
সুলাইমান কবির রাব্বি, জেলা প্রতিনিধি,যশোর;
যশোরের ইতিহাসে ৬ ডিসেম্বর শুধু একটি তারিখ নয়—এটি স্বাধীনতার উত্তাল সংগ্রামে অর্জিত এক বিশাল বিজয়ের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত জেনে যশোর সেনানিবাস ছেড়ে পালিয়ে যায়।
শত্রুমুক্ত হয় যশোর, উড়তে থাকে বাংলার লাল-সবুজ পতাকা। বিজয়ের উচ্ছ্বাসে কেঁপে ওঠা এদিন আজও যশোরবাসীর হৃদয়ে এক অবিনাশী স্মৃতি হয়ে আছে। স্বাধীনতার পথে যশোরের সংগ্রাম ছিল শুরু থেকে তীব্র। স্বাধীনতার প্রথম নারী শহীদ চারুবালা করের আত্মদান, স্থানীয় বীরযোদ্ধাদের প্রতিরোধ, এবং পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতায় রক্তাক্ত হয়েছিল এই অঞ্চল।
২৬ মার্চ এমপি মশিয়ুর রহমানকে হত্যা এবং ৩০ মার্চ লেফটেন্যান্ট আনোয়ারসহ বহু সৈনিকের শহীদ হওয়া যশোরের লড়াইকে আরও কঠিন করে তোলে। মানুষের চোখে তখন অশ্রু নয়, ছিল প্রতিশোধের আগুন।মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল যশোর। এই সেক্টরের গৌরবময় ইতিহাসকে চির অমলিন করেছেন বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ। ৫
সেপ্টেম্বর বয়রা সীমান্তে পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে তার বীরোচিত আত্মোৎসর্গ যশোরকে দিয়েছে অন্যরকম পরিচয়—বীরের জনপদ। অপারেশনের চূড়ান্ত ধাপ শুরু হয় ২০ নভেম্বর। জগন্নাথপুর, সিংহঝুলি, চৌগাছা—প্রতিটি স্থানে সংঘটিত যুদ্ধে পাকবাহিনী ধীরে ধীরে ভেঙে পড়ে। টানা ৩–৫ ডিসেম্বর সীমান্তজুড়ে ভয়াবহ লড়াইয়ের পর ৫ ডিসেম্বর রাতে মনোহরপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচণ্ড আক্রমণে টিকতে না পেরে দিশেহারা পাক বাহিনী যশোর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়।এর পরেই ইতিহাস গড়ে ৬ ডিসেম্বরের ভোরে—শত্রুমুক্ত যশোর।যুদ্ধবিধ্বস্ত কালেক্টরেট ভবনে যখন স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়লো, যশোরবাসী তখন বিজয়ের আনন্দে কেঁদেছিল, শহীদদের স্মরণে মাথা নত করেছিল। সেই মুহূর্ত জয় নয়, আত্মোৎসর্গ ও গর্বের এক গভীর প্রতীক হয়ে আজও বয়ে চলেছে।
৬ ডিসেম্বর তাই শুধু উদ্যাপনের দিন নয়; এটি দায়িত্বের বার্তা, আত্মত্যাগের স্মরণ এবং নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার মূল্য শেখানোর এক ঐতিহাসিক স্মারক। চারুবালা কর থেকে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ—অগণিত শহীদের রক্তে লেখা এই মুক্তি আজও যশোরের গৌরবময় পরিচয় হয়ে আছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রায়হান সুলতান।
যোগাযোগঃ ৭২/৭-৮ মানিকনগর, মুগদা,ঢাকা-১২০৩
মোবাইলঃ +৮৮০৯৬৩৮০৮৯০১৪
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র. All rights reserved.