ঢাকা ১২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৯ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
বিএনপির ঠাকুরগাঁওয়ের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা সাতক্ষীরার চারটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা আগৈলঝাড়া মসজিদের ইমামের উপর প্রতিপক্ষের হামলা রাণীশংকৈলে অসময়ে বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি.. হতাশাগ্রস্ত কৃষক সাতক্ষীরা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ কার্তিকের অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বাড়ি ভেঙে অসহায়, সহযোগিতা কামনা ফেনী পৌরসভার মধ্যম বিরিঞ্চির আব্দুস সোবহান মুন্সীর ইন্তেকাল দুমকিতে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ ‎উপজেলা পর্যায়ে গ্ৰাম আদালত কার্যক্রমের ত্রৈমাসিক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত ‎ কোয়েপাড়ায় সর্বজনীন শ্রীশ্রী জগদ্ধাত্রী পূজা ও অষ্টপ্রহরব্যাপী মহোৎসব অনুষ্ঠিত

শাল্লায় মরণফাঁদে চাকুয়া-মিলনবাজার রাস্তা : প্রায় ৩ হাজার মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত 

নিজেস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৮:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫ ৫০ বার পড়া হয়েছে

তৌফিকুর রহমাম তাহের, সুনামগঞ্জ বিশেষ প্রতিনিধি;

​দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে সংস্কারের অভাবে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার ২নং হবিবপুর ইউনিয়নের চাকুয়া গ্রাম থেকে মিলনবাজার পর্যন্ত সংযোগকারী একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বর্তমানে স্থানীয়দের জন্য ‘মরণফাঁদ’-এ পরিণত হয়েছে। প্রায় ১৩০০ মিটার (১.৩ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই সংযোগ সড়কটির চরম বেহাল দশার কারণে গ্রামের প্রায় ৩০০০ মানুষের দৈনন্দিন জীবন, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে রাস্তাটি সংস্কার বা পাকাকরণ না হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

চাকুয়া গ্রামটি হবিবপুর ইউনিয়নের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, যেখানে আনুমানিক ৩০০০ লোকের বসবাস। তাদের দৈনন্দিন কাজ, কৃষিপণ্য পরিবহন, শিক্ষা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য মিলনবাজারই একমাত্র ভরসা। মিলনবাজার হয়েই সিএনজি যোগে দিরাই অথবা নৌকাযোগে উপজেলা সদর শাল্লায় যেতে হয়।

কিন্তু গ্রামের এই ১৩০০ মিটার রাস্তাটি বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে চলাচলের অনুপযোগী। রাস্তার ব্লকগুলো স্থানে স্থানে সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দ ও গভীর গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব গর্তে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় কাদা-জল পেরিয়ে হেঁটে চলাচল করাও অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

​স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীরা জানান, এই রাস্তাটির করুণ দশার কারণে গ্রামে যানবাহন প্রবেশ করতে চাইছে না। কোনো যানবাহন প্রবেশ করলেও প্রায়শই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে গ্রামের অর্থনীতিতে; কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে পারছেন না।

গ্রামের বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রীতম দাস বলেন, “রাস্তাটির জীর্ণ দশার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে, অসুস্থ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। এই ১৩০০ মিটার পথটুকু আমাদের জন্য এখন অভিশাপ।” 

চাকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার সিংহ বলেন, রাস্তার ব্লক সরে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জল জমে পিচ্ছিল হয়, যার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার সময় নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় সূত্র মতে, সড়কটি ২০১০ সালে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)-এর উদ্যোগে ব্লকের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্মাণের পর দীর্ঘ ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও রাস্তাটিতে আর কোনো ধরনের সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বা মেরামতের কাজ করা হয়নি।

গ্রামের সাবেক মেম্বার অধীর চন্দ্র দাস জানান, বিগত বছরে সবাই মিলে নিজ অর্থায়নে কিছু ব্লক বসিয়ে সাময়িকভাবে রাস্তাটি মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নিম্নমানের কাজের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি সরে গিয়ে পুনরায় আগের মতো গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় মেম্বার সুনীল চন্দ্র দাস সমস্যার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অবিলম্বে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কার করা প্রয়োজন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি পাকা করে নির্মাণ করার জোর দাবি জানান।

​এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আরিফ উল্লা খান বলেন, “যে প্রকল্প থেকে ব্লকের রাস্তা দেওয়া হয়েছিল, সেটা শেষ হয়ে গেছে। তবে নতুন করে প্রকল্প আসছে। তখন উপজেলার যে কয়েকটি ব্লকের রাস্তা আছে, সেগুলো পাকাকরণ করা হবে।”

​চাকুয়া গ্রামের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং উপজেলা প্রশাসনের প্রতি গ্রামবাসী অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য

দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল। এই পত্রিকার মূল স্লোগান হলো "সত্য প্রকাশে আপোষহীন"।আমরা এ দেশের নিপীড়িত ও নির্যাতিত মানুষের কথা বলি।একজন অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়ে অন্যায় প্রতিরোধে সাহায্য করতে আমরা সর্বদা অঙ্গীকারবদ্ধ।দৈনিক বাংলাদেশের চিত্র পত্রিকা গনমানুষের কথা বলে।
ট্যাগস :

শাল্লায় মরণফাঁদে চাকুয়া-মিলনবাজার রাস্তা : প্রায় ৩ হাজার মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত 

আপডেট সময় : ০৬:৩৮:০৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩ নভেম্বর ২০২৫

তৌফিকুর রহমাম তাহের, সুনামগঞ্জ বিশেষ প্রতিনিধি;

​দীর্ঘ প্রায় দেড় দশক ধরে সংস্কারের অভাবে সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার ২নং হবিবপুর ইউনিয়নের চাকুয়া গ্রাম থেকে মিলনবাজার পর্যন্ত সংযোগকারী একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি বর্তমানে স্থানীয়দের জন্য ‘মরণফাঁদ’-এ পরিণত হয়েছে। প্রায় ১৩০০ মিটার (১.৩ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই সংযোগ সড়কটির চরম বেহাল দশার কারণে গ্রামের প্রায় ৩০০০ মানুষের দৈনন্দিন জীবন, অর্থনীতি, শিক্ষা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দ্রুততম সময়ে রাস্তাটি সংস্কার বা পাকাকরণ না হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

চাকুয়া গ্রামটি হবিবপুর ইউনিয়নের একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, যেখানে আনুমানিক ৩০০০ লোকের বসবাস। তাদের দৈনন্দিন কাজ, কৃষিপণ্য পরিবহন, শিক্ষা এবং জরুরি স্বাস্থ্যসেবার জন্য মিলনবাজারই একমাত্র ভরসা। মিলনবাজার হয়েই সিএনজি যোগে দিরাই অথবা নৌকাযোগে উপজেলা সদর শাল্লায় যেতে হয়।

কিন্তু গ্রামের এই ১৩০০ মিটার রাস্তাটি বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে চলাচলের অনুপযোগী। রাস্তার ব্লকগুলো স্থানে স্থানে সরে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দ ও গভীর গর্ত। সামান্য বৃষ্টিতেই এসব গর্তে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ায় কাদা-জল পেরিয়ে হেঁটে চলাচল করাও অত্যন্ত বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

​স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীরা জানান, এই রাস্তাটির করুণ দশার কারণে গ্রামে যানবাহন প্রবেশ করতে চাইছে না। কোনো যানবাহন প্রবেশ করলেও প্রায়শই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে গ্রামের অর্থনীতিতে; কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিতে পারছেন না।

গ্রামের বাসিন্দা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রীতম দাস বলেন, “রাস্তাটির জীর্ণ দশার কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অন্যদিকে, অসুস্থ রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। এই ১৩০০ মিটার পথটুকু আমাদের জন্য এখন অভিশাপ।” 

চাকুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসীম কুমার সিংহ বলেন, রাস্তার ব্লক সরে গিয়ে গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে জল জমে পিচ্ছিল হয়, যার ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়ার সময় নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে।

স্থানীয় সূত্র মতে, সড়কটি ২০১০ সালে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও)-এর উদ্যোগে ব্লকের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নির্মাণের পর দীর্ঘ ১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও রাস্তাটিতে আর কোনো ধরনের সরকারি বা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বা মেরামতের কাজ করা হয়নি।

গ্রামের সাবেক মেম্বার অধীর চন্দ্র দাস জানান, বিগত বছরে সবাই মিলে নিজ অর্থায়নে কিছু ব্লক বসিয়ে সাময়িকভাবে রাস্তাটি মেরামতের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু নিম্নমানের কাজের ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই মাটি সরে গিয়ে পুনরায় আগের মতো গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় মেম্বার সুনীল চন্দ্র দাস সমস্যার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে অবিলম্বে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি সংস্কার করা প্রয়োজন। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জরুরি ভিত্তিতে রাস্তাটি পাকা করে নির্মাণ করার জোর দাবি জানান।

​এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আরিফ উল্লা খান বলেন, “যে প্রকল্প থেকে ব্লকের রাস্তা দেওয়া হয়েছিল, সেটা শেষ হয়ে গেছে। তবে নতুন করে প্রকল্প আসছে। তখন উপজেলার যে কয়েকটি ব্লকের রাস্তা আছে, সেগুলো পাকাকরণ করা হবে।”

​চাকুয়া গ্রামের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ও গতিশীল রাখতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) এবং উপজেলা প্রশাসনের প্রতি গ্রামবাসী অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।