ঢাকা ০৩:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
নতুন কুঁড়ি ও মার্কস অলরাউন্ডার কৃতিত্বে ফেনীর দুই শিক্ষার্থী কুতুবদিয়া কালী মন্দিরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মতবিনিময় সভা রাজাপুরে ধানের শীষের পক্ষে গোলাম আজম সৈকতের গণসংযোগ শার্শায় সাংবাদিক মনি’র মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন কাউখালি বেকুটিয়ায় বিশ্ব নদী দিবস ২০২৫ইং পালিত শাল্লায় বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক কর্মচারী ফোরাম’র উপজেলা শাখায় কমিটি গঠন করা হয় বিশ্ব নদী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে গ্রীন ভয়েসের মানববন্ধন কুলিয়া চরবালিথা মুনষ্টার তরুণ সংঘের নবনির্বাচিত কমিটির সদস্যদের সংবর্ধনা উজিরপুরে বিএনপি নেতা বহিষ্কার: ধর্মীয় সম্প্রীতি ভাঙা ও কুকীর্তির গল্প শ্যামনগরে বিশ্ব নদী দিবসে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

সাইকেল চাই না, আমার বাবার লাশটা এনে দেন

নিজেস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৯:২৮:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪ ৯৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া
কোরবানির ঈদের পরের দিন বাবার কাছে একটি সাইকেল চেয়েছিলাম, বাবা আমাকে কিনে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আর সাইকেল চাই না। আমি শুধু আমার বাবাকে শেষবারের মতো একটু দেখতে চাই। আমার বাবার লাশটা দেশে এনে দেন।’ কান্না করতে করতে এ কথাগুলো বলছিল মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মিলন মাতুব্ববের ৯ বছর বয়সী ছেলে আবির।

বাবাকে একনজর দেখার আকুতি জানিয়ে শিশু আবির আরও বলে, ‘আমি বড়। আমার ছোট দুই ভাই ও মা আছে। আমি মাদ্রাসায় পড়ি। আমার বাবা সৌদিতে মারা গেছে। এখন আমার মাদ্রাসার খরচ কে দেবে? আমাদের দেখার মতো কেউ নাই। আপনারা আমার বাবাকে এক নজর দেখার ব্যবস্থা করে দিন।’

স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ৫ বছর আগে সৌদি যায় পশ্চিম খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেঝ।

রিয়াদের হালুজারায় কাজ করেও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেননি মিলন। আকামাসহ নিজ খরচ শেষে কোনো রকম টেনেটুনে সংসারের খরচ চালাতেন। গত ১৮ জুন রাতে বাসায় ব্রেন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিলন। এ সময় একই সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা তাকে রিয়াদের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ৬ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিলন। রবিবার (২৩ জুন) দুপুরে সৌদি থেকে তার পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর জানালে স্বজনদের মাঝে আহাজারি শুরু হয়।

মিলনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন, কেরামত আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মিলনের কয়েক লাখ টাকা দেনা রয়েছে। তবে তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা চাই সরকার যেন মিলনের লাশটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে। আমরা যেন অন্তত তাকে দাফন করতে পারি।

মিলনের স্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেখার মতো কেউ রইল না। আমাদের তিন ছেলেকে এখন কে দেখবে? আমাদের প্রায় ২০ লাখ টাকার দেনা। এই দেনা কিভাবে শোধ করব। আমার স্বামীর লাশটা দেখতে চাই। কিন্তু সৌদি থেকে টাকা খরচ করে লাশ দেশে আনার সামর্থ্য আমাদের নাই। সরকারের কাছে দাবি আমার স্বামীর লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।’

অপরদিকে শেষ বারের মতো ছেলের লাশ দেখতে একইভাবে সকলের কাছে আকুতি জানান মিলনের মা ও বাবা।

এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করে লাশটি দেশে আনার চেষ্টা করব। তবে আর্থিক সহযোগিতা করার মতো আমাদের কাছে কিছু নেই। কিন্তু আবেদন করলে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করব।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

সাইকেল চাই না, আমার বাবার লাশটা এনে দেন

আপডেট সময় : ০৯:২৮:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রিয়াজ মিয়া
কোরবানির ঈদের পরের দিন বাবার কাছে একটি সাইকেল চেয়েছিলাম, বাবা আমাকে কিনে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন আর সাইকেল চাই না। আমি শুধু আমার বাবাকে শেষবারের মতো একটু দেখতে চাই। আমার বাবার লাশটা দেশে এনে দেন।’ কান্না করতে করতে এ কথাগুলো বলছিল মাদারীপুরের মস্তফাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামের সৌদি প্রবাসী মিলন মাতুব্ববের ৯ বছর বয়সী ছেলে আবির।

বাবাকে একনজর দেখার আকুতি জানিয়ে শিশু আবির আরও বলে, ‘আমি বড়। আমার ছোট দুই ভাই ও মা আছে। আমি মাদ্রাসায় পড়ি। আমার বাবা সৌদিতে মারা গেছে। এখন আমার মাদ্রাসার খরচ কে দেবে? আমাদের দেখার মতো কেউ নাই। আপনারা আমার বাবাকে এক নজর দেখার ব্যবস্থা করে দিন।’

স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ৫ বছর আগে সৌদি যায় পশ্চিম খৈয়ারভাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল হক মাতুব্বরের ছেলে মিলন। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন মেঝ।

রিয়াদের হালুজারায় কাজ করেও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেননি মিলন। আকামাসহ নিজ খরচ শেষে কোনো রকম টেনেটুনে সংসারের খরচ চালাতেন। গত ১৮ জুন রাতে বাসায় ব্রেন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন মিলন। এ সময় একই সঙ্গে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীরা তাকে রিয়াদের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানেই ৬ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিলন। রবিবার (২৩ জুন) দুপুরে সৌদি থেকে তার পরিবারের কাছে মৃত্যুর খবর জানালে স্বজনদের মাঝে আহাজারি শুরু হয়।

মিলনের প্রতিবেশী রুহুল আমিন, কেরামত আলীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মিলনের কয়েক লাখ টাকা দেনা রয়েছে। তবে তিনি খুব ভালো মানুষ ছিলেন। আমরা চাই সরকার যেন মিলনের লাশটি দেশে আনার ব্যবস্থা করে। আমরা যেন অন্তত তাকে দাফন করতে পারি।

মিলনের স্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেখার মতো কেউ রইল না। আমাদের তিন ছেলেকে এখন কে দেখবে? আমাদের প্রায় ২০ লাখ টাকার দেনা। এই দেনা কিভাবে শোধ করব। আমার স্বামীর লাশটা দেখতে চাই। কিন্তু সৌদি থেকে টাকা খরচ করে লাশ দেশে আনার সামর্থ্য আমাদের নাই। সরকারের কাছে দাবি আমার স্বামীর লাশটা যেন দেশে আনার ব্যবস্থা করে দেয়।’

অপরদিকে শেষ বারের মতো ছেলের লাশ দেখতে একইভাবে সকলের কাছে আকুতি জানান মিলনের মা ও বাবা।

এ বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মারুফুর রশিদ খান বলেন, আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা ঢাকায় যোগাযোগ করে লাশটি দেশে আনার চেষ্টা করব। তবে আর্থিক সহযোগিতা করার মতো আমাদের কাছে কিছু নেই। কিন্তু আবেদন করলে স্থানীয়ভাবে সহযোগিতা করব।