ঢাকা ০৫:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
ফেনী সদর উপজেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে শহীদ জিয়া আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে সংসার চালাতে নিরাপত্তাকর্মীর চাকুরি করছেন জাতীয়দলের নাসুমের বাবা সারা বাংলা মামার বরিশালটা আমার,নতুন বাংলাদেশে সেই গডফাদারদের কোনো স্থান নেই:গাজী কামরুল ইসলাম সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দর প্রেসক্লাবে ঈদুল মিলাদুন্নবী পালিত হয় বিশ্বের সেরা জুলুসে জনস্রোতে চট্টগ্রাম পৌনে ১কোটি জনতার রেকর্ড শ্যামনগরে ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জশনে জুলুস অনুষ্ঠিত রাণীশংকৈলে কৃষকদলের সভাপতি বহিষ্কৃত কৃষক দলের নেতার বিরুদ্ধে থানায়  জিডি  সোনাগাজীতে প্রবাসী পরিবারের উপর হামলা ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ঝিনাইদহে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির ১১ তম জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠিত নীলফামারীতে স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত

ঝালকাঠির দুর্ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া গতি ও সড়ক অবকাঠামো

নিজেস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ৯১ বার পড়া হয়েছে

আশরাফ উদ্দিন বরিশাল বিভাগীয় প্রতিনিধি:-

ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকের চাপায় ১৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে চালকের লাইসেন্স ও ট্রাকের ফিটনেস না থাকা, ওভারটেকিং করা, সড়কে অবৈধ যান চলাচল, সড়কের অবকাঠামোয় ত্রুটি, ট্রাক ওভারলোড থাকা, অতিরিক্ত গতি এবং গতিরোধের জন্য নির্দেশনা না থাকাকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল ঝালকাঠির পঞ্চম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় সিমেন্টবোঝাই ওই ট্রাক সামনে থাকা একটি মিনি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার ও দুটি ইজিবাইককে চাপা দেয়। এতে গাড়িগুলো দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় গাড়ির যাত্রী-পথচারীসহ ১৪ জন নিহত হন। আহত হন ১৭ জন।দুর্ঘটনাটির সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়।দুর্ঘটনাটির কারণ জানতে জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটিতে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরোজকে প্রধান করা হয় এবং সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিতুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঝালকাঠি জোনের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাহবুবুর রহমান ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হককে সদস্য করা হয়।

তদন্ত কমিটির সদস্য ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, সেতু থেকে নামার পর গতিরোধের জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

যেই নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে সেটি টোলপ্লাজার একেবারেই কাছাকাছি। পাশাপাশি গাবখান সেতু এলাকায় আঁকাবাঁকা সড়ক বা স্পাইরাল কার্ভ বেশি থাকায় অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে সেটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

‘আমি অনেক সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত করেছি। কিছু বিষয় ছাড়া সড়কের অবকাঠামো ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই আমরা চালককে দোষারোপ করি। কিন্তু সড়কের অবকাঠামো ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনে না কেউ।

দুর্ঘটনা কমাতে হলে শুধু সড়কের উন্নয়ন করলেই হবে না, অবকাঠামো ত্রুটি দূর করতে হবে’, বলেন তিনি।৫০ কিমি গতিসীমায় ট্রাকটি চলছিল ৬৫ কিমি বেগেড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রধানতম কারণ হিসেবে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের ওভারলোড এবং অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করা হয়েছে।

ট্রাকটির ধারণক্ষমতা ১৫ টন হলেও সিমেন্টের পরিমাণ ছিল ২০ টন। সড়কটিতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার হলেও ট্রাকটি ৬৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলছিল।এছাড়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তিনি ছিলেন বদলি ড্রাইভার।

