৩ কোটি ২১ লাখের কাজে ঘুষেই ব্যয় ৬১ লাখ টাকা

- আপডেট সময় : ১১:৪৩:৪৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪ ৯৩ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া
মাত্র ৩ কোটি ২১ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজ; কিন্তু সেই কাজের জন্য ঘুষই দিতে হয়েছে প্রায় ৬১ লাখ টাকা। দরপত্র থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে এই টাকা নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের রাস্তা উন্নয়ন কাজে অস্বাভাবিক ঘুষ লেনদেনের এ ঘটনা ঘটেছে। সংস্থাটির উপসহকারী প্রকৌশলী জয়নাল আবেদিন নিজ হাতে নগদ নিয়েছেন ৪২ লাখ টাকা। তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে জমা দেওয়া হয় সাড়ে ১০ লাখ টাকা। বিভিন্ন সময় ‘টেবিল খরচ’-এর নামে অন্যদের দিতে হয়েছে বাকি টাকা। ভিডিও রেকর্ড ও সংশ্লিষ্ট নথিপত্র বিশ্লেষণে এ ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২০ সালের দিকে টেন্ডার আহ্বান করা হয় ওই কাজের। ওই ওয়ার্ডের ময়দার মিল রোড, ইসমাইল ফয়েজ এবং আব্দুল করিম রোডে এসব উন্নয়ন কাজ করে নাওয়াল কনস্ট্রাকশন এবং মা-বাবা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। শুরুতে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার টেন্ডার থাকলেও চূড়ান্ত পর্যায়ে এই টেন্ডারের মূল্যমান ধরা হয় ৩ কোটি ২১ লাখ ২৭ হাজার ৯১৯ টাকা।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি টেবিলে বসে আছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী জয়নাল আবেদিন। এ সময় তার পাশেই উপস্থিত দেখা যায় আরেক সহকারী প্রকৌশলী রিফাত হোসেনকে। সেখানে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি একটি ব্যাগ থেকে টাকা বের করে তাদের হাতে তুলে দেন। উপসহকারী প্রকৌশলী জয়নাল আবেদিন টাকাগুলো নিজে গুনে হিসাব করে নেন। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ওই সময় একসঙ্গে প্রায় ৪২ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে দেওয়া হয় প্রকৌশলীদের। এ ছাড়া সাউথইস্ট ব্যাংকের এমকে ব্রাঞ্চের শাখায় নুসরাত সাবরীনা নামে এক নারীর অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয় ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নুসরাত সাবরীনা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী।
জানা যায়, ঠিকাদারি কাজের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিলের ওপর ১৫ শতাংশ টাকা ভ্যাট এবং কর হিসেবে সরকারি খাতে কেটে রাখা হয়। ঘুষ হিসেবে প্রকৌশলসহ বিভিন্ন দপ্তরে দিতে হয় বিপুল পরিমাণ টাকা। ফলে উন্নয়ন কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব হয় না। কাজের মানও খারাপ হয়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক আয়নুল হাসান বলেন, ‘কাজটি নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাকে বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে। প্রকৌশলীরা নিজ হাতে এই টাকা ঘুষ নিয়েছেন। এরপর কাজ চলাকালে এবং বিল দেওয়ার সময়ে ব্ল্যাকমেইল করে আরও টাকা নেওয়া হয়। আমরা ওই সময় অসহায়। পদে পদে হয়রানি করে টাকা নিলেও চূড়ান্ত বিল দিতে গড়িমসি করে।’
অভিযুক্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘ঘুষ নেওয়ার এমন কোনো ঘটনা আমার মনে পড়ছে না। আমি এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নই।
পরে তার স্ত্রীর অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া চেক এবং সরাসরি টাকা নেওয়ার ভিডিওর বিষয়টি উল্লেখ করলে তিনি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এরপর বলেন, ‘করপোরেশনে আমি একজন ছোট প্রকৌশলী। আমার একার পক্ষে একটি কাজ বাবদ এত টাকা নেওয়া সম্ভব নয়।
তাহলে কাদের কাদের ভাগ দিতে হয়—এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি আর কথা বলতে চাননি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শাহীন-উল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এমন ঘটনা ঘটে তাহলে অবশ্যই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঠিকাদাররা কাজ করবেন, প্রকৌশলীদের কাজ হচ্ছে দেখভাল করা। সঠিকভাবে কাজ হচ্ছে কি না, তা দেখা। সেখানে এভাবে ঘুষ লেনদেনের ঘটনা ঘটলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।