ঢাকা ০৫:০৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বাগেরহাটে সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা হরিপুরে সরাসরি গোখরা সাপ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা দক্ষিণ রাউজানে মহানবমী পূজা উদযাপন ফেনী পৌরসভার উদ্যোগে ১৯টি পূজা মন্ডপে অনুদানের চেক বিতরণ বিজয়া দশমী অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম পশ্চিম গুজরায় জ্বালা কুমারী তরুণ সংঘে উগ্যােগে দুর্গোৎসব উদযাপন না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক গাজীপুরে হাইওয়ে রোডে দেহ ব্যবসার আড়ালে চাঁদাবাজি, এলাকাবাসীর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি ঝিনাইদহে বাসচাপায় শিশুসহ ২ জন নিহত রাণীশংকৈলে সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব

উহুদ যুদ্ধে প্রিয়নবী সা.-এর ঢাল হয়েছিলেন যে সাহাবি

নিজেস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৭:৪০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪ ১৫৭ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া

বিখ্যাত আনসার সাহাবিদের একজন হজরত আবু দুজানা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।তার পুরো নাম আবু দুজানা সিমাক বিন খারাসা।তিনি সাহসী বীর হিসেবেও বেশ পরিচিত।মদিনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু সায়িদা শাখার সন্তান তিনি।খাযরাজ নেতা বিখ্যাত সাহাবি হজরত সাদ ইবনে উবাদা রা.-এর চাচাতো ভাই ছিলেন তিনি। তাঁর বাবার নাম খারাসা ইবনে লাওজান, মায়ের নাম হামজা বিনতে হারমালা।তিনি ইসলামের প্রায় সব যুদ্ধেই অংশ নিয়েছিলেন।বদর যুদ্ধে তিনি রাসূল সা.-কে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপকারী আবুল আসওয়াদ ইবনুল মুত্তালিবকে হত্যা করেন।উহুদ যুদ্ধে রাসূল সা.-এর পাশে ছিলেন ঢালের মতো। এদিন তিনি রাসূল সা.-এর হাতে শাহাদাতের বাইয়াত গ্রহণ করেন, নবীজি সা.-এর তরবারি হাতে।

তিনি দক্ষ তলোয়ারবাজ ছিলেন।যুদ্ধক্ষেত্রে মুহাম্মদ স. এর সবচেয়ে দক্ষ সাথী হিসেবে আবু দুজানাকে স্মরণ করা হয়। বিশেষ করে মিলীই যুদ্ধের জন্যে স্মরনীয় হয়ে আছেন তিনি। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মাথায় লাল ফিতা বেঁধে রাখতেন। তাই তাকে সহজে চিহ্নিত করা যেতো।উহুদের যুদ্ধে আবু দুজানা আঘাতপ্রাপ্ত হন। মুহাম্মদ স.কে তীরের আঘাত থেকে বাঁচাতে তিনি নিজের পিঠ পেতে দেন।
নবীজি সা.-এর শত্রুকে হত্যা

যুদ্ধের এক পর্যায়ে পৌত্তলিক আব্দুল্লাহ ইবনে হুমাইদ রাসূল সা.-কে হত্যার জন্য এগিয়ে আসে, আবু দুজানা রা. তাকে তরবারি দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত হেনে বলেন, নে, আমি ইবনে খারাসা (খারাসার ছেলে)। সেই আঘাতেই নরামধ আব্দুল্লাহ ধরাশায়ী হয়। তখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য এই দোয়া করেন—
হে আল্লাহ! তুমি ইবনে খারাসার প্রতি সন্তুষ্ট হও, আমি তাঁর ওপর সন্তুষ্ট।

উহুদ যুদ্ধে তিনি দুইটি তরবারি দিয়ে যুদ্ধ করেন। একটি নিজের, অপরটি নবীজি সা.-এর দেওয়া তরবারি। এজন্য তাঁকে ‘জু-আস-সায়ফাইন’ অর্থাৎ, দুই তরবারির অধিকারী বলা হয়।
ভণ্ড মুসায়লামা আল কাজ্জাবকে হত্যা

তিনি হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর খেলাফতকালে মিথ্যা নবীর দাবিদার ভণ্ড মুসায়লামা আল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে সংঘটিত ভয়াবহ ইয়ামামার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং চরম দুঃসাহসের পরিচয় দেন।

এই যুদ্ধে মুসায়লামা একটি সুরক্ষিত দুর্গের ভেতর আশ্রয় নেয়। এ কারণে মুসলিম বাহিনী ভেতরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তখন আবু দুজানা রা. বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন, এরপর বললেন, আমার মুসলমান ভাইয়েরা আমাকে ভেতরে ছুড়ে মারুন, এভাবে ভেতরে গিয়ে আমি ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবো, এরপর আপনারা সবাই একেএকে ভেতরে প্রবেশ করবেন।এভাবে তিনি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করলেন, এতে তাঁর পা ভেঙ্গে গেল। কিন্তু তিনি দমলেন না, প্রাচীরের ফটক থেকে শত্রুদের তাড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদের দুর্গে প্রবেশের ব্যবস্থা করলেন।আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ ও ওয়াহশী রা. -এর সঙ্গে মিলে ভণ্ড মুসায়লামা কাজ্জাবকে হত্যা করলেন। এই যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করতে করতেই এক সময় তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।

বিশেষ দুই আমল
আবু দুজানা রা. একবার অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এসময় তাঁকে দেখতে এলেন এক ব্যক্তি। তিনি তাঁর চেহারায় নূরের ঝলক দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন— আপনার চেহারার এমন উজ্জ্বলতার কারণ কী? তিনি বললেন— দুটি অভ্যাস ছাড়া আমার তেমন কোনো আমল নেই। একটি হলো, অপ্রয়োজনীয় কোনো কথা আমি বলি না। দ্বিতীয়টি হলো, আমার অন্তর সবসময় মুসলমানদের কল্যাণকামী। এই আলোচনা মাধ্যমে তাঁর কর্মময় জীবন, চরিত্র ও গুণাবনী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

তিনি ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ামামার যুদ্ধে মৃত্যু বরণ করেন।ভন্ড নবী মুসাইলামাকে হত্যাকারী দুজনের একজন তিনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

উহুদ যুদ্ধে প্রিয়নবী সা.-এর ঢাল হয়েছিলেন যে সাহাবি

আপডেট সময় : ০৭:৪০:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩ জুলাই ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া

বিখ্যাত আনসার সাহাবিদের একজন হজরত আবু দুজানা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু।তার পুরো নাম আবু দুজানা সিমাক বিন খারাসা।তিনি সাহসী বীর হিসেবেও বেশ পরিচিত।মদিনার বিখ্যাত খাযরাজ গোত্রের বনু সায়িদা শাখার সন্তান তিনি।খাযরাজ নেতা বিখ্যাত সাহাবি হজরত সাদ ইবনে উবাদা রা.-এর চাচাতো ভাই ছিলেন তিনি। তাঁর বাবার নাম খারাসা ইবনে লাওজান, মায়ের নাম হামজা বিনতে হারমালা।তিনি ইসলামের প্রায় সব যুদ্ধেই অংশ নিয়েছিলেন।বদর যুদ্ধে তিনি রাসূল সা.-কে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপকারী আবুল আসওয়াদ ইবনুল মুত্তালিবকে হত্যা করেন।উহুদ যুদ্ধে রাসূল সা.-এর পাশে ছিলেন ঢালের মতো। এদিন তিনি রাসূল সা.-এর হাতে শাহাদাতের বাইয়াত গ্রহণ করেন, নবীজি সা.-এর তরবারি হাতে।

তিনি দক্ষ তলোয়ারবাজ ছিলেন।যুদ্ধক্ষেত্রে মুহাম্মদ স. এর সবচেয়ে দক্ষ সাথী হিসেবে আবু দুজানাকে স্মরণ করা হয়। বিশেষ করে মিলীই যুদ্ধের জন্যে স্মরনীয় হয়ে আছেন তিনি। তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে মাথায় লাল ফিতা বেঁধে রাখতেন। তাই তাকে সহজে চিহ্নিত করা যেতো।উহুদের যুদ্ধে আবু দুজানা আঘাতপ্রাপ্ত হন। মুহাম্মদ স.কে তীরের আঘাত থেকে বাঁচাতে তিনি নিজের পিঠ পেতে দেন।
নবীজি সা.-এর শত্রুকে হত্যা

যুদ্ধের এক পর্যায়ে পৌত্তলিক আব্দুল্লাহ ইবনে হুমাইদ রাসূল সা.-কে হত্যার জন্য এগিয়ে আসে, আবু দুজানা রা. তাকে তরবারি দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত হেনে বলেন, নে, আমি ইবনে খারাসা (খারাসার ছেলে)। সেই আঘাতেই নরামধ আব্দুল্লাহ ধরাশায়ী হয়। তখন নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জন্য এই দোয়া করেন—
হে আল্লাহ! তুমি ইবনে খারাসার প্রতি সন্তুষ্ট হও, আমি তাঁর ওপর সন্তুষ্ট।

উহুদ যুদ্ধে তিনি দুইটি তরবারি দিয়ে যুদ্ধ করেন। একটি নিজের, অপরটি নবীজি সা.-এর দেওয়া তরবারি। এজন্য তাঁকে ‘জু-আস-সায়ফাইন’ অর্থাৎ, দুই তরবারির অধিকারী বলা হয়।
ভণ্ড মুসায়লামা আল কাজ্জাবকে হত্যা

তিনি হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর খেলাফতকালে মিথ্যা নবীর দাবিদার ভণ্ড মুসায়লামা আল কাজ্জাবের বিরুদ্ধে সংঘটিত ভয়াবহ ইয়ামামার যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এবং চরম দুঃসাহসের পরিচয় দেন।

এই যুদ্ধে মুসায়লামা একটি সুরক্ষিত দুর্গের ভেতর আশ্রয় নেয়। এ কারণে মুসলিম বাহিনী ভেতরে প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। তখন আবু দুজানা রা. বিষয়টি নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবলেন, এরপর বললেন, আমার মুসলমান ভাইয়েরা আমাকে ভেতরে ছুড়ে মারুন, এভাবে ভেতরে গিয়ে আমি ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবো, এরপর আপনারা সবাই একেএকে ভেতরে প্রবেশ করবেন।এভাবে তিনি দুর্গের ভেতর প্রবেশ করলেন, এতে তাঁর পা ভেঙ্গে গেল। কিন্তু তিনি দমলেন না, প্রাচীরের ফটক থেকে শত্রুদের তাড়িয়ে দিয়ে মুসলমানদের দুর্গে প্রবেশের ব্যবস্থা করলেন।আব্দুল্লাহ ইবনে যায়িদ ও ওয়াহশী রা. -এর সঙ্গে মিলে ভণ্ড মুসায়লামা কাজ্জাবকে হত্যা করলেন। এই যুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করতে করতেই এক সময় তিনি শাহাদাত বরণ করলেন।

বিশেষ দুই আমল
আবু দুজানা রা. একবার অসুস্থতায় ভুগছিলেন। এসময় তাঁকে দেখতে এলেন এক ব্যক্তি। তিনি তাঁর চেহারায় নূরের ঝলক দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন— আপনার চেহারার এমন উজ্জ্বলতার কারণ কী? তিনি বললেন— দুটি অভ্যাস ছাড়া আমার তেমন কোনো আমল নেই। একটি হলো, অপ্রয়োজনীয় কোনো কথা আমি বলি না। দ্বিতীয়টি হলো, আমার অন্তর সবসময় মুসলমানদের কল্যাণকামী। এই আলোচনা মাধ্যমে তাঁর কর্মময় জীবন, চরিত্র ও গুণাবনী সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

তিনি ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ইয়ামামার যুদ্ধে মৃত্যু বরণ করেন।ভন্ড নবী মুসাইলামাকে হত্যাকারী দুজনের একজন তিনি।