ঢাকা ১০:১১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
দুর্নীতি ও অনলাইন জুয়ায় আসক্ত শ্যামনগর থানার কনস্টেবল সানি নির্বাচনে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে ঘুষ বাণিজ্য: কালিগঞ্জ থানার কনস্টেবল মাহমুদুল হাসানের বিকাশ নাম্বারে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ রাণীশংকৈলে বিএনপি ৪৭ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত বকশীগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সাবেক নৌ সদস্যের মৃত্যু বকশীগঞ্জ নদীর ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন নবাগত উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ জহুরুল হোসেন শ্যামনগরে জেলা প্রশাসকের নানাবিধ উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন চুয়াডাঙ্গায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের দুই প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে পুলিশের মাসিক পরিদর্শন সোনাগাজীতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা

এমন কায়দা করে খুন করবো সবাই জানবে তুই আত্মহত্যা করেছিস’—স্ত্রীকে ইবি শিক্ষক

নিজেস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ১০:০২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪ ৮৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া
অপরাধ: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. সঞ্জয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক গ্রহণ ও হত্যার হুমকির অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী জয়া সাহা। মঙ্গলবার (৪ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি। পরে উপাচার্য, উপ—উপাচার্য, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার দপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে শিক্ষক জড়িত থাকলে অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে এমন আচরণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উচিত যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।’

জয়া সাহা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। তিনি নাটোরের উপরবাজার উপজেলার রতন কুমার সাহার বড় মেয়ে।

শিক্ষক সঞ্জয় কুমার পাবনার চড়াডাঙ্গা গ্রামের সুশান্ত কুমার সাহার ছেলে। ২০১৫ সালে পারিবারিকভাবে সঞ্জয় ও জয়ার বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের সাড়ে চার বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জয়া সাহা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে সে কথায়, কাজে, আচরণে আমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমার জীবনে ভয়াবহ অমানুষিক, পাশবিক, শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। স্যান্ডেল, বেল্ট, ঝাঁটা, হাতা, খুন্তি, বেলনা থেকে শুরু করে হাতের কাছে যখন যা পেতো তা দিয়েই আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতো। মাঝে মধ্যেই মারতে মারতে বলতো, ‘তুই বাপের বাড়ি যাস না কেন? বাঁচতে চাইলে বাপের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আয়।’

অনেক সময় মারতে মারতে অসুস্থ হয়ে পড়লে গাড়ি ভাড়া করে বাবার বাড়ি নাটোরে রেখে আসতো। সে আমাকে সব সময় মেরে ফেলার হুমকি দিতো। বলতো, ‘তাকে আমি একদিন মেরেই ফেলবো। এমন কায়দা করে খুন করবো সবাই জানবে তুই আত্মহত্যা করেছিস। খুন করেছি জানলেও আমার কিচ্ছু হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সন্তানের সামনেই আমাকে নির্যাতন করতো। ছেলেকেও গালমন্দ ও বিভিন্ন সময় মারধর করে। স্যান্ডেল খুলেও মারে, এমনকি গায়ে গরম চা পর্যন্ত ছুড়ে শাস্তি দেয়। আমার সাড়ে চার বছর বয়সী সন্তানের ওপরও নির্দয় আচরণ করে। সবশেষ ২০২৩ সালের ২৪ জুন সঞ্জয় আমাকে বাবার বাড়ি নাটোরে পাঠানোর জন্য বেধড়ক নির্যাতন শুরু করে। বলে, ‘আজ নাটোর যেতে রাজি না হলে তোকে মারতে মারতে মেরেই ফেলবো। আমি রাজি না হলে সূর্যকে (সন্তান) মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমাকে এবং ছেলেকে আমার বাবার বাড়ি নাটোরে রেখে যায়।’

এসব ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন জয়া সাহা। তিনি বলেন, ‘সঞ্জয় দীর্ঘদিন আমাকে না নিয়ে গেলে আমি নিজে এবং আমার বাবা-মা সঞ্জয়সহ তার বাবা মা ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সে সাফ জানিয়ে দেয় যে, এই মুহূর্তে তার ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। সে চাইতো বেশি বেশি নির্যাতনের ফলে আমি বাবার বাড়ি চলে যাই। টাকা দিলে আমাদের নিয়ে যাবে, টাকা না দিলে নেবে না। পরে এ নিয়ে আমি আদালতে একটি মামলা করি।’

সঞ্জয় সরকার টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তার স্ত্রী জয়া সাহা। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ও তার পরিবারের অন্যদের কাছে জেনেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। সঞ্জয় সরকারের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়াটা তার গ্রামে ‘ওপেন সিক্রেট’। আমি আমার ওপর হওয়া অমানুষিক নির্যাতনের বিচার চাই।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, ‘এটি আমার পারিবারিক বিষয়। এ নিয়ে আদালতে একটি মোকদ্দমাও চলছে। সংসারে অনেক ত্রুটি—বিচ্যুতি থাকে। কিন্তু আমার দরজা আমার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য সবসময় খোলা আছে। আমি এর থেকে বেশি মন্তব্য করতে চাই না।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে আজ সেটা দেখা হয়নি। আমরা আগামী কার্যদিবসে অভিযোগ দেখে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

