রংপুরে শোভা বর্ধন কারী শিমুলগাছ সবাইকে জানাচ্ছে বসন্তের অগ্রিম অভিবাদন!
- আপডেট সময় : ১১:৫০:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ মার্চ ২০২৪ ৮১ বার পড়া হয়েছে
রংপুরে শোভা বর্ধন কারী শিমুলগাছ সবাইকে জানাচ্ছে বসন্তের অগ্রিম অভিবাদন!
সেলিম চৌধুরী, জেলা প্রতিনিধি,রংপুর
তিস্তা নদীর তীরে দোল খাচ্ছে একটি শিমুলগাছ। বসন্তের আগমনে সেসব গাছ ফুলে ফুলে ভরে গেছে। বসন্ত বাতাসে শিমুল ফুলের নৃত্যের নান্দনিক দৃশ্য দেখতে সেখানে প্রতিদিন ভিড় করছেন নারী-পুরুষ, শিশুসহ নানা বয়সী দর্শনার্থী।
বসন্ত আসার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। তার আগেই বসন্তের হাওয়ায় আকুল তিস্তা নদীর ধারে শিমুল গাছ। বাতাসে দোল খাচ্ছে একটি শিমুলগাছ। সে হাওয়ায় ঝরে পড়ছে রক্তরাঙা লাল শিমুল ফুল।
তিস্তা নদীর তীরজুড়ে এখন কেবল শিমুলের মুগ্ধতা। যেন রক্তরাঙা শিমুল সবাইকে জানাচ্ছে বসন্তের অগ্রিম অভিবাদন।
এখন ফাগুন,বসন্তের আবহে গাছে পরিপক্ব শিমুল ফুল। গাছতলায়ও বিছানো অজস্র ফুল। পাখি ডাকা ভোরে গাছে থোকায় থোকায় ফুল আর রাস্তায় ঝরে পড়া ফুলগুলো দেখে মনে অন্য রকম এক অনুভূতি জাগে তিস্তার চরের মানুষের ।
বিদায় নিচ্ছে শীত, শুরু হয়েছে ঋতুরাজ বসন্তের, বইছে দক্ষিনা হাওয়া, কোকিলের কুহুতানে মুখরিত হয়ে উঠেছে তিস্তার সেই চিরচেনা গাছে সবুজ পাতা, নাকে ভেসে আসছে শিমুল ফুলের ঘ্রাণ। রংপুর জেলাধীন কাউনিয়া উপজেলাতে ও প্রকৃতি এখন এমনই রুপ।
শিমুল ফুলে এখন বসন্তের হাসি।ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে আবহমান গ্রামবাংলার প্রকৃতি রাঙিয়ে উঠে নয়নাভিরাম শিমুল ফুল।দূর থেকে হঠাৎ দেখলে ঠিক মনে হবে কেউ লাল গালিচা বিছিয়ে রেখেছেন।নিঃসঙ্গ যুগে যুগে শিমুল ফুল নিয়ে গান, গল্প, কবিতা, উপন্যাস লিখেছেন অনেক সাহিত্যিক।
বাংলাদেশে এমন কোনো অঞ্চল নেই যেখানে শিমুল ফুলের দেখা পাওয়া যাবে না জেলার বিভিন্ন পাকা সড়ক কিংবা কাচা রাস্তার দুই পাশে সারি সারি কিংবা বাঁশ ঝাড়ের ফাঁকে উকি দিয়ে দাড়িয়ে আছে শিমুল ফুলের গাছ, এ যেন অনন্য এক সৌন্দর্য।গাছে, গাছে ফুটে আছে শিমুল ফুল।চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই ফুলের পাগল করা সৌন্দয্যের সুভাষ। বাতাসে মিশে সৃষ্টি করছে মনোমুগ্ধকর মৌ মৌ গন্ধ ও সৌন্দর্য্য।যে গন্ধ ও সৌন্দর্য্য মানুষের মনকে করে তুলে বিমোহিত।সেই সাথে পাখিরাও যেন সেই প্রকৃতির ছোঁয়া নিচ্ছে।তাই শিমুল ফুলের কাছে বেশিই কদর বেড়েছে পাখির।
এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়,স্থানীয় একাধিক মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়,শিমুল ফুল শুধু সৌন্দর্য্য ছড়ায় না আরামদায়ক বিছানায় শিমুলের তুলা বেশ অতুলনীয়।
জানা যায়, এ গাছের সব অংশেই রয়েছে ভেষজগুণ।শীতের শেষে শিমুলের পাতা ঝরে পড়ে। বসন্তের শুরুতেই গাছে ফুল ফোটে। আর এ ফুল থেকেই হয় ফল। চৈত্র মাসের শেষের দিকে ফল পুষ্ট হয়। বৈশাখ মাসের দিকে ফলগুলো পেকে শুকিয়ে যায়। বাতাসে আপনা-আপনিই ফল ফেটে প্রাকৃতিকভাবে তুলার সঙ্গে উড়ে দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়া বীজ থেকেই নতুন গাছের পুনরায় জন্ম হয়।অন্যান্য গাছের মতো এ গাছ কেউ শখ করে রোপণ করে না। নেওয়া হয় না কোনো যত্ন। প্রাকৃতিকভাবেই গাছ বেড়ে ওঠে। এ গাছের প্রায় সব অংশই কাজে লাগে। এর ছাল, পাতা ও ফুল গবাদিপশুর খুব প্রিয় খাদ্য।
বর্তমানে এ গাছ কারণে-অকারণে কেটে ফেলছে মানুষ। অতীতে নানা ধরনের প্যাকিং বাক্স তৈরি ও ইটভাটার জ্বালানি, দিয়াশলাইয়ের কাঠি হিসেবে ব্যবহার হলেও সেই তুলনায় রোপণ করা হয়নি। ফলে আজ বিলুপ্তির পথে শিমুল গাছ।বিভিন্ন সূত্র হতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে শিমুল তুলা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি, আর গার্মেন্টের জুট দিয়ে তৈরি তুলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, কাপাশ তুলা ২৫০ এবং পঞ্চের তুলা ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।বন ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্টরা জানান, বাণিজ্যিকভাবে এখন দেশের কোথাও এই শিমুলগাছ বা তুলা চাষ করা হয় না।
এটি প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠে। যার কারণে শিমুলগাছ ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। এর তুলা খুবই ভালো এটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে মানুষ আসল তুলার মর্ম বুঝত।গ্রামে শিমূল গাছ ঔষধি গাছ হিসেবেও পরিচিত। কিন্তু কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় তেমন চোখে পড়ে না শিমুল গাছের। প্রতিনিয়ত বিলুপ্তি হয়ে যাচ্ছে শিমুল গাছ। যার কারণে গ্রাম বাংলার বুক থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে, অতি চিরচেনা এই শিমুল গাছ।