
রাসেল হোসেন,ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
ঝিনাইদহ-হরিনাকুন্ডু-২ আসন ঘিরে বিএনপির তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মাঝে নানা জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ২৩৭টি আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ-২ আসনে কোন প্রার্থীর নাম ঘোষণা না করায় তৃণমূলে নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। গুঞ্জন উঠেছে, যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে এ আসনটি ছাড় দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। যদি এ আসনটি ছাড় দেয়া হয় তাহলে ঝিনাইদহ-২ আসনে নানা সংকট তৈরী হবে। শুধু এই আসনের ক্ষতি নয় বরং জেলার সব কয়টি আসনে অস্তিত্বের সংকট তৈরী হতে পারে।
৩ নভেম্বর আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রার্থীদের নামের তালিকা প্রকাশ করার পর ঝিনাইদহে চায়ের দোকান, অফিস আদালত, রাস্তা, ঘাটে ব্যপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে।
তৃণমূলের নেতা কর্মীরা বলছেন, এই আসন মানেই এম. এ. মজিদের আসন। তিনি এ আসনে ধানের শীষের প্রতিক। আমরা তার নেতৃত্বে মামলা-হামলা সহ্য করে আন্দোলন করেছি। একজন ত্যাগী নেতাকে দলীয় মনোনয়ন না দিলে রাজনৈতিক ভাবে নেতাকর্মীদের মানসিক শক্তি হারিয়ে যায়। ত্যাগ ও আন্দোলনের মূল্যই যদি না থাকে, তাহলে রাজনীতি কাদের জন্য?”
ঝিনাইদহ-২ আসনে নির্বাচনী এলাকার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও পৌর এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের মুখে একটায় কথা এম.এ মজিদকে মনোনয়ন না দিলে আমরা মাঠে থাকবো না।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যদি ঝিনাইদহ সদর আসন ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে নেতাকর্মীদের মাঝে হতাশা ও মনোবল ভেঙে পড়বে। যারা বছরের পর বছর হামলা, মামলা,কারাবরণ সহ্য করে দল টিকিয়ে রেখেছে তাদের যদি মূল্যায়ন না করা হয় তাহলে দল করা বৃথা। এতে ভবিষ্যতে কেউ আর মাঠে থাকতে আগ্রহী হবে না। যুগপৎ আন্দোলনের শরীকদল গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানকে যদি মনোনয়ন দেয়া হয় তাহলে তার পক্ষে প্রচার চালাতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা তৃনমুলে ভোটারদের প্রতিরোধের মুখে পড়বে। এক্ষেত্রে অনেকে নিরব ভূমিকা পালন করবে। বিএনপির জনপ্রিয় নেতা এম. এ মজিদ কে বাদ দিয়ে অপরিচিত মুখ আনলে ভোটারদের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। এক্ষেত্রে বিএনপি রাজনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিরোধী দল সুবিধা পাবে।
বিএনপির অভ্যন্তরীণ এ সংকটে আওয়ামীলীগ, জামায়াত, স্বতন্ত্র বা ক্ষমতাসীন দল সুবিধা পাবে। জোট শরিকের মনোনয়নকে ইস্যু বানিয়ে একটা দলের প্রচারে নামবে তারা। এছাড়া আন্দোলনভিত্তিক ঐক্যের ভিত্তি দুর্বল হবে অর্থাৎ যুগপৎ আন্দোলনের নামে যদি বিএনপি মাঠের বাস্তবতা উপেক্ষা করে "অসহযোগিতামূলক স্যাকরিফাইস" করে তাহলে জেলার অন্য আসনে এর প্রভাব পড়বে।
সাম্প্রতিক জরিপ ও স্থানীয় গণমাধ্যম বিশ্লেষণে দেখা গেছে ঝিনাইদহ-২-আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে এম. মজিদ খুবই জনপ্রিয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বলেন, “তারেক রহমান যদি সত্যিকার অর্থে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন, তাহলে ঝিনাইদহ-২ আসনে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এম. এ মজিদকে চূড়ান্ত করবেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এটায় দাবী।
ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি এস এম সমিনুজ্জামান সমিন বলেন, ‘এটি শুধু মনোনয়ন নয়, এটি দলের অস্তিত্বের লড়াই। “আমরা এম. এ. মজিদ ভাইয়ের হাত ধরে রাজপথে লাঠি খেয়েছি, গুলি খেয়েছি, মামলা,হামলার স্বীকার হয়েছি। আজ যারা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখানে এসে ছবি তুলছে, তারা আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে হাঁটছে। তিনি আরও বলেন, যদি ত্যাগীর বদলে তল্পিবাহককে মনোনয়ন দেওয়া হয়, তাহলে আমরা নেতাকর্মী নয়, দলের চাকর হয়ে থাকবো। আমরা তা হব না।
দলের একাধিক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, এ মুহূর্তে এম. এ মজিদের বিকল্প নেই। যদি রাশেদ খানকে টিকিট দেওয়া হয় তাহলে দলীয় অফিস তালাবদ্ধ থাকবে। সভা-সমাবেশে নেতাকর্মী থাকবে না। দলের মধ্যে ভাঙ্গন শুরু হবে। ভোট নিষ্ক্রিয়তা ও নির্বাচনে ভরাডুবি হবে। তারা আরও বলেন, “রাশেদ খানের নির্বাচনী এলাকায় কোন পরিচিতি নেই। শুধু কেন্দ্রীয় যোগাযোগ দিয়ে মনোনয়ন অর্জন করা গেলে তা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হবে।”
ঝিনাইদহ-২ আসন এখন একটি আসন নয়, এটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের জন্য ত্যাগ বনাম তল্পিবাহকতা, নেতৃত্ব বনাম নিযুক্তি, ভবিষ্যৎ বনাম বিভ্রান্তির টেস্ট কেস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে ভুল সিদ্ধান্ত মানে শুধু একটি আসন হারানো নয়, বরং তৃণমূলের মনোবল চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। আমাদের নেতা চাই, বসন্তের কোকিল নয়। বিএনপির কর্মী ও সমর্থকরা এখন সামাজিক মাধ্যমেও সক্রিয়। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়ছে পোস্টার, ভিডিও, ব্যানার—যার মূলসুর, “আমাদের ত্যাগের ফসল যেন বাইরের কেউ কেটে নিয়ে না যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রায়হান সুলতান।
যোগাযোগঃ ৭২/৭-৮ মানিকনগর, মুগদা,ঢাকা-১২০৩
মোবাইলঃ +৮৮০৯৬৩৮০৮৯০১৪
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র. All rights reserved.