সিডরে ক্ষতবিক্ষত শরণখোলা এখন বাগেরহাটের দর্শনীয় স্থান

- আপডেট সময় : ০৩:৩২:১০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ১০১ বার পড়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার:-
২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর দক্ষিণবঙ্গের মানুষদের জন্য এক কালো দিন। প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় সিডরে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চল শরণখোলা। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বাগেরহাটের আওতাধীন একটি উপজেলা। সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল এতদঞ্চল, প্রাণ হারিয়েছিল হাজার-হাজার মানুষ ও পশুপাখি। ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে পানির সাথে একাকার হয়ে মিশে গিয়েছিল শরণখোলা।
উপকূলীয় অঞ্চল শরণখোলাকে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙনের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য ২০১৬ সালে বলেশ্বর নদীর পাড়ঘেঁষে নির্মাণ করা হয়েছিল কংক্রিট ব্লকের টেকসই বেড়িবাঁধ। ৬২ কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে আছে এই কংক্রিট ব্লক। নদীতীরে বড়ইতলা এলাকার প্রায় এক কি.মি. জায়গাজুড়ে কংক্রিট ব্লককে রঙিন করে সাজিয়ে ২০২২ সালে গড়ে তোলা হয় ‘ শরণখোলা রিভারভিউ ইকোপার্ক’। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গড়ে তোলা এই রিভারভিউ ইকো পার্ক এখন আশপাশের এলাকাসহ দূরের মানুষের দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত মানুষের ভীড়ে জমজমাট থাকে এই পার্ক এলাকা। জোয়ান, বৃদ্ধ, শিশু, নারী-পুরুষ সবাই আসেন বলেশ্বরের পাড়ঘেঁষে গড়ে তোলা এই রিসোর্ট দেখতে। বেড়িবাঁধের সামনে আওয়াজ করে বয়ে চলেছে খরস্রোতা নদী বলেশ্বর, উপরে সাদা বা নীল আকাশ, আবার নদীর তীর ধরে সবুজ গাছের সারি। নদীর পাড়ে আরাম করে বসার জন্য ব্যবস্থা আছে বিচ খাট ও ছাতার। এই পার্ক কেন্দ্র করে চা, চানাচুর, বাদাম, ফুসকার বেশ কিছু দোকানও গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় এক চা দোকানির সাথে কথা বলে জানা যায়, এই রিসোর্ট থেকে আরও কিছু সামনে গেলে দেখা মিলবে সুন্দরবনের (আনুমানিক ২৫ কি. মি.)। উল্লেখ্য, সুন্দরবনের জামতলা সী বিচ ও কটকা অভয়ারণ্যের দেখা মিলে এই শরণখোলাতেই। তাছাড়া বঙ্গোপসাগর (Bay of Bengal) এখান থেকে খুব বেশি দূরে না। স্থানীয় জেলেরা ১০-১৫ দিনের জন্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় চলে যান মাছ ধরার জন্য।
তবে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের লীলাভূমি শরণখোলা এখনও শংকামুক্ত নয়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় দুশ্চিন্তায় রাত কাটাতে হয় স্থানীয়দের। কারণ, নদীর স্রোত কখনও কখনও ভেঙে ফেলে দেয় বেড়িবাঁধ। সিডরের ভয়াবহতার বিষাদ চিত্র আজ পর্যন্ত মুছে যায় নি শরণখোলার বাসিন্দাদের হৃদয়পট থেকে। স্বজন হারানোর ব্যথায় এখনও মাঝে মাঝে স্থানীয়রা বিভীষিকাময় সেই রাতের কথা মনে করে স্মৃতিকাতর হন। তবে দুর্যোগপ্রবণ শরণখোলাতে বলেশ্বরের পাড় ঘেঁষে গড়ে তোলা ইকো পার্ক এতদঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। দিনে দিনে আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শরণখোলার রিভারভিউ ইকোপার্ক।
শরণখোলা রিভারভিউ ইকো পার্কে আসতে হলে ঢাকাসহ দেশের যেকোনো জায়গা থেকে পরিবহনে সড়কপথে রায়েন্দা বাসস্ট্যান্ড নামতে হবে। সেখান থেকে ভ্যান বা অটোতে রায়েন্দা-মাসুয়া ফেরিঘাট হয়ে পৌঁছে যাওয়া যাবে বাগেরহাটের এই দর্শনীয় স্থানে।