই আর ডান পাশে কাউয়ার চর। দুই পাশে সবুজ আর সবুজ। বর্ষায় ভিজে যেন আরও সতেজ হয়েছে। হোগলাবন, বাদাম, রেইনট্রি, তাল, তমাল, শিরীষ, কলাখেত, ধঞ্চেখেত, পাটখেত, পানের বরজ, মাছের খামার, আমড়াবাগান। খেজুরগাছে রঙিন খেজুর। ভাঙনমুখী বাড়িঘর, দালানকোঠাগুলো যেন আরও নদীর কাছে চলে এসেছে। একসময়ের জলাভূমি দিন দিন চাষাবাদী জমি আর জনবসতিতে পরিণত হচ্ছে। বেড়েছে খেয়া পারাপারের ঘাটের সংখ্যা। চরমোনাই থেকে লাহারহাট বুখাইনগর নদীর এই ১২ কিলোমিটার লঞ্চ চলে একটু ধীরে। শীতে এ নদীতে প্রায়ই লঞ্চ আটকে গেলেও এখন ভরা বরষায় কূল ছাপিয়ে পানি থই থই করছে।বুখাইনগর আর বিঘাই নদের মিলনস্থলে লাহারহাট লঞ্চঘাট। এইচ বেভারেজ তাঁর ‘ডিস্ট্রিক্ট অব বাকেরগঞ্জ’ বইয়ে লিখেছেন, ‘বরিশাল নদী বিঘাই নদীর অব্যাহত রূপ।’ নদীকোষে আছে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ ও বরগুনার আমতলীর গুলিশাখালী হয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে প্রবাহিত। লাহারহাটের পাশ দিয়ে বিঘাই কালাবদর, তেঁতুলিয়া ও গণেশপুরা নদ–নদীর সঙ্গে মিশেছে।লাহারহাট ঘাটে লঞ্চ নোঙর করে আবার ভোলার উদ্দেশে ছাড়লে দেখা যায়, বুখাইনগরের পূর্ব তীরে বিঘাই নদের ডান দিকে উত্তরে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল। তার তীরজুড়ে শতাধিক জেলে নৌকা নোঙর করা। নৌকায় তাঁরা দুপুরের রান্নায় ব্যস্ত। জেলে নৌকা ছুটে চলছে এ নদী থেকে আরেক নদী, এখানে অনেক নদীর মিলনস্থল। নদীর তীরজুড়ে শত শত মহিষের পাল আর জলচর পাখি।আমাদের লঞ্চ এগিয়ে যাচ্ছে শ্রীপুরের দিকে, শ্রীপুরের পর ভেদুরিয়া ফেরিঘাট, তারপর ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট। ভেদুরিয়ার পর ভোলা খেয়াঘাট। একসময় খেয়াঘাট থেকে লঞ্চ ভোলা শহরে যেত কাশীশ্বর ব্রিজ পর্যন্ত। এখন যাত্রীরা সময় বাঁচাতে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটে নেমে যান। গাড়ি দিয়ে ভোলা শহরে নামেন। একেকটি ঘাটের সঙ্গে একটি নদী। শ্রীপুর থেকে ভেদুরিয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলবে তেঁতুলিয়া নদীর জলের ওপর। খেয়াঘাট যেতে জাঙ্গালিয়া নদী। ভোলা শহরে যেতে এক সময়ের বেতুয়া নদী, যা আজ ‘ভোলা খালে’ পরিণত হয়েছে। ভোলা শহরে গাড়ি দিয়ে গেলেও এ নদী দুটির ওপর গড়া সেতুর ওপর উঠতে হবে। ভোলা-বরিশাল নৌপথে শুধু নদী আর নদী।লাহারহাট লঞ্চঘাট থেকে শ্রীপুর লঞ্চঘাটের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। আর ভেদুরিয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই ৬ কিলোমিটারের মধ্যে বিঘাই নদের সঙ্গে মিশেছে একসময়ে খরস্রোতা নদী কালাবদর, গণেশপুরা আর তেঁতুলিয়া নদ–নদী; অর্থাৎ এখানেই চারটি নদ–নদীর মিলনস্থল।সূর্য পশ্চিমে হেলতে শুরু করেছে। নদীর পানির ওপর সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। যাত্রীবাহী লঞ্চ, স্পিডবোট আর ফেরি চলাচলে নৌপথ এখন ব্যস্ত। এর মধ্যে আছে জেলে নৌকা। নৌপথ ব্যস্ত হওয়ার কারণে প্রায় জেলেদের জাল কাটা পড়ে নৌযানের পাখায়। তবু তাঁরা মাছ শিকার করেন, স্পিডবোট আর লঞ্চযাত্রীদের কাছে টাটকা মাছ বিক্রি করেন।মেঘনা নদীর নিম্নাংশের একটি ধারা তেঁতুলিয়া নদী। ভোলার উত্তরে মেঘনা নদী থেকে ভোলার পশ্চিম দিক, বরিশালের-পটুয়াখালীর পূর্ব দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রংগোপালদিতে বুড়াগৌরাঙ্গ নামে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। এ নদ বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর বহু রাজা-প্রজা, জমিদারের রাজ্য ভেঙে ধ্বংস করেছে বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। এসব রাজার জমিদারি ভেঙে আবার শূন্যতে জেগে উঠছে। সেখানে আবাদ হচ্ছে তরমুজ, ক্যাপসিকাম আর সবজি। চরে মহিষ,গরু। শীত এলে কোনো কোনো চরে পরিযায়ী পাখির মেলা বসে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

দুই থেকে ৩ ঘন্টা ঘুরলেই দেখা যাবে বরিশালের ৮ টি নদীর সৌন্দর্য

আপডেট সময় : ১০:০৮:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

মো:আশরাফ, নিজস্ব প্রতিনিধি :-

‘ধান নদী খাল—এই তিনে মিলে বরিশাল’, এটি পুরোনো কথা। বৃহত্তর বরিশাল ঘিরে আছে বহু নদী। বরিশাল থেকে নদীপথে আড়াই ঘণ্টা ভোলার দিকে গেলে আট নদীর দেখা মেলে। কাজকর্ম সেরে, অনেকটা দৌড়ে ঘাটে গিয়ে টিকিট কাটলাম। এমভি বিউটি অব ইমা এক্সপ্রেস লঞ্চে উঠে পড়লাম। উদ্দেশ্য, বরিশাল থেকে ভোলা যাব। পেটে প্রচণ্ড খিদে, তাই লঞ্চের ভাতের হোটেলে খেয়ে নিলাম। লঞ্চ ছাড়ল বেলা দেড়টায়। দোতলার পেছনে গিয়ে দেখি, মাথার ওপর মস্ত নীল আকাশ।চারদিকে কীর্তনখোলা নদী। সবুজ দিয়ে ঘিরে রেখেছে প্রকৃতি। ১৮০১ সালের আগে এ নদীকে বরিশাল নদী, সুগন্ধা নদী নামে ডাকা হতো। বরিশালের শায়েস্তাবাদ থেকে শুরু, ঝালকাঠির নলছিটির কাছে শেষ। প্রাচীন পদ্মার ধারা থেকে কীর্তনখোলার উৎপত্তি।প্রায় আড়াই কিলোমিটার চলার পর লঞ্চটি ডানে বুখাইনগর নদীতে বাঁক নেয়। এ নদীর বাঁ পাশে চরমোনাই আর ডান পাশে কাউয়ার চর। দুই পাশে সবুজ আর সবুজ। বর্ষায় ভিজে যেন আরও সতেজ হয়েছে। হোগলাবন, বাদাম, রেইনট্রি, তাল, তমাল, শিরীষ, কলাখেত, ধঞ্চেখেত, পাটখেত, পানের বরজ, মাছের খামার, আমড়াবাগান। খেজুরগাছে রঙিন খেজুর। ভাঙনমুখী বাড়িঘর, দালানকোঠাগুলো যেন আরও নদীর কাছে চলে এসেছে। একসময়ের জলাভূমি দিন দিন চাষাবাদী জমি আর জনবসতিতে পরিণত হচ্ছে। বেড়েছে খেয়া পারাপারের ঘাটের সংখ্যা। চরমোনাই থেকে লাহারহাট বুখাইনগর নদীর এই ১২ কিলোমিটার লঞ্চ চলে একটু ধীরে। শীতে এ নদীতে প্রায়ই লঞ্চ আটকে গেলেও এখন ভরা বরষায় কূল ছাপিয়ে পানি থই থই করছে।বুখাইনগর আর বিঘাই নদের মিলনস্থলে লাহারহাট লঞ্চঘাট। এইচ বেভারেজ তাঁর ‘ডিস্ট্রিক্ট অব বাকেরগঞ্জ’ বইয়ে লিখেছেন, ‘বরিশাল নদী বিঘাই নদীর অব্যাহত রূপ।’ নদীকোষে আছে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ ও বরগুনার আমতলীর গুলিশাখালী হয়ে দক্ষিণমুখী হয়ে প্রবাহিত। লাহারহাটের পাশ দিয়ে বিঘাই কালাবদর, তেঁতুলিয়া ও গণেশপুরা নদ–নদীর সঙ্গে মিশেছে।লাহারহাট ঘাটে লঞ্চ নোঙর করে আবার ভোলার উদ্দেশে ছাড়লে দেখা যায়, বুখাইনগরের পূর্ব তীরে বিঘাই নদের ডান দিকে উত্তরে বিস্তৃর্ণ চরাঞ্চল। তার তীরজুড়ে শতাধিক জেলে নৌকা নোঙর করা। নৌকায় তাঁরা দুপুরের রান্নায় ব্যস্ত। জেলে নৌকা ছুটে চলছে এ নদী থেকে আরেক নদী, এখানে অনেক নদীর মিলনস্থল। নদীর তীরজুড়ে শত শত মহিষের পাল আর জলচর পাখি।আমাদের লঞ্চ এগিয়ে যাচ্ছে শ্রীপুরের দিকে, শ্রীপুরের পর ভেদুরিয়া ফেরিঘাট, তারপর ভেদুরিয়া লঞ্চঘাট। ভেদুরিয়ার পর ভোলা খেয়াঘাট। একসময় খেয়াঘাট থেকে লঞ্চ ভোলা শহরে যেত কাশীশ্বর ব্রিজ পর্যন্ত। এখন যাত্রীরা সময় বাঁচাতে ভেদুরিয়া লঞ্চঘাটে নেমে যান। গাড়ি দিয়ে ভোলা শহরে নামেন। একেকটি ঘাটের সঙ্গে একটি নদী। শ্রীপুর থেকে ভেদুরিয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলবে তেঁতুলিয়া নদীর জলের ওপর। খেয়াঘাট যেতে জাঙ্গালিয়া নদী। ভোলা শহরে যেতে এক সময়ের বেতুয়া নদী, যা আজ ‘ভোলা খালে’ পরিণত হয়েছে। ভোলা শহরে গাড়ি দিয়ে গেলেও এ নদী দুটির ওপর গড়া সেতুর ওপর উঠতে হবে। ভোলা-বরিশাল নৌপথে শুধু নদী আর নদী।লাহারহাট লঞ্চঘাট থেকে শ্রীপুর লঞ্চঘাটের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। আর ভেদুরিয়া পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার। এই ৬ কিলোমিটারের মধ্যে বিঘাই নদের সঙ্গে মিশেছে একসময়ে খরস্রোতা নদী কালাবদর, গণেশপুরা আর তেঁতুলিয়া নদ–নদী; অর্থাৎ এখানেই চারটি নদ–নদীর মিলনস্থল।সূর্য পশ্চিমে হেলতে শুরু করেছে। নদীর পানির ওপর সূর্যের আলো পড়ে চিকচিক করছে। যাত্রীবাহী লঞ্চ, স্পিডবোট আর ফেরি চলাচলে নৌপথ এখন ব্যস্ত। এর মধ্যে আছে জেলে নৌকা। নৌপথ ব্যস্ত হওয়ার কারণে প্রায় জেলেদের জাল কাটা পড়ে নৌযানের পাখায়। তবু তাঁরা মাছ শিকার করেন, স্পিডবোট আর লঞ্চযাত্রীদের কাছে টাটকা মাছ বিক্রি করেন।মেঘনা নদীর নিম্নাংশের একটি ধারা তেঁতুলিয়া নদী। ভোলার উত্তরে মেঘনা নদী থেকে ভোলার পশ্চিম দিক, বরিশালের-পটুয়াখালীর পূর্ব দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার রংগোপালদিতে বুড়াগৌরাঙ্গ নামে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ৮৪ কিলোমিটার। এ নদ বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর বহু রাজা-প্রজা, জমিদারের রাজ্য ভেঙে ধ্বংস করেছে বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। এসব রাজার জমিদারি ভেঙে আবার শূন্যতে জেগে উঠছে। সেখানে আবাদ হচ্ছে তরমুজ, ক্যাপসিকাম আর সবজি। চরে মহিষ,গরু। শীত এলে কোনো কোনো চরে পরিযায়ী পাখির মেলা বসে।