ঢাকা ১১:০৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
হরিপুরে সরাসরি গোখরা সাপ দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা দক্ষিণ রাউজানে মহানবমী পূজা উদযাপন ফেনী পৌরসভার উদ্যোগে ১৯টি পূজা মন্ডপে অনুদানের চেক বিতরণ বিজয়া দশমী অনুষ্ঠানে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক জনাব মোঃ সাইফুল ইসলাম পশ্চিম গুজরায় জ্বালা কুমারী তরুণ সংঘে উগ্যােগে দুর্গোৎসব উদযাপন না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক গাজীপুরে হাইওয়ে রোডে দেহ ব্যবসার আড়ালে চাঁদাবাজি, এলাকাবাসীর প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি ঝিনাইদহে বাসচাপায় শিশুসহ ২ জন নিহত রাণীশংকৈলে সিঁদুর খেলার মধ্য দিয়ে শেষ হলো শারদীয় দুর্গোৎসব দুমকীতে পূজা মন্ডপে এনসিপির শুভেচ্ছা বিনিময়

আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান মারা গেছেন

নিজেস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৫:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪ ৮১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া
দীর্ঘ ৩১ বছরের সাজা ভোগ শেষে মুক্তি পাওয়া আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া (৭৪) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (২৪ জুন) ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সংবাদমাধ্যমকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও জোনের শের-এ-বাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর আজম।

তিনি বলেন, সাভারের হেমায়েতপুরের জাদুরচর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শাহজাহান। রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বুকে ব্যথা শুরু হলে তাকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

পরিবারের সূত্র জানায়, সোমবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়। তার বোন ফিরোজা হাসপাতালে মরদেহ গ্রহণ করেন। আইনগত কার্যক্রম শেষে শাহজাহানের মরদেহ নরসিংদির পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে দাফন করা হবে।

‘জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। মায়ের নাম মেহের। তিন বোনের মধ্যে বর্তমানে এক বোন বেঁচে আছে শাহজাহানের। ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্ম নেওয়া শাহজাহানের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। যৌবনকালসহ জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি থাকায় ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তবে, কারামুক্তির পর এক তরুণীকে বিয়ে করেন। সে সংসার টেকেনি। এ নিয়ে আইনি জটিলতায়ও পড়েন তিনি।

দীর্ঘ ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন দুপুরে কারাগার থেকে মুক্তি পান শাহজাহান। ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা ও অস্ত্র আইনের দুই মামলায় তার ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু কারাগারে জল্লাদের কাজ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন আর ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিন রেয়াত (সাজা মওকুফ) পান। ওই দুই মামলায় তার পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। মুক্তির সময় কারা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করে দেয়।

ছাত্রজীবনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া শাহজাহান অপরাধ জগতে ঢুকতেও বেশি সময় নেননি। ডাকাতি ও খুনের মতো ভয়ংকর সব অপরাধ করার পর ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। এরপর দুই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ। সাজা কমাতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এরপর সহযোগী হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে জল্লাদ জীবন শুরু করেন তিনি। এক সময় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারে আনা হয় শাহজাহানকে। সেখানে তাকে প্রধান জল্লাদের আসন দেওয়া হয়।

কারাগারের নথি অনুযায়ী, ‘জল্লাদ’ শাহজাহান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক (বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মাজেদ), চার যুদ্ধাপরাধী (জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপিনেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী), কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির ও ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান মারা গেছেন

আপডেট সময় : ০৫:৫৯:২৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া
দীর্ঘ ৩১ বছরের সাজা ভোগ শেষে মুক্তি পাওয়া আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া (৭৪) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সোমবার (২৪ জুন) ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

সংবাদমাধ্যমকে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির তেজগাঁও জোনের শের-এ-বাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর আজম।

তিনি বলেন, সাভারের হেমায়েতপুরের জাদুরচর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন শাহজাহান। রোববার রাত সাড়ে ৩টার দিকে বুকে ব্যথা শুরু হলে তাকে ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

পরিবারের সূত্র জানায়, সোমবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটের দিকে তার মৃত্যু হয়। তার বোন ফিরোজা হাসপাতালে মরদেহ গ্রহণ করেন। আইনগত কার্যক্রম শেষে শাহজাহানের মরদেহ নরসিংদির পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে দাফন করা হবে।

‘জল্লাদ’ শাহজাহানের পুরো নাম শাহজাহান ভূঁইয়া। তিনি নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামের মৃত হাছেন আলীর ছেলে। মায়ের নাম মেহের। তিন বোনের মধ্যে বর্তমানে এক বোন বেঁচে আছে শাহজাহানের। ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্ম নেওয়া শাহজাহানের বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। যৌবনকালসহ জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি থাকায় ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তবে, কারামুক্তির পর এক তরুণীকে বিয়ে করেন। সে সংসার টেকেনি। এ নিয়ে আইনি জটিলতায়ও পড়েন তিনি।

দীর্ঘ ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন দুপুরে কারাগার থেকে মুক্তি পান শাহজাহান। ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা ও অস্ত্র আইনের দুই মামলায় তার ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। কিন্তু কারাগারে জল্লাদের কাজ, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন আর ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিন রেয়াত (সাজা মওকুফ) পান। ওই দুই মামলায় তার পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। মুক্তির সময় কারা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করে দেয়।

ছাত্রজীবনে স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া শাহজাহান অপরাধ জগতে ঢুকতেও বেশি সময় নেননি। ডাকাতি ও খুনের মতো ভয়ংকর সব অপরাধ করার পর ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি প্রথম গ্রেপ্তার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। এরপর দুই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ। সাজা কমাতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এরপর সহযোগী হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে জল্লাদ জীবন শুরু করেন তিনি। এক সময় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারে আনা হয় শাহজাহানকে। সেখানে তাকে প্রধান জল্লাদের আসন দেওয়া হয়।

কারাগারের নথি অনুযায়ী, ‘জল্লাদ’ শাহজাহান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক (বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মাজেদ), চার যুদ্ধাপরাধী (জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপিনেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী), কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি খুকু মনির ও ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেন।