মাদারীপুরে সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধ মাকে বাড়ি ছাড়া করলেন সন্তানেরা
- আপডেট সময় : ০৭:১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪ ৫০ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোটার :-
সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধ মাকে বাড়ি ছাড়া করল সন্তানরা
সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধা মাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সন্তানদের বিরুদ্ধে। আশ্রয়হারা হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন ৮২ বছরের হতভাগ্য এই মা।
হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন ১০ সন্তানের মা ফরিদা বেগম। ঘরবাড়ি আর কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি হারিয়ে এখন দিশেহারা তিনি।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পৌর পেয়ারপুর গ্রামের এ ঘটনায় তোলপাড় পুরো এলাকাজুড়ে।
জানা যায়, স্বামী কলম গড়িয়া মারা গেছেন ৩৫ বছর আগে। এরপর মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ৪ ছেলেকেই করেছেন প্রতিষ্ঠিত। এরমধ্যে বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া কাঁচামাল ব্যবসায়ী, মেজো ছেলে কামাল টিটিসিতে চাকরি করেন, এরপর সেজো ছেলে হেমায়েত পল্লী চিকিৎসক, আর ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া এলজিইডিতে টেকনিশিয়ান হিসেবে কর্মরত। এছাড়া ৬ মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন সম্ভ্রান্ত পরিবারে। অথচ, ফরিদার কপালে নেই সুখের দেখা। এই ১০ সন্তানের বিরুদ্ধেই ফরিদার অভিযোগ। তবে এই অভিযোগের তীর সবচেয়ে বেশি বড় ছেলে দেলোয়ার, আর ছোট ছেলে কাজলের দিকে।
ফরিদা বেগম জানান, স্বামীর দান করা ও রেখে যাওয়া ৬৭ শতাংশ ফসলি জমি বিক্রি করে সন্তানদের মানুষ করেছেন। আর বাড়ির ৪৫ শতাংশ জমি বিভিন্ন সময়ে কারণে-অকারণে লিখে নিয়ে গেছে সন্তানরা। দলিলে লাখ লাখ টাকা জমির মূল্য দেখালেও ফরিদাকে দেয়া হয়নি একটি টাকাও। সম্প্রতি সবকিছু লিখে নেয়ার পর মারধর করে ঘরে থেকে বের করে দিয়েছে ছোট ছেলের কাজল গড়িয়া। এমন অবস্থায় বড় ছেলে দেলোয়ার তার মাকে বিষ খেয়ে মরে যেতে বলছে।
তিনি আরও জানান, ছোট ছেলে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়ার পর আশ্রয় নিয়েছিলেন বড় মেয়ে সুফিয়া বেগমের বাড়িতে। সম্পত্তির ভাগ কম হওয়ায় বড় মেয়েও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন মাকে দেখভাল করবেন না এবং দিবেন না খাবারও। আর অন্য ছেলেদের মুখেও একই কথা।
আরও পড়ুন: সম্পত্তি লিখে নিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মাকে ঘরছাড়া করলেন ছেলেরা।এরপর থেকেই রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন হতভাগ্য এই মা।
তবে মাকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়া আর জোর করে সব সম্পত্তি লিখে নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্তরা। ফরিদার ১০ সন্তানের এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীও। দোষীদের বিচারের পাশাপাশি ফরিদার সম্পত্তি ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তাদের। সরকারিভাবে আইনগত সহায়তার পাশাপাশি ফরিদা বেগমের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
ফরিদা বেগম বলেন, ‘একটু সুখের আশা করেছিলাম সন্তানদের কাছে। এখন সেই সুখ কপালে নেই। স্বামীর রেখে যাওয়া ও আমার সব সম্পত্তি ছেলেরা কৌশলে লিখে নিয়ে গেছে। আমার এখন কিছুই নেই। বড় ছেলে ও ছোট ছেলে এই ঘটনার জন্য বেশি দায়ী। আমি আমার সব সম্পত্তি ফেরত চাই। আমি বৃদ্ধ বয়সে একটু শান্তি চাই।’
ফরিদা বেগমের বড় মেয়ে সুফিয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের বোনদের অল্প সম্পত্তি দিয়েছে মা। এজন্য মাকে আমরা কেউই বাড়িতে রাখবো না। ছেলেদের সম্পত্তি বেশি দিয়েছে, তাদের কাছে মা থাকুক।’
ফরিদা বেগমের ছোট ছেলে কাজল গড়িয়া বলেন, ‘আমার মায়ের মাথায় একটু সমস্যা আছে। তাই মাঝে মাঝে উল্টাপাল্টা বলে। আমি মাকে মারধর করেনি আর জোর করে সম্পত্তি লিখেও নেইনি। মা আমার নামে মিথ্যে কথা বলছে। আমার মা, ভাইদের একই সম্পত্তি বার বার লিখে দেয়ায় সমস্যা হয়েছে, ভাইদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে।
ফরিদা বেগমের সেজো ছেলে হেমায়েত গড়িয়া বলেন, ছোট ভাই কাজল গড়িয়া বেশি সম্পত্তি লিখে নেয়ায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ভাইবোন সবাইকে সম্পত্তি সমান ভাগ করে দিলে মায়ের এই অবস্থা হতো না। আমার মাকে আমি বলেছি, আমার ঘরে থাকতে ও খাবার খেতে। মা আমাকে সম্পত্তি কম দেয়ায় সে নিজেই আমার ঘরে থাকবে না।
ফরিদা বেগমের বড় ছেলে দেলোয়ার গড়িয়া বলেন, ‘আমি জোর করে সম্পত্তি লিখে নেইনি। মা তার ১০ ছেলেমেয়েকে সম্পত্তি স্বেচ্ছায় লিখে দিয়েছেন। মাকে আমি খাবার দেই না, এ কথা ঠিক না। মা আমার নামে যে অভিযোগ দিয়েছে, তা সঠিক নয়।’
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আল মামুন জানান, ফরিদা বেগমের স্বামী মারা গেছে ৩৫ বছর আগে। তিলে তিলে ৪ ছেলে ও ৬ মেয়েকে লালনপালন করে বড় করেছেন তিনি। অথচ, বৃদ্ধ বয়সে এই ফরিদার ঠাঁই হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। এটা কিছুতেই মেনে নেয়া যাচ্ছে না। বৃদ্ধা ফরিদাকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে প্রশাসন। আইনগত সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক সহযোগিতাও করা হবে। এছাড়া জোর করে সম্পত্তি লিখে নিলে সেটা ফেরত আনার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে