যশোরে ফিরছে করোনার আতঙ্ক, হাসপাতালে প্রস্তুতি শুরু

- আপডেট সময় : ০৭:৩৪:৩৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫ ৪৫ বার পড়া হয়েছে

দীর্ঘ চার বছর পর যশোরে করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসাকার্যক্রমের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। বিশ্বজুড়ে সংক্রমণের নতুন প্রবণতা দেখা দেওয়ায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালেও বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন এক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট সংগ্রহে ঢাকা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদা পাঠিয়েছে। একই সাথে হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় শহরের বারান্দিপাড়ার ৬০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা ঠান্ডা কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসক তাকে সিআরপি, আরআর সিটি ও পিসিআর পরীক্ষা দিয়েছেন। বুধবার তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পজিটিভ এলে তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হবে।
ওই নারীর ছেলে জানিয়েছেন, তার মায়ের ঠান্ডা কাশি ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলেও তাদের পুরো পরিবারের এলার্জির সমস্যা রয়েছে।
হাসপাতালের সংক্রামক ওয়ার্ডে প্রাথমিকভাবে ৫টি আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে, প্রয়োজনে তৃতীয় তলায় মহিলা মেডিসিনের একটি ওয়ার্ডকেও আইসোলেশন ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হবে বলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. হুসাইন শাফায়াত জানিয়েছেন।
হুসাইন শাফায়াত জানান, বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রবণতা দেখা দেওয়ায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে দ্রুত চাহিদা পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক, সিডিসি অধ্যাপক ডা. মো. আলিমুর রশিদ গতকাল বুধবার যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালসহ দেশের সমস্ত হাসপাতালে এ বিষয়ে চিঠি পাঠিয়ে এক কার্য দিবসের মধ্যে চাহিদাপত্র পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা জানান, হাসপাতালের একজন রোগীর করোনা সন্দেহে নমুনা সংগ্রহ করে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও জানান, এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার সদর হাসপাতালসহ সব হাসপাতালে র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হবে।
ডা. মাসুদ রানা যশোরবাসীকে বিশেষ সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগী উভয়ের মধ্যে আবার মাস্ক পরার দিকে ফিরে যাচ্ছি।’ তিনি কোভিডের একটি নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিষয়ে সতর্ক করেছেন, যা খুবই ধূর্ত ভাইরাস এবং অতীতের ভ্যারিয়েন্ট থেকে আলাদা।
সিভিল সার্জন জানান, এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের লক্ষণগুলো ভিন্ন ও মারাত্মক হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাশি বা জ্বর নাও থাকতে পারে। জয়েন্টে ব্যথা, মাথাব্যথা, গলা ব্যথা, পিঠে ব্যথা, নিউমোনিয়া এবং ক্ষুধা কমে যাওয়া এর প্রধান লক্ষণ। নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় ৫ গুণ বেশি বিষাক্ত এবং এর মৃত্যুর হারও বেশি হতে পারে।
তিনি আরো জানান, এটি সরাসরি ফুসফুসকে প্রভাবিত করে এবং নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখাতে শুরু করে। কিছু ক্ষেত্রে এক্স-রেতে হালকা নিউমোনিয়া দেখা গেলেও, নাকের গহ্বরের সোয়াব পরীক্ষায় এটি নেতিবাচক ফল দিচ্ছে। এতে ভাইরাসটি সহজে ছড়িয়ে পড়ছে।
ডা. মাসুদ রানা সকলকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নতুন এ ভেরিয়েন্ট কোভিড ১৯ মহামারীর চেয়েও মারাত্মক হতে পারে। তাই যতটা সম্ভব জনাকীর্ণ স্থান এড়িয়ে চলতে, খোলা জায়গায় ১.৫ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে, উপযুক্ত মাস্ক পরতে এবং ঘন ঘন হাত ধুতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।