স্বৈরাচারের বাজেট বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট করেন : আমীর খসরু

- আপডেট সময় : ০২:৪৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫ ২২ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার॥ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আপনাদের যেটা করা উচিৎ সেটা হচ্ছে স্বৈরাচার যে বাজেট দিয়ে গেছে সেই বাজেটটা বাদ দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য একটা নতুন বাজেট তৈরি করা। কারণ স্বৈরাচারের বাজেট তো হচ্ছে ১০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ৩০ হাজার কোটি টাকার, এক হাজার কোটি টাকার বাজেট ৩ হাজার কোটি টাকার। এটা দুর্নীতির বাজেট। বাকি প্রজেক্টগুলো এখন স্থগিত রাখেন। স্থগিত রেখে জনগণকে একটু নিশ্বাস ফেলতে দিন।
তিনি বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশের মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যে দুই বেলা খেতে পারছে না মানুষ। তার মধ্যে এখন ১৫ পারসেন্ট ১০৯টা আইটেমে কর বাড়িয়েছেন। যাদের দৈনিন্দন জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে গেছে মূল্যষ্ফীতির কারণে, তার মধ্যে এই কর-এই ভ্যাট, আগামী দিনে দরিদ্রসীমার নিচে কত লোক যাবে এটা চিন্তা করতে পারবেন না।
গতকাল মঙ্গলবার যশোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ‘খুলনা বিভাগের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে রাজনৈতিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
স্থানীয় একটি অভিজাত হোটেলের কনফারেন্স কক্ষে বেলা ১২টায় শুরু হয় মতবিনিময় সভা।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এ নেতা বলেন, সংস্কার বিষয়ে বিএনপিকে কারও কাছ থেকে সবক নিতে হবে না। বিএনপির দেয়া ৩১ দফার মধ্যেই রয়েছে সবচেয়ে বেশি সংস্কার প্রস্তাব। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় গেলে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। এটা প্রতিশ্রুতি না, অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, এই দেশে সংস্কারের সূচনা করেছিলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি একদলীয় বাকশালী অর্থনীতি থেকে দেশকে মুক্ত করে ব্যবসা-বাণিজ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করেছিলেন। যে কারণে দেশের অর্থনীতি আজ এই পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে।
আরও বলেন, জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া কোনো সংস্কার স্থায়ী হতে পারে না। আজ যে সংস্কার করা হচ্ছে, কাল অন্য কোনো দল ক্ষমতায় এসে তা ছুড়ে ফেলে দিতে পারে। তিনি ‘যে সংস্কারগুলোর ব্যাপারে জাতীয় ঐক্য আছে’, সেগুলো করে ফেলার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় এলে এগুলো সংসদে পাস করবো। কিন্তু জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসা জাতীয় ঐক্যের সরকারই মূল সংস্কারগুলো করবে।’ বিএনপি ২০০ আসনে জয়ী হলেও সবাইকে নিয়ে সরকার গঠন করা হবে বলেও তিনি প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা পলায়ন করার পরে বাংলাদেশের মানুষের মনোজগতে যে পরিবর্তন হয়েছে এটা যদি আমরা না বুঝি, আমরা ধারণ করতে না পারি, আমাদের কোন ভবিষ্যৎ হবে না। রাজনীতিকদের কোন ভবিষ্যৎ থাকবে না, রাজনৈতিক দলের কোন ভবিষ্যৎ থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা এটি পরিপূর্ণভাবে ধারণ করে আগামী দিনের বাংলাদেশ পরিচালনা দায়িত্ব নিতে যাবে ইনশাল্লাহ। আগামীর বাংলাদেশ পুরনো বাংলাদেশের মতো চলবে না।
আমীর খসরু বলেন, নতুন বাংলাদেশ বললে হবে না, রূপান্তরমূলক যদি পরিবর্তন না হয়, এই যে গর্তের মধ্যে আমরা পড়েছি এখান থেকে বেরুবার কোন সুযোগ নাই।
সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সহজভাবে ব্যবসা করার যে সুযোগ এইটার একটা মানদন্ড আছে। এটার আন্তর্জাতিক মানদন্ডে বাংলাদেশ এখন একেবারে প্রায় সর্বনিম্নে। এখানে ব্যবসা করা সহজ না। তার মধ্যে আমাদের লোকেরা যে কষ্ট করে ব্যবসা করছে এটা করলে বাংলাদেশ কোন দিনও আমরা যে স্বপ্ন দেখছি মধ্যম আয়ের, উচ্চ আয়ের দিকে যাবে।
যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তৃতা করেন বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তা কাজী সালিমুল হক কামাল, বিজিএমই-এর সাবেক সদস্য মাহমুদুল হাসান খান, বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক শামসুর রহমান।
এ সময় খুলনা, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, নড়াইল ও মেহেরপুর চেম্বারের একজন করে প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন। তারা হলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী চিন্ময় সাহা, যশোর সার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজালাল, জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সাবেক মহাসচিব সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান তুহিন, শেখ ফরিদুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, শরিফুজ্জামান শরিফ, একে আনোয়ারুল হক, মোয়াজ্জেম হোসেন, শেখ মঈন উদ্দীন, খোন্দকার জাহিদুল ইসলাম, হাফিজুল ইসলাম চন্দন প্রমুখ।
সভায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ছাড়াও বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাধারণ সম্পাদক তানভীরুল ইসলাম সোহান।
সভায় ব্যবসায়ীদের নানা প্রস্তাবের ব্যাপারে মত দিতে গিয়ে আমির খসরু বলেন, বিএনপি ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ শতাংশের বেশি। পরে হাসিনা ক্ষমতায় এসে লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করলে অর্থনীতি ধসে যায়। ব্যবসার পরিবেশের ইনডেক্সে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ব্যবসাকে লিবারেলাইজ করা হবে। গার্মেন্টের সুবিধা অন্যান্য সেক্টরেও উন্মুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোতে রাজনৈতিক লোকদের বসানো হয়েছে। চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোতে এখনও দখলদার ফ্যাসিস্টের সহযোগীরা বসে আছে। তাদের উৎখাত করে সংগঠনগুলোতে গণতন্ত্রায়ন করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোকে সেলফ রেগুলেট করতে পারতে হবে। তাহলে লাইসেন্সরাজ, ব্যুরোক্রেসির দৌরাত্ম্য থাকবে না। আমরা ক্ষমতায় গেলে সরকারের অনেক ক্ষমতা ক্রমান্বয়ে অ্যাসোসিয়েশনকে দেবো।’
কাজী সালিমুল হক কামাল বলেন, দেশে চাহিদা বুঝে প্রচুর নতুন নতুন শিল্প স্থাপন করতে হবে। বিএনপির নির্বাচনী ইশতেহারে দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন কীভাবে গতিশীল করা যায়Ñ সেই দিকনির্দেশনা থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অন্য আলোচকরা দক্ষিণ-পশ্চিমের বন্দর, পর্যটন, কৃষি, শিল্পের গুরুত্ব তুলে ধরে এই এলাকার ব্যবসা বিকাশে সরকারের বিশেষ দৃষ্টি কামনা করেন।
সভা পরিচালনা করেন যশোর চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক শ্যামল দাস।