ঢাকা ০৩:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
প্রত্যয় লিডারশীপ কর্মশালা-২৫ সম্পন্ন বাকৃবিতে জুলাই স্মারক বিতর্ক প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন ‘জন্মভূমি অথবা মৃত্যু’ দৈনিক বাংলাদেশের চিত্রের চট্টগ্রাম ক্রাইম রিপোর্টার আহাম্মদ নূর দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ — সকলের দোয়া প্রার্থনা নেহালপুর ইউনিয়নে কুন্দিপুর গ্রামে জিলানির গাঁজা ও ইয়াবার রমরমা মাদক ব্যবসা প্রসাশন নিরব ভূমিকা ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক আধার মানিক শ্রীশ্রী গৌরাঙ্গ বাড়ী নিবন্ধিত সাতক্ষীরার ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়িতে কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু নেহালপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর বোয়ালমারীর বাক্কা ও কুন্দিপুরের রাশেদুল ও আলামিনের গাঁজা ও ইয়াবার মাদকের রমরমা ব্যবসা খাগড়াছড়ি ২৯৮ আসনে নির্বাচনী হাওয়া রাজাপুরে ছাত্রদলের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত কুলিয়ায় বাজারে ২টা বেকারীর নোংরা পরিবেশ ও অপদ্রব্যের মিশ্রণ করায় ১২ হাজার জরিমানা

স্বল্পমূল্যেই ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন বাকৃবি গবেষকের

নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৭:৫৩:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫ ৫৩ বার পড়া হয়েছে

বাকৃবি প্রতিনিধি:
দেশে প্রথমবারের মত গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ রোগের ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান ও তার গবেষক দল। চার বছরের গবেষণা শেষে এই ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান তিনি। অধ্যাপক বাহানুরের এই গবেষক দলে ছিলেন ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ মূলত গাভীর ওলানে সংঘটিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগে গাভীর ওলান ফুলে যায়, ওলানে জ্বালাপোড়া সহ ব্যথা অনুভূত হয় ও গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায়। অধিক সংক্রমণে গাভীর দুধ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে খামারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এই রোগের ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত এন্টিবায়োটিক রেসিট্যান্ট হওয়ায় প্রতিষেধক চিকিৎসায় কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায় না।

ড. বাহানুর বলেন, ২০২০ সালে আমরা গবেষনাটি শুরু করি। আমরা ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা সহ ৯ টি জেলার ২০৯ টি খামারে জরিপ পরিচালনা করি। জরিপে আমরা ৪৬% গাভীতে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ খুজে পাই। মাঠ পর্যায় থেকে আমরা স্যাম্পল সংগ্রহ করে সোমটিক সেল কাউন্টের মাধ্যমে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ ও এর তীব্রতা নিরুপণ করি। পরবর্তীতে গবেষণাগারে দীর্ঘ ক্লিনিকাল টেস্ট ও প্রক্রিয়াকরণ শেষে আমরা এই ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হই। ৫১৭ টি গাভী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। এই ভ্যাক্সিন তৈরিতে ৪টি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করেছি। ব্যাকটেরিয়াগুলো হলো- Streptococcus agalactiae, Escherichia coli, Staphylococcus aureus ও Streptococcus uberis। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনা থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। চারটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে বিধায় একে Polyvalent Mastitis Vaccine বলে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো জুনোটিক স্বভাবের কারণে প্রাণী থেকে মানুষেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

জানা যায়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (বাস-ইউএসডিএ) প্রোগ্রামের অর্থায়নে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর এই গবেষণাটি শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। গবেষণাটির মেয়াদকাল ছিলো তিন বছর এবং এটি ২০২৪ সালের ১১ জুন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে উপস্থাপন করা হয়।

ড.বাহানুর বলেন, ভালো দুধ উৎপাদনে গাভীর ওলানের সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ছত্রাকের আক্রমণে গাভীর এই রোগ হয়ে থাকে। দেশে পূর্বে এই রোগের ভ্যাক্সিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে এই ভ্যাক্সিন দেশে আর পাওয়া যায় না। গাভীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে ও দুধ উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেই উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে আমরাই প্রথম ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিনটি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ হলেই সেটি সফল হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু উদ্ভাবিত আমাদের ভ্যাক্সিনটি প্রায় শতভাগ কার্যকর।

ভ্যাক্সিনটির ব্যবহারবিধি সম্পর্কে অধ্যাপক বাহানুর রহমান বলেন, উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনটি ইঁদুর ও গিনিপিগে প্রয়োগ করে এর নিরাপত্তা যাচাই করা হয়েছে এবং পঞ্চম প্রজন্মের এডজুভেন্ট এই ভ্যাক্সিনে ব্যবহার করা হয়েছে। ভ্যাক্সিনটি গাভীর গর্ভাবস্থায় প্রয়োগ করতে হয়। ভ্যাক্সিনটির দুইটি ডোজ গাভীকে দিতে হবে। প্রথম ডোজ গর্ভাবস্থার ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ডোজ বাচ্চা হবার আগ মুহূর্তে অর্থাৎ ৯ থেকে সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে দিতে হবে। প্রতি প্রাণিকে ৫ মিলি করে ভ্যাক্সিন প্রতি ডোজে দিতে হবে। এই ভ্যাক্সিনের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ভ্যাক্সিনের দুইটি ডোজ গাভীকে দিয়ে দিলে ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে। বাজারজাত করা সম্ভব হলে এই ভ্যাক্সিনের দাম কৃষকের নাগালের মধ্যেই থাকবে।

