বিশেষ প্রতিনিধি:-
উপদেষ্টার পিএস সাইফুল ইসলামকে নিয়ে নানা বিতর্ক বিস্ময় ও প্রশ্ন তুলছে প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহল।
আগের সরকারের মুখপাত্র, বর্তমান সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েছে সর্ব মহলে সমালোচিত।
গত একজন দলীয় আনুগত্যে পরিচিত আমলা কীভাবে বর্তমান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক উপদেষ্টার একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে নিযুক্ত হলেন, তা নিয়ে বিস্ময় ও প্রশ্ন তুলছে প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহল। ২৮তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা, সাইফুল ইসলাম, তার ইউএনও জীবনের শুরু থেকেই নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।
আওয়ামী আনুগত্য এবং ত্যাগী উপদেষ্টার পিএস?
পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ফেসবুকে সরাসরি দলীয় আনুগত্য প্রকাশ করতেন সাইফুল। অথচ বর্তমান সরকারের একজন খ্যাতিমান ও ত্যাগী আমলার পিএস হিসেবে তার নিয়োগে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের বিরোধাভাস। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলছেন, এই নিয়োগের পেছনে রয়েছে সুক্ষ্ম রাজনৈতিক সমীকরণ ও প্রভাবশালীদের তদবির।
সরিষাবাড়িতে কোটি টাকার দুর্নীতি:
সরিষাবাড়ি (জামালপুর) উপজেলার ইউএনও থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের ‘নির্বাচন পরিচালনার’ নামে স্থানীয় এক চিকিৎসক এমপি প্রার্থীর কাছ থেকে এক কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে সাইফুল ও সরিষাবাড়ি থানার ওসির বিরুদ্ধে। অভিযোগ মতে, সরিষাবাড়ির বাসিন্দা এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রটোকল অফিসার, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা খোরশেদের তদবিরে তাকে ঐ এলাকায় পদায়ন করা হয় ‘বিশেষ এজেন্ডা’ বাস্তবায়নের জন্য।
যুব উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে ভুয়া সম্মানী:
সরকারি কোনো প্রশিক্ষণ বা ক্লাস না নেওয়া সত্ত্বেও ‘ন্যাশনাল সার্ভিস প্রোগ্রাম’ থেকে ইউএনও হিসেবে কয়েক লক্ষ টাকা সম্মানী গ্রহণ করেন তিনি। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিয়েও।
চট্টগ্রামে মাসোহারা ও উপঢৌকনের অভিযোগ:
চট্টগ্রামে কর্মরত থাকা অবস্থায় তৎকালীন ডিসি ও বর্তমানে জেলে সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিনের অধীনে এসি ল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সাইফুল। অভিযোগ রয়েছে, ডিসি তার স্ত্রীকে এক ভরি সোনার হার উপহার দেন এবং অফিস থেকে নিয়মিত মাসোহারা পাঠানোর পুরস্কার হিসেব্ব। এরপর কুখ্যাত ডিসি ইলিয়াস (বর্তমানে ওএসডি) তাকে এডিসি করে পুনরায় চট্টগ্রামে নিয়ে যান।
পিএইচডি ফেলোশিপে প্রভাব ও অনিয়ম;
প্রভাবশালী খোরশেদের তদবিরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পিএইচডি ফেলোশিপ বাগিয়ে নেন সাইফুল। অভিযোগ, তিনি অফার লেটার পেতে হিমশিম খাচ্ছিলেন এবং একটি যোগ্য প্রার্থীর গবেষণা প্রস্তাব চুরি করেই আবেদন করেন। বহু মেধাবী প্রার্থীকে বাদ দিয়ে তাকে বাছাই করা হয় বলে জানা যায়।
ফেলোশিপ শেষে তিনি ফের তদবির করে পুনরায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে পদায়ন পান।
বিজিএফসিএল ও তিতাস গ্যাসে আর্থিক সুবিধা:
বিজিএফসিএলের পরিচালক হিসেবে থাকাকালে এজিএম সম্মানী ও অন্যান্য বোনাস হিসেবে লাখ লাখ টাকা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তিতাস গ্যাসের পদোন্নতি কমিটির সদস্য হিসেবেও কোটি টাকার কারসাজির অভিযোগ উঠেছে। সাধারণত উপদেষ্টার পিএসরা এ কমিটিতে থাকেন না, তবে তিনি নিজে তদবির করে এসব কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য: সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা একের পর এক গুরুতর অভিযোগ তদন্তের দাবি তুলছে প্রশাসনের সচেতন অংশ। একজন বিতর্কিত, প্রভাবিত আমলাকে শীর্ষ পদে কীভাবে বসানো হলো, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে নীতিগত ও নৈতিক প্রশ্ন। প্রশাসন ও রাজনীতির সম্মিলিত নিরবতার আড়ালে এই নিয়োগ কী বার্তা দিচ্ছে রাষ্ট্রকে?
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রায়হান সুলতান।
যোগাযোগঃ ৭২/৭-৮ মানিকনগর, মুগদা,ঢাকা-১২০৩
মোবাইলঃ +৮৮০৯৬৩৮০৮৯০১৪
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র. All rights reserved.