৩৮ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া, ১১৮ জন গ্রাম পুলিশের মানবেতর জীবন

- আপডেট সময় : ১০:০৩:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫ ১৭ বার পড়া হয়েছে

রিয়াজ মিয়াঃ-
বেতন পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বগুড়ার সারিয়াকান্দিৃ উপজেলায় কর্মরত গ্রাম পুলিশ সদস্যরা গত ২৬ মাস ধরে হাজিরা ভাতা ও ১২ মাস ইউনিয়ন পরিষদের বেতন এবং উৎসব ভাতা বঞ্চিত রয়েছেন। বেতন পেতে তারা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ অবস্থায় দরিদ্র গ্রাম পুলিশরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তারা অবিলম্বে এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ইউনিয়ন পরিষদ ও গ্রাম পুলিশ সূত্র জানায়, তারা গ্রামের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সারিয়াকান্দি উপজেলার যমুনা নদী পাড়ের ১২ ইউনিয়ন পরিষদের ১১৮ জন গ্রাম পুলিশ সদস্য আছেন। প্রতিমাসে ছয় হাজার ৫০০ টাকা বেতন-ভাতা পান। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা এবং সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৩ হাজার ২৫০ টাকা। এ ছাড়া সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার থানায় হাজিরা দিয়ে নিজ ইউনিয়নের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতিবেদন দিতে হয়। এজন্য প্রতি মাসে এক হাজার ২০০ টাকা করে হাজিরা ভাতা পেয়ে থাকেন।বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় কর্মরত গ্রাম পুলিশরা শুধু সরকারি অংশের তিন হাজার ২৫০ টাকা পাচ্ছেন। গত এক বছর ইউনিয়ন পরিষদের টাকা বঞ্চিত রয়েছেন। তারা সবাই এখন বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল কাজলা ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ বুলবুলি রানী জানান, স্বামীর স্বল্প আয়ের তার সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই তিনি গ্রাম পুলিশে যোগ দিয়েছেন। প্রতিদিন তিনি ইউনিয়ন পরিষদের নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু গত ২৬ মাস ধরে প্রতিমাসের হাজিরা ভাতা পাচ্ছেন না। অথচ তিনি দুর্গম চরাঞ্চল থেকে অনেক টাকা নৌকা ভাড়া দিয়ে থানায় এসে নিয়মিত হাজিরা দিচ্ছেন। আবার ইউনিয়ন পরিষদের বেতনও গত ১২ মাস ধরে পাচ্ছেন না।কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বেতন না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছি। টাকার অভাবে সন্তানদের ঠিকমতো লেখাপড়া করাতে পারছি না।’কর্নিবাড়ী ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আফজাল হোসেন জানান, পরিষদের দলিল খরচের এক শতাংশ টাকা থেকে তাদের বেতন-ভাতা দেওয়ার কথা। তারা কিছু পেয়েছেন। বাকিগুলো কবে পাবেন তা তারা জানেন না। এ ছাড়া হাজিরা ভাতার বিষয়টি তাদের জন্য বেশি কষ্টকর। কারণ, সপ্তাহে একদিন থানায় আসা-যাওয়া করতে ১০০-১৫০ টাকা খরচ হয়।সেকেন্দার আলী, মিজানুর রহমান, শাহজাহান আলীসহ কয়েকজন গ্রাম পুলিশ বলেন, ‘বেতন-ভাতা ছাড়া আরও কত দিন চলবো? দিনমজুরও খাটতে যেতে পারছি না। বাড়িতে গেলে স্ত্রী ও সন্তানরা বেতন পাওয়ার কথা জানতে চান। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে চুপ করে থাকতে হচ্ছে।’এ প্রসঙ্গে চালুয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম জানান, গ্রাম পুলিশদের পরিষদের অংশের বেতন কিছু পরিশোধ করা হয়েছে। পরিষদের আয় থেকে তাদের এই বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু ৪০ বছর ধরে এ ইউনিয়নের কেউ ট্যাক্স দেন না। আয় না হওয়ায় তাদের বেতন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও কিছু কিছু করে বেতন দেওয়া হচ্ছে।সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহারিয়ার রহমান বলেন, ‘গ্রাম পুলিশদের সরকারি অংশের বেতন চালু রয়েছে। বাকি বেতন পরিষদের আয় থেকে দেওয়া হয়। কিছু টাকা জমা হয়েছে সেখান থেকে তারা তিন মাসের বেতন পাবেন। আমরা ইউনিয়ন পরিষদকে চাপ দিচ্ছি, বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য। এ ছাড়া সরকারের কাছে আমরা চিঠি দিচ্ছি বেতন-ভাতার বিষয়ে। আর হাজিরা ভাতা সরকারি বরাদ্দ পেলে তাদের দেওয়া হবে।’