এমন কায়দা করে খুন করবো সবাই জানবে তুই আত্মহত্যা করেছিস’—স্ত্রীকে ইবি শিক্ষক

আপডেট সময় : ১০:০২:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ জুন ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া
অপরাধ: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি ড. সঞ্জয় কুমার সরকারের বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক গ্রহণ ও হত্যার হুমকির অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী জয়া সাহা। মঙ্গলবার (৪ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি। পরে উপাচার্য, উপ—উপাচার্য, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রার দপ্তরসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন।

বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। শিক্ষার্থীদের দাবি, ‘ওই ঘটনার সঙ্গে শিক্ষক জড়িত থাকলে অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের কাছে এমন আচরণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর ভুক্তভোগী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উচিত যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া।’

জয়া সাহা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করেছেন। তিনি নাটোরের উপরবাজার উপজেলার রতন কুমার সাহার বড় মেয়ে।

শিক্ষক সঞ্জয় কুমার পাবনার চড়াডাঙ্গা গ্রামের সুশান্ত কুমার সাহার ছেলে। ২০১৫ সালে পারিবারিকভাবে সঞ্জয় ও জয়ার বিয়ে হয়। বর্তমানে তাদের সাড়ে চার বছর বয়সী একটি ছেলে রয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে জয়া সাহা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকে সে কথায়, কাজে, আচরণে আমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর আমার জীবনে ভয়াবহ অমানুষিক, পাশবিক, শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। স্যান্ডেল, বেল্ট, ঝাঁটা, হাতা, খুন্তি, বেলনা থেকে শুরু করে হাতের কাছে যখন যা পেতো তা দিয়েই আমাকে শারীরিক নির্যাতন করতো। মাঝে মধ্যেই মারতে মারতে বলতো, ‘তুই বাপের বাড়ি যাস না কেন? বাঁচতে চাইলে বাপের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আয়।’

অনেক সময় মারতে মারতে অসুস্থ হয়ে পড়লে গাড়ি ভাড়া করে বাবার বাড়ি নাটোরে রেখে আসতো। সে আমাকে সব সময় মেরে ফেলার হুমকি দিতো। বলতো, ‘তাকে আমি একদিন মেরেই ফেলবো। এমন কায়দা করে খুন করবো সবাই জানবে তুই আত্মহত্যা করেছিস। খুন করেছি জানলেও আমার কিচ্ছু হবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘সন্তানের সামনেই আমাকে নির্যাতন করতো। ছেলেকেও গালমন্দ ও বিভিন্ন সময় মারধর করে। স্যান্ডেল খুলেও মারে, এমনকি গায়ে গরম চা পর্যন্ত ছুড়ে শাস্তি দেয়। আমার সাড়ে চার বছর বয়সী সন্তানের ওপরও নির্দয় আচরণ করে। সবশেষ ২০২৩ সালের ২৪ জুন সঞ্জয় আমাকে বাবার বাড়ি নাটোরে পাঠানোর জন্য বেধড়ক নির্যাতন শুরু করে। বলে, ‘আজ নাটোর যেতে রাজি না হলে তোকে মারতে মারতে মেরেই ফেলবো। আমি রাজি না হলে সূর্যকে (সন্তান) মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমাকে এবং ছেলেকে আমার বাবার বাড়ি নাটোরে রেখে যায়।’

এসব ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন জয়া সাহা। তিনি বলেন, ‘সঞ্জয় দীর্ঘদিন আমাকে না নিয়ে গেলে আমি নিজে এবং আমার বাবা-মা সঞ্জয়সহ তার বাবা মা ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে সে সাফ জানিয়ে দেয় যে, এই মুহূর্তে তার ১০ লাখ টাকা প্রয়োজন। সে চাইতো বেশি বেশি নির্যাতনের ফলে আমি বাবার বাড়ি চলে যাই। টাকা দিলে আমাদের নিয়ে যাবে, টাকা না দিলে নেবে না। পরে এ নিয়ে আমি আদালতে একটি মামলা করি।’

সঞ্জয় সরকার টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তার স্ত্রী জয়া সাহা। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ও তার পরিবারের অন্যদের কাছে জেনেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পেতে অনেক টাকা খরচ করতে হয়েছে। সঞ্জয় সরকারের টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়াটা তার গ্রামে ‘ওপেন সিক্রেট’। আমি আমার ওপর হওয়া অমানুষিক নির্যাতনের বিচার চাই।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক ড. সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, ‘এটি আমার পারিবারিক বিষয়। এ নিয়ে আদালতে একটি মোকদ্দমাও চলছে। সংসারে অনেক ত্রুটি—বিচ্যুতি থাকে। কিন্তু আমার দরজা আমার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য সবসময় খোলা আছে। আমি এর থেকে বেশি মন্তব্য করতে চাই না।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘একটি অভিযোগ পেয়েছি। তবে আজ সেটা দেখা হয়নি। আমরা আগামী কার্যদিবসে অভিযোগ দেখে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবো।