ঢাকা ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম ঢাকাস্থ সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত রূপগঞ্জে অপহরণের ৭ ঘণ্টার মধ্যে চেয়ারম্যানকে উদ্ধার, এক অপহরণকারী গ্রেপ্তার কুতুবদিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাতা বার্ষিকী পালিত শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন পূরণে ৬৩ বছর পরে এগিয়ে এলো পবিপ্রবির একাডেমিক কাউন্সিল শাল্লায় বিএনপির ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভা বিএনপির ৪৭ বছরের গৌরবগাথা স্মরণে দুমকীতে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন জীবননগরে ৬৬৮ বোতল ফেনসিডিলসহ দুজন গ্রেপ্তার সখিপুর ইউনিয়নে টিআর, কাবিখা, ও ইটের সলিংয়সহ কাজ শতভাগ সম্পন্ন আগৈলঝাড়ায় ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানে ২টি প্রতিষ্ঠানে জরিমানা ফেনী প্রবাসী ফোরামের নব গঠিত কমিটির অভিষেক ও মিলন মেলা অনুষ্ঠিত

একজন পুলিশ অফিসারের বাবাকে নিয়ে তার বোনের অব্যক্ত কথা

নিজেস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০১:৫২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪ ১৭৪ বার পড়া হয়েছে

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ

সংবাদটি মোঃ রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রাজবাড়ী,(পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে সংগ্রহকৃত।

ছবিতে যাকে দেখছেন উনি আমার আব্বা। ছোটবেলা থেকেই আমি বাবা-মা থেকে দুরে নানাবাড়ীতেই আমার বেড়ে ওঠা। ক্লাস টু তে ভর্তি হয়েছিলাম নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন থেকেই আমার মা-বাবা বলতে আমি নানিকেই বুঝতাম। আব্বা আর আম্মা মাঝেমধ্যে আমাকে দেখতে আসতেন। আমাদের গ্রামের বাড়িতে ভাল স্কুল ছিলনা, পাড়া প্রতিবেশি আমার বয়সীদের পড়ালেখায় তেমন আগ্রহ নাই দেখে আমার আম্মা আমাকে দুরে নানিবাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। নানিবাড়িতে আমার এক ডজন মামাতো ভাইবোনদের সাথেই আমার বেড়ে ওঠা শুরু হল। নানি আমাকে অনেক আদর করতেন বলেই হয়ত ছোট বেলায় কিছুটা বেয়াড়া ছিলাম। গাছে গাছে চড়ে বেড়াতাম। আমার আগে কোন পাখির পক্ষে পাকা ফল খাওয়া সম্ভব হতনা। আব্বা তখন হাল চাষ করতেন, মানুষের জমিতে কাজ করতেন। অনেক খাটুনির কাজ। আর আমি নানাবাড়িতে টুকটাক কৃষিকাজে সহায়তা করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতাম। ক্লাস ওয়ানে পড়াকালীন একদিন আম্মা পড়ার জন্য আব্বার কাছে বিচার দিয়েছিল। মনে আছে সেদিন আব্বা আমার মাথা চৌকির নিচে ঢুকিয়ে পেছনে এমন মাইর দিয়েছিল আমি আজও ভুলতে পারিনি। পড়ালেখা নিয়ে মাইর সেই শেষ। আমার জীবনে আর কোনদিন পড়ার জন্য মাইর বা বকা খেতে হয়নি। উল্টা কেন এত সময় ধরে পড়ি তার জন্য অনেকেই টিটকারি মারত। আসলেই ছোটবেলায় আমি মুখস্থ করতে পারতাম কম, তাই অনেক সময় ধরে পড়তে হত। নানাবাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলে অনেকেই আসত আনন্দ করতে, আর আমি চুপচাপ বসে বসে পড়তাম। দেখা গেছে জোরে মাইকে গান বাজছে আর আমি পাশের রুমে বসে অংক করছি। আমার আব্বা কখনো স্কুলে গিয়েছিল কিনা জিজ্ঞেস করা হয়নি, কিন্তু উনি উনার ছেলে মেয়েদের পড়ালেখায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আমার মনে আছে আমি যখন এসএসসিতে খুব ভাল রেজাল্ট করলাম তখন আব্বা-আম্মা খুব খুশি হয়েছিলেন। আমি তখন নটরডেমে ভর্তির স্বপ্ন দেখলাম। আব্বা তখন সাভার ক্যান্টনমেন্টে সবজি সাপ্লাইয়ের কাজ দেখাশোনা করত। আব্বাকে আমার ইচ্ছার কথা বলার সাথে সাথে আব্বা আমাকে নিয়ে গেল মতিঝিলে নটরডেম কলেজ দেখাতে। কিন্তু অনেক হিসাব নিকাশ করে আর ভর্তি হবার সাহস পেলাম না। শুধুমাত্র টিউশনির উপর ভর করে ঢাকায় ভর্তি হবার সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। আমার স্কুলে আমার চেয়ে কম রেজাল্ট করা বন্ধুটাও যখন নটরডেমে ভর্তি হল তখন একরাশ হতাশা নিয়ে বনপাড়া কলেজে ভর্তি হলাম। লজিং থাকলাম ডাঃ মুস্তাফিজুর আংকেলের বাসায়। লজিংয়ের গল্প আরেকদিন বলব। কলেজে এত কঠিন পড়া, তারপর আবার সম্পূর্ণ নতুন বই, নতুন সিলেবাস। আমাদের শিক্ষকগণ নিজেরাই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল পড়াতে। এটা দেখে আমি পুরাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমার বন্ধু নটরডেম কলেজ থেকে আসলে গল্প করত তারা কত সুন্দর করে শিখছে তখন আমি আরো বেশি হতাশ হতাম। টাকার জন্য নটরডেমে পড়তে পারলাম না। কিন্তু আমার আব্বা আমাকে কখনও হতাশ করেনি। যখন যেমন প্রাইভেট পড়ার জন্য টাকা চেয়েছি আব্বা শত কষ্ট হলেও না করেনি। কখনও বুঝতেও দেয়নি তার কষ্টের কথা। কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতাম।আমার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর রেজাল্ট দেখে আব্বা চোখ বন্ধ করে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছেন। কলেজ পাশ করে মেডিকেল কোচিং করতে ঢাকায় আসলাম, কোচিংয়ে ভর্তি, মেসে থাকা সবকিছুর ব্যবস্থা তিনি করেছেন, কিভাবে করেছেন আমি তখন বুঝিনি কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি। দিনরাত শ্রম বিক্রি করেছেন, হয়ত অন্যের কাছে হাতও পেতেছিলেন তখন, তবুও আমাকে বুঝতে দেয়নি। জীবনে কখনো না করেনি আমাকে, তবে আমি তার সামর্থ্য বুঝতাম, যতটুকু না নিলেই নয় ঠিক ততটুকুই নিতাম। তাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন আমি আর আব্বার কাছ থেকে পারত পক্ষে টাকা নিতাম না।

আজ আমি এবং আমার স্ত্রী বেতন ভাতা দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভাল টাকা আয় করি। নিজেদের জন্য , পরিবারের জন্য, আত্বীয়স্বজনের জন্য, আশপাশের অসহায় মানুষদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করি, কিন্তু তারপরও মনে হয় এই মানুষদের মত উদার হতে পারিনি এখনও।

সেই ছোট্টবেলা থেকেই আব্বা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আমি আমার মত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই সেই ঋণ থেকেই আব্বাকে আমরা স্বাধীনতা দিয়েছি, যখন যেদিকে যেতে চায় যেতে দেই, যেখানে থাকতে চায় থাকতে দেই। আল্লাহর রহমতে ওমরা করিয়েছি , সামনে হজ্জ করানোর ইচ্ছা আছে। কিন্তু মনে হয় এই মানুষদের মত এতটা উদার আর সেক্রিফাইস কি আমরা করতে পারছি? মনে হয় পারছিনা।
এমন বাবার সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত। উনার ঝরানো প্রতিটি ফোটা ঘামের মূল্য আমি দিতে চাই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে।
বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকেই ব্যর্থতার জন্য নিজেদের পরিবারের অস্বচ্ছলতাকে দায়ী করে। আমি মনে করি নিজেদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য, দৃঢ় মনোবল, আর অক্লান্ত পরিশ্রমের সম্মিলন ঘটাতে পারলে দারিদ্রতা বা অন্যকোন বাধাই আপনার সফলতাকে আটকাতে পারবেনা। আর আপনি সফল হলে অবশ্যই আপনার সফলতার পেছনের মানুষগুলোকে ভুলে যাবেন না।

কয়েকদিন আগে রাজবাড়ী আমার কর্মস্থলে এসেছিলেন বেড়াতে , পুলিশ সুপারের কার্যালয়, রাজবাড়ীতে। একটা স্মৃতি রেখে দিলাম আব্বার সাথে। হয়ত আগামি বছর আমি থাকবনা এই কার্যালয়ে , আব্বারও হয়ত আর আসা হবেনা। তাই স্মৃতি রেখেদিলাম ফেসবুক ওয়ালে। বেঁচে থাকলে আগামি বছর ফেসবুক মনে করিয়ে দিবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

একজন পুলিশ অফিসারের বাবাকে নিয়ে তার বোনের অব্যক্ত কথা

আপডেট সময় : ০১:৫২:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৬ মে ২০২৪

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ

সংবাদটি মোঃ রেজাউল করিম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, রাজবাড়ী,(পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত) তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে সংগ্রহকৃত।

ছবিতে যাকে দেখছেন উনি আমার আব্বা। ছোটবেলা থেকেই আমি বাবা-মা থেকে দুরে নানাবাড়ীতেই আমার বেড়ে ওঠা। ক্লাস টু তে ভর্তি হয়েছিলাম নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার কালিকাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন থেকেই আমার মা-বাবা বলতে আমি নানিকেই বুঝতাম। আব্বা আর আম্মা মাঝেমধ্যে আমাকে দেখতে আসতেন। আমাদের গ্রামের বাড়িতে ভাল স্কুল ছিলনা, পাড়া প্রতিবেশি আমার বয়সীদের পড়ালেখায় তেমন আগ্রহ নাই দেখে আমার আম্মা আমাকে দুরে নানিবাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। নানিবাড়িতে আমার এক ডজন মামাতো ভাইবোনদের সাথেই আমার বেড়ে ওঠা শুরু হল। নানি আমাকে অনেক আদর করতেন বলেই হয়ত ছোট বেলায় কিছুটা বেয়াড়া ছিলাম। গাছে গাছে চড়ে বেড়াতাম। আমার আগে কোন পাখির পক্ষে পাকা ফল খাওয়া সম্ভব হতনা। আব্বা তখন হাল চাষ করতেন, মানুষের জমিতে কাজ করতেন। অনেক খাটুনির কাজ। আর আমি নানাবাড়িতে টুকটাক কৃষিকাজে সহায়তা করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতাম। ক্লাস ওয়ানে পড়াকালীন একদিন আম্মা পড়ার জন্য আব্বার কাছে বিচার দিয়েছিল। মনে আছে সেদিন আব্বা আমার মাথা চৌকির নিচে ঢুকিয়ে পেছনে এমন মাইর দিয়েছিল আমি আজও ভুলতে পারিনি। পড়ালেখা নিয়ে মাইর সেই শেষ। আমার জীবনে আর কোনদিন পড়ার জন্য মাইর বা বকা খেতে হয়নি। উল্টা কেন এত সময় ধরে পড়ি তার জন্য অনেকেই টিটকারি মারত। আসলেই ছোটবেলায় আমি মুখস্থ করতে পারতাম কম, তাই অনেক সময় ধরে পড়তে হত। নানাবাড়িতে কোন অনুষ্ঠান হলে অনেকেই আসত আনন্দ করতে, আর আমি চুপচাপ বসে বসে পড়তাম। দেখা গেছে জোরে মাইকে গান বাজছে আর আমি পাশের রুমে বসে অংক করছি। আমার আব্বা কখনো স্কুলে গিয়েছিল কিনা জিজ্ঞেস করা হয়নি, কিন্তু উনি উনার ছেলে মেয়েদের পড়ালেখায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। আমার মনে আছে আমি যখন এসএসসিতে খুব ভাল রেজাল্ট করলাম তখন আব্বা-আম্মা খুব খুশি হয়েছিলেন। আমি তখন নটরডেমে ভর্তির স্বপ্ন দেখলাম। আব্বা তখন সাভার ক্যান্টনমেন্টে সবজি সাপ্লাইয়ের কাজ দেখাশোনা করত। আব্বাকে আমার ইচ্ছার কথা বলার সাথে সাথে আব্বা আমাকে নিয়ে গেল মতিঝিলে নটরডেম কলেজ দেখাতে। কিন্তু অনেক হিসাব নিকাশ করে আর ভর্তি হবার সাহস পেলাম না। শুধুমাত্র টিউশনির উপর ভর করে ঢাকায় ভর্তি হবার সিদ্ধান্ত নিতে পারলাম না। আমার স্কুলে আমার চেয়ে কম রেজাল্ট করা বন্ধুটাও যখন নটরডেমে ভর্তি হল তখন একরাশ হতাশা নিয়ে বনপাড়া কলেজে ভর্তি হলাম। লজিং থাকলাম ডাঃ মুস্তাফিজুর আংকেলের বাসায়। লজিংয়ের গল্প আরেকদিন বলব। কলেজে এত কঠিন পড়া, তারপর আবার সম্পূর্ণ নতুন বই, নতুন সিলেবাস। আমাদের শিক্ষকগণ নিজেরাই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিল পড়াতে। এটা দেখে আমি পুরাই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমার বন্ধু নটরডেম কলেজ থেকে আসলে গল্প করত তারা কত সুন্দর করে শিখছে তখন আমি আরো বেশি হতাশ হতাম। টাকার জন্য নটরডেমে পড়তে পারলাম না। কিন্তু আমার আব্বা আমাকে কখনও হতাশ করেনি। যখন যেমন প্রাইভেট পড়ার জন্য টাকা চেয়েছি আব্বা শত কষ্ট হলেও না করেনি। কখনও বুঝতেও দেয়নি তার কষ্টের কথা। কিন্তু আমি ঠিকই বুঝতাম।আমার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর রেজাল্ট দেখে আব্বা চোখ বন্ধ করে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে গিয়েছেন। কলেজ পাশ করে মেডিকেল কোচিং করতে ঢাকায় আসলাম, কোচিংয়ে ভর্তি, মেসে থাকা সবকিছুর ব্যবস্থা তিনি করেছেন, কিভাবে করেছেন আমি তখন বুঝিনি কিন্তু পরে বুঝতে পেরেছি। দিনরাত শ্রম বিক্রি করেছেন, হয়ত অন্যের কাছে হাতও পেতেছিলেন তখন, তবুও আমাকে বুঝতে দেয়নি। জীবনে কখনো না করেনি আমাকে, তবে আমি তার সামর্থ্য বুঝতাম, যতটুকু না নিলেই নয় ঠিক ততটুকুই নিতাম। তাই যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তখন আমি আর আব্বার কাছ থেকে পারত পক্ষে টাকা নিতাম না।

আজ আমি এবং আমার স্ত্রী বেতন ভাতা দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ ভাল টাকা আয় করি। নিজেদের জন্য , পরিবারের জন্য, আত্বীয়স্বজনের জন্য, আশপাশের অসহায় মানুষদের জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যয় করি, কিন্তু তারপরও মনে হয় এই মানুষদের মত উদার হতে পারিনি এখনও।

সেই ছোট্টবেলা থেকেই আব্বা আমাকে স্বাধীনতা দিয়েছে, আমি আমার মত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই সেই ঋণ থেকেই আব্বাকে আমরা স্বাধীনতা দিয়েছি, যখন যেদিকে যেতে চায় যেতে দেই, যেখানে থাকতে চায় থাকতে দেই। আল্লাহর রহমতে ওমরা করিয়েছি , সামনে হজ্জ করানোর ইচ্ছা আছে। কিন্তু মনে হয় এই মানুষদের মত এতটা উদার আর সেক্রিফাইস কি আমরা করতে পারছি? মনে হয় পারছিনা।
এমন বাবার সন্তান হতে পেরে আমি গর্বিত। উনার ঝরানো প্রতিটি ফোটা ঘামের মূল্য আমি দিতে চাই অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে।
বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের অনেকেই ব্যর্থতার জন্য নিজেদের পরিবারের অস্বচ্ছলতাকে দায়ী করে। আমি মনে করি নিজেদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য, দৃঢ় মনোবল, আর অক্লান্ত পরিশ্রমের সম্মিলন ঘটাতে পারলে দারিদ্রতা বা অন্যকোন বাধাই আপনার সফলতাকে আটকাতে পারবেনা। আর আপনি সফল হলে অবশ্যই আপনার সফলতার পেছনের মানুষগুলোকে ভুলে যাবেন না।

কয়েকদিন আগে রাজবাড়ী আমার কর্মস্থলে এসেছিলেন বেড়াতে , পুলিশ সুপারের কার্যালয়, রাজবাড়ীতে। একটা স্মৃতি রেখে দিলাম আব্বার সাথে। হয়ত আগামি বছর আমি থাকবনা এই কার্যালয়ে , আব্বারও হয়ত আর আসা হবেনা। তাই স্মৃতি রেখেদিলাম ফেসবুক ওয়ালে। বেঁচে থাকলে আগামি বছর ফেসবুক মনে করিয়ে দিবে।