
তৌফিকুর রহমান তাহের,দিরাই শাল্লা প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ৪ নং শাল্লা ইউনিয়নের গ্রাম শাল্লায় বয়ে যাওয়া কালনী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে এক চরম মানবিক বিপর্যয় ও অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহের তীব্র ভাঙনে নদীর তীরবর্তী ঐতিহ্যবাহী এই গ্রামটি এখন চরম ঝুঁকিতে। ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি পরিবার তাদের বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে এবং গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কা এমনটাই বলছেন স্হানীয়লোকজন।
তথ্যমতে, ভাঙনের তীব্রতায় গ্রামের নৌকা ঘাট সম্পূর্ণরূপে ভেঙে গেছে এবং বহু মানুষের ভিটা জমি, এমনকি শাল্লা মাদ্রাসা পুকুর পর্যন্ত নদীর স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ১০টি পরিবারের সদস্যরা সব হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে বা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয়দের প্রধান আশঙ্কা হলো, যে দ্রুত গতিতে নদী ভাঙছে, তাতে আর কিছুদিন এভাবে চললে গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা শাল্লা মাদ্রাসা এবং এলাকার বহু মানুষের জীবন-জীবিকার কেন্দ্র শাল্লা বাজারটিও নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।
শাল্লা গ্রামের একজন উদ্বিগ্ন বাসিন্দা বলেন, নদী আমাদের সব নিয়ে গেল! মাদ্রাসা পুকুরও ভেঙে গেছে। যেভাবে ভাঙছে, তাতে আমাদের বাজার আর মাদ্রাসাটাও রক্ষা করা কঠিন হবে। আমরা রাতে ঘুমাতে পারি না, কখন আমাদের ঘরটাও ভেঙে যায় সেই ভয়ে আছি।”
ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ, দীর্ঘদিনের এই ভাঙন রোধে কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় পরিস্থিতি আজ এমন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
শাল্লা উপজেলা যুব বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি তারেক মিয়া বলেন, নদী ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে গ্রাম শাল্লা, বাজার, কালনী নদীর ব্রিজ সহ ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
শাল্লা গ্রামের বাসিন্দা তাফছির আলম চৌধুরী জানান, ভাঙন এখন গ্রাম শাল্লা বাজারের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। এর আগেও কালনী নদীর ভাঙনে শাল্লার বিভিন্ন গ্রামের সরকারি স্কুল, রাস্তাঘাট, এমনকি অন্যান্য বাজারও বিলীন হয়েছে।
বাজার মসজিদের ইমাম আশরাফুল ইসলাম জানান”মেইন নদীর পাড় বর্তমান ভাঙনের প্রায় ২৫০ ফুট ভেতরে ছিল। এই ২৫০ ফুটের ভিতরে অনেক পরিবার ছিল। নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন মাদ্রাসা পুকুরে চলে আসছে।” তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে ভাঙন রোধ করা না গেলে শাল্লা গ্রামের জনবসতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
শাল্লা বাজার কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য জহির আহমেদ বলেন, দ্রুত জিও ব্যাগ (Geo Bag) বা ব্লক ফেলে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ এবং ভিটেমাটি হারানো পরিবারগুলোর জন্য জরুরী পুনর্বাসন ও আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, ৪নং শাল্লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস ছাত্তার মিয়া মনে করেন, ভারত থেকে নেমে আসা বালু মিশ্রিত পানি সুরমা নদীর অংশ কালনীতে বালুর স্তর ফেলায় নদীর ধারণ ক্ষমতা কমে গেছে। তিনি বলেন, স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী খনন করা অপরিহার্য এবং জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন আটকানোর চেষ্টা সরকারি টাকার অপচয় মাত্র।
শাল্লা উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও ওবায়দুল হক দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি নদী ভাঙনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। নদী পরিদর্শন করে দ্রুত ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করব।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রায়হান সুলতান।
যোগাযোগঃ ৭২/৭-৮ মানিকনগর, মুগদা,ঢাকা-১২০৩
মোবাইলঃ +৮৮০৯৬৩৮০৮৯০১৪
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র. All rights reserved.