আলিফ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

স্বল্পমূল্যেই ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন বাকৃবি গবেষকের

আপডেট সময় : ০৭:৫৩:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

বাকৃবি প্রতিনিধি:
দেশে প্রথমবারের মত গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ রোগের ভ্যাক্সিন উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন ও মাইক্রোবায়োলজি এন্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. বাহানুর রহমান ও তার গবেষক দল। চার বছরের গবেষণা শেষে এই ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন বলে জানান তিনি। অধ্যাপক বাহানুরের এই গবেষক দলে ছিলেন ড. মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নরত কয়েকজন শিক্ষার্থী।

জানা যায়, গবাদিপশুর ম্যাসটাইটিস বা ওলান প্রদাহ মূলত গাভীর ওলানে সংঘটিত ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক ব্যাধি। এ রোগে গাভীর ওলান ফুলে যায়, ওলানে জ্বালাপোড়া সহ ব্যথা অনুভূত হয় ও গাভীর দুধ উৎপাদন কমে যায়। অধিক সংক্রমণে গাভীর দুধ উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এতে খামারীরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এই রোগের ব্যাকটেরিয়া প্রচলিত এন্টিবায়োটিক রেসিট্যান্ট হওয়ায় প্রতিষেধক চিকিৎসায় কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায় না।

ড. বাহানুর বলেন, ২০২০ সালে আমরা গবেষনাটি শুরু করি। আমরা ঢাকা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা সহ ৯ টি জেলার ২০৯ টি খামারে জরিপ পরিচালনা করি। জরিপে আমরা ৪৬% গাভীতে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ খুজে পাই। মাঠ পর্যায় থেকে আমরা স্যাম্পল সংগ্রহ করে সোমটিক সেল কাউন্টের মাধ্যমে ম্যাসটাইটিসের সংক্রমণ ও এর তীব্রতা নিরুপণ করি। পরবর্তীতে গবেষণাগারে দীর্ঘ ক্লিনিকাল টেস্ট ও প্রক্রিয়াকরণ শেষে আমরা এই ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনে সক্ষম হই। ৫১৭ টি গাভী থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। এই ভ্যাক্সিন তৈরিতে ৪টি ব্যাকটেরিয়া নিয়ে কাজ করেছি। ব্যাকটেরিয়াগুলো হলো- Streptococcus agalactiae, Escherichia coli, Staphylococcus aureus ও Streptococcus uberis। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো গবেষণায় ব্যবহৃত নমুনা থেকেই সংগ্রহ করা হয়েছে। চারটি ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে কাজ করে বিধায় একে Polyvalent Mastitis Vaccine বলে। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো জুনোটিক স্বভাবের কারণে প্রাণী থেকে মানুষেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

জানা যায়, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী-ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (বাস-ইউএসডিএ) প্রোগ্রামের অর্থায়নে ২০২০ সালের ১ অক্টোবর এই গবেষণাটি শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়। গবেষণাটির মেয়াদকাল ছিলো তিন বছর এবং এটি ২০২৪ সালের ১১ জুন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে উপস্থাপন করা হয়।

ড.বাহানুর বলেন, ভালো দুধ উৎপাদনে গাভীর ওলানের সুস্থতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। মূলত ব্যাকটেরিয়া ও ক্ষেত্র বিশেষে কিছু ছত্রাকের আক্রমণে গাভীর এই রোগ হয়ে থাকে। দেশে পূর্বে এই রোগের ভ্যাক্সিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও বর্তমানে এই ভ্যাক্সিন দেশে আর পাওয়া যায় না। গাভীর সুস্থতা নিশ্চিত করতে ও দুধ উৎপাদন যাতে ব্যাহত না হয় সেই উদ্দেশ্যে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে আমরাই প্রথম ম্যাসটাইটিস ভ্যাক্সিনটি উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী কোনো ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতা ৭০ শতাংশ হলেই সেটি সফল হিসেবে বিবেচিত হয়। কিন্তু উদ্ভাবিত আমাদের ভ্যাক্সিনটি প্রায় শতভাগ কার্যকর।

ভ্যাক্সিনটির ব্যবহারবিধি সম্পর্কে অধ্যাপক বাহানুর রহমান বলেন, উদ্ভাবিত ভ্যাক্সিনটি ইঁদুর ও গিনিপিগে প্রয়োগ করে এর নিরাপত্তা যাচাই করা হয়েছে এবং পঞ্চম প্রজন্মের এডজুভেন্ট এই ভ্যাক্সিনে ব্যবহার করা হয়েছে। ভ্যাক্সিনটি গাভীর গর্ভাবস্থায় প্রয়োগ করতে হয়। ভ্যাক্সিনটির দুইটি ডোজ গাভীকে দিতে হবে। প্রথম ডোজ গর্ভাবস্থার ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে এবং দ্বিতীয় ডোজ বাচ্চা হবার আগ মুহূর্তে অর্থাৎ ৯ থেকে সাড়ে ৯ মাসের মধ্যে দিতে হবে। প্রতি প্রাণিকে ৫ মিলি করে ভ্যাক্সিন প্রতি ডোজে দিতে হবে। এই ভ্যাক্সিনের কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। ভ্যাক্সিনের দুইটি ডোজ গাভীকে দিয়ে দিলে ম্যাসটাইটিসে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রায় ৯০ শতাংশ কমে যাবে। বাজারজাত করা সম্ভব হলে এই ভ্যাক্সিনের দাম কৃষকের নাগালের মধ্যেই থাকবে।

আলিফ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