আশরাফ উদ্দিন,বরিশাল বিভাগীয় প্রতিনিধি:-
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও সরকারী বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ এবং তার অপসারণ চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয় তিন ব্যক্তি।বরিশাল বিভাগীয় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দদক) পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ডা. বখতিয়ার আল মামুন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে ২০১৪ সালের ৭ আগষ্ট যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই তিনি কর্মচারীদের সাথে অসন্তোষজনক আচরণ করে আসছেন। একটানা এই উপজেলায় তিনি দশ বছর ধরে চাকুরী করছেন এবং তার বাড়ি এই উপজেলায় হওয়াতে তিনি দুর্নীতির খুটি গেড়ে বসেছেন। এছাড়া কোভিড টিকাদান ক্যাম্পেইনের টাকা আত্মসাৎ, মাঠপর্যায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে অশ্লালীন ও কুরুচিপূর্ণ বাক্য ব্যবহারে অপমানিত করা, স্থানীয় এমপি’র সাথে ছবি তুলে সেই ছবি দেখিয়ে সকলকে ভয় দেখানো, প্রাপ্য অর্থ দাবী করলে চাকুরী হারানোর ভয় দেখানো, তুচ্ছ কারণে অযাচিতভাবে কৈফিয়ত তলব করে হয়রানি করা, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা ও নারী সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, আয়া, কাজের বুয়াদের সাথে অশ্লীল আচরণের মাধ্যমে চরিত্রহনন করার চেষ্টা করে নির্যাতন করে আসছে। এছাড়াও তিনি এই উপজেলা হাসপাতালে যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন ভাবে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি ও সরকারের দেয়া বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। তিনি হাসপাতালের যে কোয়ার্টারে থাকেন তার বাসা ভাড়া বাবদ প্রতিমাসে ১৩,৮০০ টাকা করে সরকারী কোষাগারে জমা দেয়ার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত তিনি জমা দেননি। অবৈধ ভাবে টাকা নিয়ে তিনি বরিশাল শহরে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে দশ তলা ভবন নির্মান করছেন। তিনি এবং তার স্ত্রীর নামে ঢাকায় রয়েছে দুই কোটি টাকার ফ্যাট। এছাড়া আগৈলঝাড়া উপজেলার নিজ গ্রাম পয়সারহাটে রয়েছে তার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই কর্মকর্তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। নাম না প্রকাশের শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন তিনি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বিভিন্ন ভাবে আমাদের জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায় করেন। তিনি হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হওয়ায় আমরা কিছুই বলতে পারি না। প্রতি বছরে হাসপাতালে আসা সরকারী বরাদ্দের কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন নিম্ন মানের সার্জিকেল সামগ্রী ক্রয়, জুনিয়র কনসালটেন্টদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, অফিসে অনিয়মিত, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অব্যবস্থাপনা, বিভিন্ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ না করে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ, কর্মস্থলে না এসে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ভূয়া বিল উত্তোলন, হাসপাতালের বড় বড় অর্ধশত গাছ কেটে বিক্রি, অফিসে না এসে বাসায় বসে ভিজিট নিয়ে রোগী দেখেন। আরএমও’র বাসা দখল করে শ্বশুর-শ্বাশুড়ী নিয়ে বসবাস করছেন তিনি। হাসাপাতালের কোয়ার্টারে থাকা ১২টি পরিবারের কাছ থেকে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ২৫ হাজার টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করা, মাদক বিক্রেতাদের রোগী ধরা দালাল নিয়োগ করা, ডায়গনিষ্টিক মালিকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে চাঁদা আদায় করা, হাসপাতালের একজন চিকিৎসক, একজন প্রধান হিসাবরক্ষক ও একজন স্বাস্থ্য সহকারী তার অমানুষিক অত্যাচারে চাকুরী অবস্থায় মৃত্যুবরন করা, বিভিন্ন মহিলা রোগীদের ফোন নম্বর রেখে তাদেরকে উত্যক্ত করা, কোন ডাক্তারকে হাসপাতালে রোগী দেখতে না দেয়া, উর্ধ্বতন কর্তৃপরে কথা বলে ডাক্তারদের ব্ল্যাকমেল করা এবং তাদের অন্যত্র বদলীতে বাধ্য করা। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন যোগদানের পর থেকে অফিস করেন বাসায় বসে। তার স্ত্রী ডা.সাবিনা আফরোজ বিনা ছুটিতে কার্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। নিজস্ব সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হাসপাতালকে সীমাহীন অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছেন তিনি। তিনি কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বাসা ভাড়ার টাকা উত্তোলন করলেও বাসা ভাড়ার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেন। এছাড়াও হাসপাতালের ষ্টোরকিপার মো. শাহআলম দুই বছর আগে অবসরে গেলেও এখনও তার কাছে রয়েছে ষ্টোরের দায়িত্ব। তার সহয়তায় বিভিন্ন বিলের টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছেন ডা. মামুন। ষ্টোরকিপার মো. শাহআলম সরকারী দামী দামী ঔষধ ডা. মামুনের মাধ্যমে বাহিরে বিক্রি করেন।এছাড়াও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিদ্যুৎ, পানির লাইন, ফ্যান মেরামতের জন্য প্রতি বছর ৫০ হাজার টাকা, পরিস্কার-পরিচ্ছনার জন্য এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ নিলেও সেই টাকা খরচ না করে তিনি সম্পুর্ন টাকা আত্মসাৎ করেন। স্বাস্থ্য কর্মকর্তার আচরণে অতিষ্ঠ হাসপাতালের প্রায় সকল ষ্টাফ ও সেবা নিতে আসা সাধারন মানুষ। তিনি কনসালটেন্টদের তদারকি করা, পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয়ে অনাধিকার চর্চা করে, ঠিকাদারের মাধ্যমে নিম্নমানের সার্জারী সামগ্রী ক্রয়ে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতাল ভুতুরে অবস্থার সৃষ্টি হয়, জেনারেটর থাকলেও তা চালানো হয় না কিন্তু সে তেলের বরাদ্দের টাকাও আত্মসাৎ করেন। সরকারী এ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিলে তাকে রোগী প্রতি ৫শত টাকা দিতে হয়, তেলের পাম্প থেকে ভুয়া ভাউচার এনে তেলের টাকা আত্মসাৎ করা। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় ষ্টাফদের হয়রানি, অশালীন আচরণ ও মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। তাই অনতিবিলম্বে গোপনে তদন্ত করে এই অসাধু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া এবং তার অপসারন দাবী করেছেন। লিখিত অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে বরিশাল-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন), বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক, বরিশাল সিভিল সার্জন, আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন স্থানে। এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বখতিয়ার আল মামুন বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। হাসপাতালের একটি মহল এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা এই হাসপাতাল ভাল ভাবে পরিচালিত হোক তা তারা চায় না। যার জন্য তারা আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ করেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রায়হান সুলতান।
যোগাযোগঃ ৭২/৭-৮ মানিকনগর, মুগদা,ঢাকা-১২০৩
মোবাইলঃ +৮৮০৯৬৩৮০৮৯০১৪
Copyright © 2025 দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র. All rights reserved.