মূল চালক ঈদের ছুটিতে ছিলেন। সাধারণত বদলি চালকদের দ্রুততম সময়ে ট্রিপ শেষ করার তাগাদা থাকে। তাই এ দুর্ঘটনায় চালকের গাফিলতিও রয়েছে।এআরআইয়ের এ সহকারী অধ্যাপক বলেন, যে কোনো টোলপ্লাজা ও সড়ক জংশনের ৫০০ মিটার আগে গতি কমানোর নির্দেশনা থাকে। ‘সামনে টোলপ্লাজা, গতি কমান’-এ ধরনের সাইনবোর্ড থাকে। কিন্তু গাবখান সেতুর ১৩০ ফুট আগে সেই নির্দেশনা ছিল। সে নির্দেশিকাও (সাইনবোর্ড) চোখে পড়ার মতো নয়।

টোলপ্লাজায় গতি নিয়ন্ত্রণে ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও সেখানে তা ছিল না। কাজেই এত অল্প দূরত্বের সাইনবোর্ড দেখে চালক গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। আর সেতু থেকে নামার পর স্বভাবতই গাড়ির গতি বেশি থাকে, যার ফলে এ দুর্ঘটনা।

তিনি বলেন, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের সড়কে কিছু দূর পরপর ভয়াবহ বাঁক রয়েছে। গাবখান সেতুটিও স্পাইরাল কার্ভের মতো। সেখানে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও তা নেই। সেতু থেকে নামার পরে সড়কের দু’পাশে ১২ ফুট করে গভীর খাদ রয়েছে।

নিয়মানুযায়ী সেখানে প্রতিবন্ধক থাকার কথা থাকলেও এর দেখা মেলেনি। সড়কের দু’পাশে ১০ মিটার ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন থাকার কথা। কোনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তা সড়কের পাশে থেকে সেই ক্লিয়ারিং জোনে চলে যাবে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার মূল সড়কে এসে চলবে।ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, ঝালকাঠির ওই সড়কের পাশে ক্লিয়ারিং জোন দূরে থাক, নানা অবকাঠামো গড়ে উঠেছে।

গাবখানে যে অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার খুব কাছে ছিল চায়ের দোকান। ট্রাক আরেকটু এগিয়ে গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। এছাড়া নিয়মানুযায়ী সড়কের প্রশস্ত অংশে টোলপ্লাজা হওয়ার কথা। কিন্তু সড়কের সরু অংশে টোলপ্লাজা করা হয়েছে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি সেতু এলাকায় মূল সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক ছিল।

ওই সড়কে থ্রি-হুইলার, নছিমন-করিমন, অটোরিকশাসহ নানা অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহনের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব বাহনের চালকরা হুট করে আঞ্চলিক মহাসড়কে চলে আসেন।

ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব যানবাহনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। এতে দুর্ঘটনা ঘটলে অধিক প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।তদন্ত কমিটির সুপারিশতদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে—সড়কের যেসব অংশে দু’পাশে গভীর খাদ রয়েছে সেখানে ভরাট করতে হবে; আঞ্চলিক সড়কগুলোর দু’পাশে ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন তৈরি করতে হবে; পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাংশ (স্পিড ওয়ার্নিং ডিভাইস) বসাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।এছাড়া সিমেন্টবোঝাই ট্রাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সিমেন্ট পরিবহনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।

সুপারিশমালায় সড়কে থ্রি-হুইলার বা অনিবন্ধিত যানবাহন চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এগুলো চলাচল বন্ধের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, গাবখান সেতু এলাকায় মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি প্রবলেম ছিল।

এখানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) পাশাপাশি বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জনবল সংকট রয়েছে, কিন্তু যে জনবল রয়েছে তাদের দক্ষতাও কম। সড়ক আইন কার্যকরের বিষয়টি পুলিশের ওপরও বর্তায়। গাবখানে হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিড রাডারগান ছিল না।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

ঝালকাঠির দুর্ঘটনায় দায়ী বেপরোয়া গতি ও সড়ক অবকাঠামো

আপডেট সময় : ০৯:৪৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪

আশরাফ উদ্দিন বরিশাল বিভাগীয় প্রতিনিধি:-

ঝালকাঠির গাবখান সেতুর টোল প্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারানো ট্রাকের চাপায় ১৪ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

