শাল্লায় সরকারি জমিতে অবৈধ স্থাপনা
- আপডেট সময় : ০১:১৪:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫ ৬৬ বার পড়া হয়েছে

শাহীন খান, শাল্লা প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার ১নং আটগাও ইউনিয়ন পরিষদে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির এক ডিলারের বিরুদ্ধে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করে চাল বিতরণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় বিএনপি নেতা পরিচয়ে পরিচিত অভিযুক্ত ডিলার সালাম মিয়ার এই কর্মকাণ্ডে ডিলারশিপ অনুমোদন প্রক্রিয়া নিয়ে জনমনে তীব্র অসন্তোষ ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ডিলারশিপ পাওয়ার ক্ষেত্রে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা-২০২৪-এর একাধিক মৌলিক শর্ত সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে।
খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালা-২০২৪ অনুযায়ী, ডিলারকে ইউনিয়নের নির্ধারিত হাট/বাজারের নিজস্ব বা ভাড়ার দোকান থাকতে হবে এবং সেখানে কমপক্ষে ১৫ (পনের) মে. টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের সুব্যবস্থা থাকতে হবে। কিন্তু সরেজমিন অনুসন্ধানে এই শর্তগুলোর মারাত্মক ব্যত্যয় লক্ষ্য করা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ডিলার সালাম মিয়া আটগাও ইউনিয়ন পরিষদের সরকারি জমিতে অবৈধভাবে একটি ঘর নির্মাণ করে সেখানেই তাঁর চাল বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক মেম্বার কালাম মিয়া, ইউনূস মিয়া সহ আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় প্রায় দুই মাস আগে এই অবৈধ স্থাপনাটি গড়ে তোলা হয়েছে।
নীতিমালায় ১৫ মে. টন খাদ্যশস্য সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও, সরেজমিনে দেখা গেছে ডিলারের সরকারি ভূমিতে নির্মিত ঘরটিতে সর্বোচ্চ ৫ থেকে ৬ মে. টন খাদ্যশস্য মজুদ রাখা সম্ভব। নীতিমালা অনুযায়ী ভাড়ার দোকানের ক্ষেত্রে ৩০০/- টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ভাড়ার চুক্তিপত্র জমা দেওয়ার বিধান রয়েছে। সরকারি জায়গা দখল করে নির্মিত একটি অবৈধ স্থাপনার জন্য কিভাবে বৈধ ভাড়ার চুক্তিপত্র তৈরি এবং তা ডিলারশিপের জন্য গৃহীত হলো, তা নিয়ে জনমনে তীব্র প্রশ্ন উঠেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি এই ডিলারশিপ অনুমোদনের পেছনে বড় ধরনের অনিয়ম থাকার সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, দাউদপুর বাজার কমিটির সহ-সভাপতি প্রেমতুষ দাস অভিযোগ করেন, ঘরটি যেখানে নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে পূর্বে গ্রামের শিব (বেন্নাথ) গাছ থাকায় তারা পূজা-পার্বণে প্রসাদ বিতরণ করতেন। তিনি বলেন, ডিলার ও চেয়ারম্যান তাদের বলেছিলেন ‘কিছু দিনের জন্য চাল বিতরণ করা হবে, পরে ভেঙে ফেলা হবে’। কিন্তু এখন যেভাবে কার্যক্রম চলছে, তাতে স্পষ্টতই জায়গাটি দখল করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, বিএনপি নেতা সালাম হঠাৎ করেই পরিষদের জায়গায় ২০/৪০ জন মানুষ নিয়ে এসে সিমেন্টের পিলার দিয়ে ঘর নির্মাণ করে। তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা বলে এখানে খাদ্যবান্ধব চাল বিতরণের জন্য এটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই বিষয়ে ইউএনও সাহেব অবগত আছেন বলে জানান তিনি।
আটঁগাও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আন্-নোমান স্থাপনাটির অবৈধতা স্বীকার করে বলেন, “এটা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের জায়গা না। এখানে পূর্বে বিআরডিবির অফিস ছিল। এখানে আমরা অস্থায়ী কার্যালয় করেছি। এই জায়গাটি সরকারি জমি… স্থাপনাটি অবৈধ।” তবে তিনি দাবি করেন, ডিলার সালাম মিয়ার বাজারে দোকান থাকলেও জায়গা কম থাকায় এখানে এসে চাল বিতরণ করে থাকেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, “এই বিষয়ে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সচেতন মহলের দাবি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং সরকারি ভূমি দখলের অভিযোগ একটি গুরুতর অপরাধ।
স্থানীয়রা মনে করছেন, অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা কমিটির মাধ্যমে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিলারশিপের শর্ত পূরণের নথি এবং স্থাপনার বৈধতা যাচাই করা প্রয়োজন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডিলারের লাইসেন্স বাতিল, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।



















