রাশিয়ার আকাশে আগুনের রক্তলাল রাত্রি: পুতিনের হেলিকপ্টারে হামলার নাটকীয়তা

- আপডেট সময় : ০১:২৬:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫ ৪৩ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক: গালিব খাঁন:-
সেই রাতে রাশিয়ার আকাশ যেন থমকে গিয়েছিল। মস্কো থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে, যেখানে গাছের ডালে শীতল বাতাসের দোলনদোলা, সেখানে হঠাৎ যেন বজ্রনিনাদের মতো বেজে উঠলো যুদ্ধের রণরণ্ ধ্বনি। সময় তখন রাতের শেষ প্রহর, ২৬ মে ২০২৫, স্থানীয় সময় রাত ১টা ৪০ মিনিট।
বিস্ময়কর সেই রাতের খবর এলো প্রথমে Meduza নিউজ পোর্টালের প্রতিবেদনে—রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারি ব্যবহৃত হেলিকপ্টার বহরের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। প্রতিপক্ষের ড্রোন হানা—হ্যাঁ, ড্রোন—যা কিনা রাশিয়ার বুকে হিমশীতল আতঙ্কের বাতাস বইয়ে দিল। তবে কি এবার পুতিনের মহা শক্তির ঘরেও ফাটল ধরতে চলেছে?
প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পুতিন ব্যক্তিগতভাবে হেলিকপ্টারে ছিলেন না, তবে হেলিকপ্টার বহরে তার নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা ছিলেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একদল অজ্ঞাত ড্রোন বহর ওই হেলিকপ্টার বহরের ওপর হঠাৎ আক্রমণ চালায়। হেলিকপ্টারটি তৎক্ষণাৎ জরুরি অবতরণ করতে বাধ্য হয়। হতাহতের সঠিক সংখ্যা এখনো নিশ্চিত নয়, তবে স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী আর ধ্বংসস্তূপের ছবি ভেসে এসেছে।
এই ঘটনার সঙ্গে ইউক্রেনীয় প্রতিরোধ বাহিনীর কোনো সংযোগ রয়েছে কিনা, তা এখনো তদন্তাধীন। তবে Reuters এবং The Guardian সূত্র অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় সামরিক সূত্র হামলার দায় অস্বীকার করেছে। রাশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে পাল্টা বিবৃতি—“রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা কোনোভাবেই বিঘ্নিত হয়নি। আমরা যেকোনো হুমকির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত।”
তবে এ হামলার পেছনে প্রকৃত উদ্দেশ্য কী? রাজনৈতিক বার্তা, না কি সামরিক শক্তির এক নিঃশব্দ ঘোষণা? পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থা Bellingcat-এর তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরে ক্রেমলিন-বিরোধী গোষ্ঠীর অংশগ্রহণের সম্ভাবনা। এ ঘটনায় পুতিন প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
মস্কোর বুকে সকালবেলা বাতাসে ছিল এক অদ্ভুত শূন্যতা—টিভি চ্যানেলগুলো সরকারি বিবৃতির বাইরে কোনো বিশেষ তথ্য দেখায়নি। তবে সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে টেলিগ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে হামলার ভিডিও ক্লিপ।
প্রত্যক্ষদর্শী এক কৃষক, যার নাম সের্গেই ইয়াকুশেভ, বলেছেন—”রাতের আকাশে আগুনের লাল আলো দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, যুদ্ধ যেন আমাদের গ্রামে নেমে এসেছে।”
এই ঘটনার পর পুতিন প্রশাসন তড়িঘড়ি করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে। ক্রেমলিনের সামনের সড়কে টহলদারির সংখ্যা দ্বিগুণ, সেনাদের চোখে শঙ্কা আর অস্ত্রের গর্জন যেন বাতাসে মিশে গেছে।
এই হামলার পেছনের ষড়যন্ত্র এখনো অন্ধকারে ঢাকা, কিন্তু রাশিয়ার আকাশে আজও কেঁপে কেঁপে উঠে যুদ্ধের গন্ধ। মানুষ ভাবছে, আগামীকাল কি আরও বড় কোনো বিস্ফোরণ অপেক্ষা করছে?
তথ্যসূত্র:
Meduza (২৬ মে ২০২৫)
The Guardian (২৬ মে ২০২৫)
Reuters (২৬ মে ২০২৫)
Bellingcat Intelligence Analysis (২৬ মে ২০২৫)