প্রতিবেদনে চালকের লাইসেন্স ও ট্রাকের ফিটনেস না থাকা, ওভারটেকিং করা, সড়কে অবৈধ যান চলাচল, সড়কের অবকাঠামোয় ত্রুটি, ট্রাক ওভারলোড থাকা, অতিরিক্ত গতি এবং গতিরোধের জন্য নির্দেশনা না থাকাকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

গত ১৭ এপ্রিল ঝালকাঠির পঞ্চম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী গাবখান সেতুর টোলপ্লাজায় সিমেন্টবোঝাই ওই ট্রাক সামনে থাকা একটি মিনি ট্রাক, একটি প্রাইভেটকার ও দুটি ইজিবাইককে চাপা দেয়। এতে গাড়িগুলো দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

দুর্ঘটনায় গাড়ির যাত্রী-পথচারীসহ ১৪ জন নিহত হন। আহত হন ১৭ জন।দুর্ঘটনাটির সিসিটিভি ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় হয়।দুর্ঘটনাটির কারণ জানতে জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুটি আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

জেলা প্রশাসনের গঠিত কমিটিতে ঝালকাঠির অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরোজকে প্রধান করা হয় এবং সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিতুল ইসলাম, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ঝালকাঠি জোনের সহকারী পরিচালক (প্রকৌশল) মো. মাহবুবুর রহমান ও বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) সহকারী অধ্যাপক ড. আরমানা সাবিহা হককে সদস্য করা হয়।

তদন্ত কমিটির সদস্য ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, সেতু থেকে নামার পর গতিরোধের জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

যেই নির্দেশনাটি দেওয়া হয়েছে সেটি টোলপ্লাজার একেবারেই কাছাকাছি। পাশাপাশি গাবখান সেতু এলাকায় আঁকাবাঁকা সড়ক বা স্পাইরাল কার্ভ বেশি থাকায় অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা হিসেবে সেটিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

‘আমি অনেক সড়ক দুর্ঘটনার তদন্ত করেছি। কিছু বিষয় ছাড়া সড়কের অবকাঠামো ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া দুর্ঘটনা ঘটলে প্রথমেই আমরা চালককে দোষারোপ করি। কিন্তু সড়কের অবকাঠামো ত্রুটির বিষয়টি সামনে আনে না কেউ।

দুর্ঘটনা কমাতে হলে শুধু সড়কের উন্নয়ন করলেই হবে না, অবকাঠামো ত্রুটি দূর করতে হবে’, বলেন তিনি।৫০ কিমি গতিসীমায় ট্রাকটি চলছিল ৬৫ কিমি বেগেড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে প্রধানতম কারণ হিসেবে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের ওভারলোড এবং অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করা হয়েছে।

ট্রাকটির ধারণক্ষমতা ১৫ টন হলেও সিমেন্টের পরিমাণ ছিল ২০ টন। সড়কটিতে সর্বোচ্চ গতিসীমা ৫০ কিলোমিটার হলেও ট্রাকটি ৬৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে চলছিল।এছাড়া ট্রাকচালকের ভারী যান চালানোর লাইসেন্স ছিল না। তিনি ছিলেন বদলি ড্রাইভার।

মূল চালক ঈদের ছুটিতে ছিলেন। সাধারণত বদলি চালকদের দ্রুততম সময়ে ট্রিপ শেষ করার তাগাদা থাকে। তাই এ দুর্ঘটনায় চালকের গাফিলতিও রয়েছে।এআরআইয়ের এ সহকারী অধ্যাপক বলেন, যে কোনো টোলপ্লাজা ও সড়ক জংশনের ৫০০ মিটার আগে গতি কমানোর নির্দেশনা থাকে। ‘সামনে টোলপ্লাজা, গতি কমান’-এ ধরনের সাইনবোর্ড থাকে। কিন্তু গাবখান সেতুর ১৩০ ফুট আগে সেই নির্দেশনা ছিল। সে নির্দেশিকাও (সাইনবোর্ড) চোখে পড়ার মতো নয়।

টোলপ্লাজায় গতি নিয়ন্ত্রণে ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও সেখানে তা ছিল না। কাজেই এত অল্প দূরত্বের সাইনবোর্ড দেখে চালক গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি। আর সেতু থেকে নামার পর স্বভাবতই গাড়ির গতি বেশি থাকে, যার ফলে এ দুর্ঘটনা।

তিনি বলেন, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের সড়কে কিছু দূর পরপর ভয়াবহ বাঁক রয়েছে। গাবখান সেতুটিও স্পাইরাল কার্ভের মতো। সেখানে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ‘রাম্বল স্ট্রিপস’ থাকার কথা থাকলেও তা নেই। সেতু থেকে নামার পরে সড়কের দু’পাশে ১২ ফুট করে গভীর খাদ রয়েছে।

নিয়মানুযায়ী সেখানে প্রতিবন্ধক থাকার কথা থাকলেও এর দেখা মেলেনি। সড়কের দু’পাশে ১০ মিটার ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন থাকার কথা। কোনো গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে তা সড়কের পাশে থেকে সেই ক্লিয়ারিং জোনে চলে যাবে। সেখান থেকে গাড়ি নিয়ন্ত্রণে এলে আবার মূল সড়কে এসে চলবে।ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, ঝালকাঠির ওই সড়কের পাশে ক্লিয়ারিং জোন দূরে থাক, নানা অবকাঠামো গড়ে উঠেছে।

গাবখানে যে অংশে দুর্ঘটনা ঘটেছিল, তার খুব কাছে ছিল চায়ের দোকান। ট্রাক আরেকটু এগিয়ে গেলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারতো। এছাড়া নিয়মানুযায়ী সড়কের প্রশস্ত অংশে টোলপ্লাজা হওয়ার কথা। কিন্তু সড়কের সরু অংশে টোলপ্লাজা করা হয়েছে। এটি ঝুঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি সেতু এলাকায় মূল সড়কের পাশে বেশ কয়েকটি সংযোগ সড়ক ছিল।

ওই সড়কে থ্রি-হুইলার, নছিমন-করিমন, অটোরিকশাসহ নানা অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এসব যানবাহনের কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই। এসব বাহনের চালকরা হুট করে আঞ্চলিক মহাসড়কে চলে আসেন।

ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। এসব যানবাহনে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হয়। এতে দুর্ঘটনা ঘটলে অধিক প্রাণহানি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।তদন্ত কমিটির সুপারিশতদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে—সড়কের যেসব অংশে দু’পাশে গভীর খাদ রয়েছে সেখানে ভরাট করতে হবে; আঞ্চলিক সড়কগুলোর দু’পাশে ট্রাভার্সাল ক্লিয়ারিং জোন তৈরি করতে হবে; পাশাপাশি যাত্রী ও পণ্যবাহী পরিবহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্রাংশ (স্পিড ওয়ার্নিং ডিভাইস) বসাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।এছাড়া সিমেন্টবোঝাই ট্রাকে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত সিমেন্ট পরিবহনের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে।

সুপারিশমালায় সড়কে থ্রি-হুইলার বা অনিবন্ধিত যানবাহন চলাচলকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে এগুলো চলাচল বন্ধের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।ড. আরমানা সাবিহা হক বলেন, গাবখান সেতু এলাকায় মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি প্রবলেম ছিল।

এখানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) পাশাপাশি বিআরটিএ, হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তাদের জনবল সংকট রয়েছে, কিন্তু যে জনবল রয়েছে তাদের দক্ষতাও কম। সড়ক আইন কার্যকরের বিষয়টি পুলিশের ওপরও বর্তায়। গাবখানে হাইওয়ে পুলিশের কাছে স্পিড রাডারগান ছিল না।